আমিরাত ওয়েস আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড
আয়ের বিপরীতে সেবার গতি মন্থর
ফাইল ছবি
কামরুল হাসান জনি, ইউএই প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২১:০৪
বিভিন্ন সেবার বিপরীতে প্রবাসীদের কাছ থেকে আদায় করা ফি বিদেশে বাংলাদেশি মিশনগুলোর আয়ের অন্যতম উৎস। পাসপোর্ট নবায়ন, ভিসা, সনদ সত্যায়ন ও ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য ফি এর মধ্যে অন্যতম। গত পাঁচ বছরে কেবল ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য ফি বাবদ ২১ কোটি টাকার বেশি আয় করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকা দুটো বাংলাদেশ মিশন। তবে আয়ের তুলনায় সেবার মান কম।
পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ বছরে দেশটিতে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হয়েছেন ৪৪ হাজারের বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি। আর এই খাতে মিশনের আয় হয়েছে ৭০ লাখ ৪৮ হাজার দিরহাম।
মিশন কর্মকর্তারা বলছেন, দেশটিতে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাই আয়ও বাড়ছে। আয়কৃত এই অর্থ সরাসরি কল্যাণ বোর্ডে যোগ হয়। তবে প্রবাসীদের সহায়তা দিতে চিঠি লিখতে হয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। কখনও কখনও সহায়তার অনুমতি পেতে একমাসেরও বেশি সময় লেগে যায়।
মিশনের তথ্যমতে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হয়েছেন ৪৪ হাজার ৫০ প্রবাসী। এরই মধ্যে দুবাই ও উত্তর আমিরাতে ২৬ হাজার ১৫০ জন এবং আবুধাবিতে সদস্য হয়েছেন ১৭ হাজার ৯০০ জন। এই খাতে দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেট আয় করেছে ৪১ লাখ ৮৪ হাজার দিরহাম ও আবুধাবি বাংলাদেশ দূতাবাসের আয় হয়েছে ২৮ লাখ ৬৪ হাজার দিরহাম। চলতি বছরও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ প্রবাসী সদস্য হতে পারেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
প্রবাসীরা বলছেন, এই আয়ের বিপরীতে সেবার গতি অত্যন্ত মন্থর। মিশনগুলো প্রতিবছর তাদের থেকে যে পরিমাণ অর্থ আয় করছে, তার বিপরীতে সেবার মান ও পরিধি আরও বাড়ানো উচিত। বিশেষ করে মৃত প্রবাসীদের মরদেহ দেশে আনার ক্ষেত্রে সরকারিভাবে খরচের দাবি করেন তারা।
সিলেট বিভাগ উন্নয়ন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী শফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, প্রবাসীদের মরদেহ দেশে নেওয়ার পর পরিবারকে সরকারিভাবে ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু মরদেহ দেশে পাঠাতেই যত বিপত্তি। যাদের বৈধ কাগজপত্র থাকে না তাদের লাশ দেশে পাঠাতে সমস্যা তৈরি হয়। একটি মরদেহ দেশে পাঠাতে ছয় থেকে সাড়ে সাত হাজার দিরহাম খরচ হয়। এই টাকা জোগাড় করতে চাঁদা তুলতে হয়।
আবুধাবি বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর (শ্রম) লুৎফুন নাহার নাজিম সমকালকে বলেন, প্রবাসীদের অবস্থা বিবেচনা করে অসুস্থ, বিপদগ্রস্ত, পঙ্গু-অসহায় ও আটকে পড়া কর্মী, লাশ পরিবহন ও নারী গৃহকর্মীদের দেশে পাঠাতে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড সহযোগিতা করে থাকে। সরকারি এই সেবা নিশ্চিত করতে হলে প্রবাসীদের কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হতে হবে।
আবুধাবি বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার লেবার মো. আব্দুল আওয়াল সমকালকে বলেন, বৃহৎ পরিসরে প্রবাসী কর্মীর মেধাবী সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি, অসুস্থ কর্মীর চিকিৎসার্থে ও বৈধভাবে বিদেশে গমনকারী মৃত কর্মীর পরিবারকে আর্থিক অনুদান দিচ্ছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড।
দেশটির রাজধানী আবুধাবিতে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সহযোগিতা প্রাপ্ত সর্বশেষ চারজন প্রবাসীদের মধ্যে অসুস্থ ও বিপদগ্রস্ত কর্মী কোটায় কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার ফয়েজ আহমেদকে পাসপোর্ট হারানোর পুলিশ প্রতিবেদন, টাইপিং ফি ও নগদ সহায়তা হিসেবে ১৮ হাজার ৮৫০ টাকা প্রদান করা হয়, পঙ্গু ও আটকে পড়া কর্মী কোটায় সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানার বনিজ মিয়া পেয়েছেন বিমান টিকেট, আউট পাস, টাইপিং ফি, পাসপোর্ট নবায়ন ফি ও নগদ সহায়তা বাবদ ৪৮ হাজার ৭২০ টাকা, মরদেহ পরিবহন কোটায় ঢাকার নবাবগঞ্জের লাভলুর ওজন চার্জ ও এয়ারপোর্ট হ্যান্ডেলিং চার্জ বাবদ দেওয়া হয় ৭৮ হাজার ৯৭ টাকা এবং নারী গৃহকর্মী কোটায় বিমান টিকিট ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ ঢাকার কামরাঙ্গীর চরের লিজা আক্তার পেয়েছেন ৫৪ হাজার ৫২০ টাকার সহায়তা।
তবে দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেটে সর্বশেষ চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার হর্নি দুর্গাপুরের মৃত ইসমাইল খানের মরদেহ দেশে পাঠাতে সহযোগিতা চেয়ে স্বজনরা আবেদন করলেও সরকারি অনুদান সময়সাপেক্ষ জানিয়ে শর্ত দেয় মিশন। বিষয়টি অনুধাবন করে গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় চাঁদপুর প্রবাসীরা চাঁদা তুলে ইসমাইল খানের মরদেহ দেশে পাঠানো হয়।