সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে রোববার রাতে শেষ হলো ক্রিকেটের অন্যতম বড় আসর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল। উত্তেজনাপূর্ণ খেলায় অস্ট্রেলিয়া কাপ জিতলেও এশিয়ার কোনো দেশ ফাইনালে না থাকার প্রভাব পড়েছে গ্যালারিতে। শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলা ছাড়া পুরো আসরের অধিকাংশ খেলায় গ্যালারি ছিল প্রায় দর্শক শূন্য। ক্রিকেটের এই আসর কি তবে দুবাইয়ের দর্শক টানতে পারিনি- এমন প্রশ্ন জাগলেও সংযুক্ত আরব আমিরাত তথা দুবাই ব্যস্ত উৎসবের আমেজে। কারণ, করোনার মহামারি কাটিয়ে উঠতে উঠতে দুবাই বড় পরিসরে দুটো বৃহত্তর আয়োজন নিয়ে মেতে উঠেছে। একটি ‘এক্সপো ২০২০’, অন্যটি ‘গ্লোবাল ভিলেজ শপিং ফেস্টিভ্যাল’। 

দুটো আয়োজনই চলবে ছয় মাসব্যাপী। করোনার দীর্ঘ লকডাউনে চেপে দুবাই নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা ও দক্ষতার পুরোটাই যেন ঢেলে দিয়েছে এই দুটো আয়োজনে। এই দুই আয়োজন ঘিরে দুবাই এখন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে। উৎসবের আমেজ বাড়াতে নেওয়া হয়েছে সুনির্দ্দিষ্ট পরিকল্পনা।

দুবাইয়ের ক্রিকেট মাঠ দর্শক টানতে পারুক আর না পারুক, দর্শক টানছে জেবল আলীতে আয়োজিত বৃহত্তর বৈশ্বিক বাণিজ্যিক প্রদর্শনী ‘এক্সপো ২০২০’। এতে বাংলাদেশসহ ১৯২টি দেশ আলাদা আলাদা প্যাভিলিয়ন নিয়ে নিজ দেশকে উপস্থাপন করছে। বিশেষ করে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগের প্রতি দৃষ্টি সবার। গত ১ অক্টোবর শুরু হওয়া এই বাণিজ্যিক প্রদর্শনীতে দেড় মাসে ব্যবসায়ী ও পর্যটক মিলে প্রায় সাড়ে তিন মিলিয়ন মানুষের সমাগম হয়েছে। 

ছয় মাসের এই মেলায় ২৫ মিলিয়ন দর্শক টানার লক্ষ্যমাত্রা আগেই ঠিক করে রেখেছে দুবাই। এক্সপো ২০২০ এর দর্শনার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে বিনামূল্যে বাস ভ্রমণের সুবিধা। পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে করা হয়েছে এক্সপো পাসপোর্ট। প্রতি দুই মিনিট অন্তর উড়োজাহাজের ওঠা-নামা আর বিমানবন্দরগুলোর ব্যস্ততা জানান দিচ্ছে এই লক্ষ্যমাত্রা সহজে পূরণ করতে সক্ষম হবে তারা। 

অন্যদিকে, গত ২৬ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া চলমান গ্লোবাল ভিলেজ শপিং ফেস্টিভ্যালে দৈনিক গড়ে ৪২ হাজার দর্শণার্থীর সমাগম হয়। যেখানে ২৬টি প্যাভিলিয়নে ৮০টি দেশের সংস্কৃতি তুলে ধরা হচ্ছে। গ্লোবাল ভিলেজ শপিং ফেস্টিভ্যালে বাড়ানো হয়েছে বিনোদনের সুযোগ-সুবিধা। বৃদ্ধি করা হয়েছে মঞ্চ ও সাংস্কৃতিক আয়োজন। ব্যাপকভাবে রাখা হয়েছে খাবারের স্টল। সবমিলিয়ে দুবাই তথা আরব আমিরাতের বাসিন্দা, অভিবাসী, ব্যবসায়ী আর পর্যটকরা এখন এই দুটো আয়োজনের অন্যতম দর্শক।

দুবাইয়ের এই দুটো বড় আয়োজনের একটিতে এবার সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। এক্সপো ২০২০-তে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ সুনাম কুড়াচ্ছে। যদিও অন্যদেশের প্যাভিলিয়নের সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে দেশিয় দর্শকরা কিছুটা মনক্ষুণ্ণ হয়। তবুও নিজ দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগ বাড়াতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ মিশন। বিদেশি ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় চলছে ব্যবসায়িক সেমিনার।

দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেট সূত্রে জানা গেছে, এক্সপো ২০২০ এর প্যাভিলিয়ন থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে বিদেশি ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এই লক্ষ্যে সেখানে আলাদা আলাদা সেমিনারের আয়োজন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৪টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। চলমান এক্সপোতে ২০টির অধিক সেমিনারের পরিকল্পনা রেখেছে বাংলাদেশ মিশন। এসব সেমিনারে দেশ থেকে অংশ নিচ্ছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটি, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও ওমেন এনট্রাপ্রেনার নেটওয়ার্ক ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউইএনডি)।  

ছবি: সমকাল

সোমবার বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর কামরুল হাসান সমকালকে বলেন, ‘আমরা যতটুকু আশা করেছি তার চেয়েও বেশি সাড়া পাচ্ছি। আমিরাতের ফুড সেক্টরগুলো বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য ও খাদ্যসামগ্রীর প্রতি আগ্রহ বেশি দেখাচ্ছে। এক্সপো থেকে এর ভালো ফল পাবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর ব্যাপারে আমরা নিয়মিত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করছি। বিভিন্ন সেমিনারে তাদের অংশগ্রহণ আমাদের আশাবাদী করছে। তারা বিনিয়োগের পাশাপাশি বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আমাদের সেমিনারগুলো এ ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’

এদিকে, এক্সপো ২০২০ এর গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ আয়োজন করতে যাচ্ছে স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। আগামী ১৬ ডিসেম্বর এক্সপো ২০২০তে ‘বিজয় উৎসব’ নামে এই আয়োজন করবে বাংলাদেশ মিশন। আয়োজন সমৃদ্ধ করতে দুবাইয়ের রাজ পরিবারের সদস্য প্রিন্স শেখ আব্দুল্লাহ বিন মাকতুম বিন রশিদ আল মাকতুম ও শারজাহ রাজ পরিবারের সদস্য শেখ সাকের বিন রশিদ আল কাশিম উৎসবে উপস্থিত থাকবেন।

এ ব্যাপারে দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেন জানান, স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তী ও জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে তিন দিনব্যাপী বিজয় উৎসবের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর এক্সপো ২০২০ এর গ্রাউন্ডে, ১৭ ডিসেম্বর রাস আল খাইমাহ বাংলাদেশ স্কুলে এবং ১৮ ডিসেম্বর শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বিজয় উৎসবের আয়োজন করা হবে।