বগুড়া থিয়েটারের উদ্যোগে শহরের পৌরপার্ক চত্বরে চলছে সাত দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। মেলার চতুর্থ দিন মঙ্গলবারে আয়োজন করা হয় মোরগ লড়াইয়ের, যা দেখতে উপস্থিত ছিলেন কয়েকশ দর্শনার্থী। বিলুপ্তপ্রায় এ সংস্কৃতির আয়োজন দেখে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। 

নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রামীণ খেলাধুলাকে নতুন করে তুলে ধরতে লাঠিখেলা, মোরগ লড়াই, পাতা আনা, সাপ-বেজির খেলা, হাডুডুর আয়োজন করা হয়। ৪৩ বছর ধরে বগুড়া থিয়েটারের আয়োজনে এ মেলায় ঐতিহ্যবাহী এসব খেলাধুলাকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।

মেলায় মায়ের হাত ধরে আসা শিশু রিফাত হাসান মোরগ লড়াই দেখেছে বেশ মনোযোগ সহকারে। রিফাতের মা রায়হানা ইয়াসমিন বলেন, বৈশাখী মেলায় পুরোনো দিনের নানা খেলাধুলার আয়োজন থাকে। তা নিজেও দেখি, সন্তানদেরও দেখাই। তারা খুব মজা পায়।

মেলায় আসা তোজাম্মেল হোসেন নামে এক প্রবীণ জানান, মোরগ লড়াই, লাঠিখেলা, গোল্লাছুট, দাঁড়িয়াবান্ধা, ডাংগুলি, কানামাছি, বৌছি, পাতা আনা, দড়ির লাফ, ওপেন্টি বায়োস্কোপ, হাডুডু খেলাগুলো গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। এসবের মধ্যে কিছু খেলা দেখতে মানুষের ঢল নামত। খেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামজুড়ে চলত আনন্দ-উৎসব। কিন্তু আগের সেই অবস্থা নেই। এসব খেলা এখন সেকেলে হয়ে গেছে। বগুড়া থিয়েটারের এমন আয়োজনের মাধ্যমে হয়তো একদিন গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো আবার স্বমহিমায় ফিরে আসবে।

বগুড়া থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক হাসান ময়না জানান, বৈশাখী মেলায় নতুন প্রজন্মের সামনে বিলুপ্তপ্রায় খেলাগুলো প্রদর্শিত হচ্ছে। নিজেদের হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি উদ্ধার ও লালনে যেন মনোযোগী হয়ে ওঠে নতুন প্রজন্ম। বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহনকারী এসব খেলা হারিয়ে ফেলতে বসেছি আমরা। মূলত এ ভাবনা থেকেই গ্রামীণ ক্রীড়া উৎসবের আয়োজন। এটি প্রতি বছরই হয়ে থাকে।

প্রবীণেরা বলছেন, বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে এখনই সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া বেসরকারি উদ্যোগেরও প্রয়োজন আছে। তাতে নতুন প্রজন্ম এসব খেলাধুলা সম্পর্কে জানতে পারবে। পাশাপাশি বাঙালি জাতি ফিরে পাবে তার নিজস্ব সংস্কৃতি।