- প্রবাস
- ডিজিটাল হুন্ডিতে পাচার ঠেকান
ডিজিটাল হুন্ডিতে পাচার ঠেকান

বর্তমান সময়ে বিশ্বে এমন কোনো দেশ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, যেখানে প্রবাসী বাঙালি নেই। সুন্দর ও সাবলীল ভবিষ্যৎ গড়ার প্রত্যয়ে তাঁরা পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের মায়া ত্যাগ করে; প্রিয় স্বদেশ ছেড়ে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। মাস শেষে দেশে টাকা পাঠিয়ে পরিবারের মুখে হাসি ফোটাচ্ছেন। অন্যদিকে রেমিট্যান্সের মাধ্যমে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়ছে। রিজার্ভের মাধ্যমে তা ব্যয় হচ্ছে দেশের বিভিন্ন খাতে। এক কথায় বলা যায়, প্রবাসী যোদ্ধাদের কষ্টার্জিত অর্থে একদিকে পরিবার সচল হচ্ছে; অন্যদিকে রেমিট্যান্সের মাধ্যমে অর্থনীতির চাকা সচল হচ্ছে।
গত ১৩ মে সমকালে ‘ডিজিটাল হুন্ডিতে পাচার অর্ধশত কোটি টাকা’ শিরোনামে সংবাদটি পড়েছি। প্রবাসীরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্থ উপার্জন করছেন। অথচ একটি চক্র ডিজিটাল হুন্ডির মাধ্যমে সেই অর্থ পাচার করে দিচ্ছে। এটি বড়ই বেদনার সংবাদ। চক্রটির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে এই পাচার ঠেকাতে হবে। তা না হলে রেমিট্যান্সের সুফল রাষ্ট্র পাবে না। রাষ্ট্রকে বঞ্চিত করে যারা নিজেদের পকেট ভরছে, তাদের আইনের আওতায় আনার বিকল্প নেই।
দুঃখের বিষয়, যাঁদের শ্রমের টাকায় দেশ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে, উন্নত হচ্ছে; তাঁদেরকেই হেনস্তার শিকার হতে হয়। যেখানে বিদেশ ভ্রমণে মাত্র ৮০ হাজার টাকা ব্যয় হওয়ার কথা, সেখানে গুনতে হয় সাড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা। এত টাকা ব্যয়ের পরও থাকা-খাওয়া ও কাজ না পাওয়ার দুর্ভোগ পোহাতে হয় অনেককে। দেশের বিমানবন্দরে এসে ঠিকমতো মালপত্র বুঝে না পাওয়ার ঘটনাও মাঝেমধ্যে সংবাদমাধ্যমে খবরের শিরোনাম হয়।
আমরা যদি রেমিট্যান্সের দিকে তাকাই, দেখতে পাব চলতি বছর জানুয়ারি মাসে ১৯৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে বৈধ পথে। এ হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংকের। ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৬ কোটি ১২ লাখ ডলার। মার্চ মাসে ঈদ ঘিরে ভেঙেছে আগের রেকর্ড– ২০১ কোটি ৭৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার না হলে এর পরিমাণ আরও বেশি হতো। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কে বা কারা এজেন্সি ও দালালের সঙ্গে যোগসাজশে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার করছে, তা খুঁজে বের করা অসম্ভব নয়।
আমাদের দক্ষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সক্রিয়। তদন্তে ডিজিটালের ছোঁয়া লেগেছে। এ অবস্থায় ডিজিটাল ফাঁকফোকরে অর্থ পাচার হয়ে গেলে তা উদ্ধারে পাল্টা প্রযুক্তির সহায়তা নিতে হবে। পাশাপাশি প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধ করা দরকার। বিমানবন্দরে তাঁদের যথাযথ সম্মান নিশ্চিত করা উচিত। যাঁরা হাজার হাজার মাইল দূরে থেকে দেশের জন্য অর্থ পাঠাচ্ছেন, তাঁদের স্বার্থ সবার আগে বিবেচনা করা সময়ের দাবি। কৃষক, প্রবাসী ও পোশাক কর্মীদের কল্যাণেই আমাদের অর্থনীতি দিন দিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে। সুতরাং তাঁদের যেন অমর্যাদা না হয়।
খিলপাড়া, কিশোরগঞ্জ
মন্তব্য করুন