হার্ভার্ড  বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম।  সম্প্রতি  হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথে উচ্চশিক্ষার  সুযোগ পেয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের তিন শিক্ষার্থী। লিখেছেন নোমান বিন হারুন

বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসে অবস্থিত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। হার্ভার্ড যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের একটি গবেষণাধর্মী প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়। ১৬৩৬ সালে ম্যাসাচুসেটসের বোস্টনে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। হার্ভার্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অন্যতম। ম্যাসাচুসেটস উপনিবেশিক আইনসভা, জেনারেল কোর্ট, হার্ভার্ড প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের ৮ জন প্রেসিডেন্ট এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদের পড়ালেখার পর্ব  চুকিয়েছেন।
দুনিয়াজুড়ে অন্তত ৬২ জন বিলিয়নেয়ার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আরও আছেন ১৫৮ জন নোবেল বিজয়ী ।

মো. শরীফ হোসেন  

স্নাতকে ভর্তির পর থেকেই শরীফ স্বপ্ন দেখতেন বিশ্বের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। তৃতীয় বর্ষে ওঠার পর এ ইচ্ছা আরও প্রবল হতে থাকে। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি দেশি-বিদেশি গবেষণা প্রকল্পে কাজ শুরু করেন এবং বেশকিছু গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ হতে থাকে অভিজ্ঞতার ঝুলি। তিনি ইতোমধ্যে জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ল্যুয়েভল বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও উচ্চশিক্ষার ডাক পেয়েছেন।  
শরীফের মতে উচ্চশিক্ষায় সাফল্যের জন্য লক্ষ্যস্থির করাটাই প্রধান। উচ্চশিক্ষার প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে গবেষণা কর্মে দক্ষতাও বৃদ্ধি জরুরি। এ জন্য স্নাতক শেষ হওয়ার আগেই জিআরই বা টোফেল সেরে নেওয়া ভালো। বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতার ভিড়ে নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রোফাইল তৈরি করতে হয়। কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের সব শর্ত পূরণ করে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। প্রস্তুতির পরবর্তী ধাপে সংশ্লিষ্ট ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের সঙ্গে যোগাযোগ ও বিভিন্ন পরামর্শ বেশ কাজে দেয়। এ ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি উচ্চশিক্ষা সহায়ক গ্রুপ ও ওয়েবসাইট থেকে সহজেই তথ্য জানা যাবে। হার্ভার্ডের একাডেমিক ফল ২০২৩ সেশনে আবেদন করলে তিনি এপিডেমিওলজিতে (রোগবিস্তার বিজ্ঞান) মাস্টার্স করার সুযোগ পান।  একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেছেন শরিফ। জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত স্বাস্থ্যবিষয়ক লেখালেখি করার অভ্যাসও আছে তাঁর। সাফল্য অর্জনের পথে সহশিক্ষা কার্যক্রমের ওপরও জোর দেন তিনি।  


রুম্পা সরকার

রুম্পা সরকার জানালেন, উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূলত দু’ভাবে আবেদন গ্রহণ করে থাকে। প্রথমত, কেন্দ্রীয়ভাবে একটা নির্দিষ্ট সময়ে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের সুযোগ। দ্বিতীয়ত, সরাসরি নিজ পছন্দের বিষয়ে কোনো শিক্ষকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে। তবে দ্বিতীয় পদ্ধতিটাই বেশি কার্যকরী বলে মনে করেন তিনি। টোফেল পরীক্ষা থেকে শুরু করে আবেদন করা, পছন্দের প্রফেসর খোঁজা– সব ধাপ তিনি সম্পন্ন করেছেন এক মাসেরও কম সময়ে। এত অল্প সময়ের মধ্যে আবেদন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে শুধু আগে থেকেই গবেষণাকর্ম ও ভাষাগত দক্ষতা থাকার কারণেই।   
তিনি মনে করেন, উচ্চশিক্ষায় আবেদনের ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থীর নিজের দক্ষতার পাশাপাশি দুর্বলতাও খুঁজে বের করা জরুরি। কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মিল রেখে নিজ গবেষণা কর্মকেও সাজিয়ে নিতে হয়। এটা যে কোনো শিক্ষার্থীকে এগিয়ে থাকতে সাহায্য করে।  সবদিকে সামঞ্জস্য রেখে নিজের প্রোফাইলকে একটি কমপ্লিট প্যাকেজ হিসেবে তৈরি করতে হয়।   
স্নাতকের সময় থেকেই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত আছেন রুম্পা। কাজ করেছেন আইসিডিডিআরবি থেকে শুরু করে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য নিয়ে তাঁর পাঁচটি গবেষণাকর্ম ল্যানসেটসহ আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। হার্ভার্ডে চান্স পাওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স, ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলিনা ও ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গ থেকে অফার লেটার পেয়েছেন তিনি। এর মধ্যে ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলিনা ও ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গ থেকে পিএইচডিতে ফুল ফান্ড স্কলারশিপ পেয়েছি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জার্নালে আমার ৫টি গবেষণাপত্র প্রকাশ পেয়েছে। এ ছাড়া আইসিডিডিআরবিতে আমি রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে এক বছর কাজ করেছি।   

রেজাউল করিম রিপন  

উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চান্স পাওয়ার জন্য কী কী করণীয়– এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে রিপন বলেন, এ বিষয়টি একটি প্যাকেজের মতো কাজ করে। এ ক্ষেত্রে কারও একাডেমিক রেজাল্ট মোটামুটি হলে তাঁকে গবেষণাপত্রে ভালো হতে হয়। আবার টোফেল, জিআরইও অনেক সময় সাহায্য করে চান্স পেতে। অনেকে আন্তর্জাতিক, দেশীয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সংস্থায় স্বেচ্ছাসেবক বা রিসার্চ অ্যাসিসট্যান্ট হিসেবে কাজ করেন। এ বিষয়গুলোও গুরুত্বপূর্ণ।   
তিনজনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ রেজাউল করিম রিপন। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের পাঠই শেষ হয়নি তাঁর। স্নাতক চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষার আগেই হার্ভার্ডে স্নাতকোত্তরের জন্য ডাক পাওয়া নিজের পরিশ্রম আর সাধনার ফল বলে মনে করেন তিনি। রিপন গবেষণাকর্ম শুরু করেন করোনা মহামারির ঘরবন্দি সময়ে। সে সময় ঘরে বসেই গবেষণার খুঁটিনাটি জানতে চেষ্টা করতেন। পরবর্তী সময়ে বিভাগের শিক্ষক ও অগ্রজদের সঙ্গে কাজ করে সে অভিজ্ঞতা আরও শানিত হয়েছে।  
উচ্চশিক্ষার জন্য স্নাতকের আগেই আবেদন করা যায় তাঁর জানা ছিল না। এ কাজে তাঁকে সাহস জুগিয়েছেন এক সহপাঠী। বন্ধুর মাধ্যমেই প্রথম জানতে পারেন ইংরেজি দক্ষতার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেও শুধু গবেষণাকর্মের জোরে আবেদন করা যায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এসওপি (স্টেটমেন্ট আব পারপাস) তৈরি করলেন খুবই অল্প সময়ে। রিপন তাঁর পছন্দের বিষয় এনভায়রনমেন্টাল হেলথে মাস্টার্স করার সুযোগ পেয়েছেন।  
রিপন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শিক্ষাবিষয়ক একটি সংস্থায় এডুকেটর হিসেবে কাজ করছেন। এ ছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জার্নালে তাঁর ২০টির অধিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।