- প্রবাস
- কানাডায় পড়াশোনা: যা জানা জরুরি
কানাডায় পড়াশোনা: যা জানা জরুরি

শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার জন্য এখন কানাডা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতি বছর অসংখ্য শিক্ষার্থী এ দেশে পড়তে যাচ্ছেন। সহজ অভিবাসন নীতি ও প্রাকৃতির সৌন্দর্যের কারণে অনেকেই এখন পড়াশোনার জন্য কানাডাকে বেছে নিচ্ছেন। কানাডায় সব পর্যায়ের পড়াশোনার মান বেশ উন্নত।
তবে খরচ ও পারিপার্শ্বিক বিবেচনায় আমার মতে, দেশ থেকে অনার্স শেষ করে বাইরে উচ্চশিক্ষার আবেদন করলে ভালো হয়। কারণ গ্র্যাজুয়েট (মাস্টার্স বা পিএইচডি) লেভেলে বৃত্তি পেতে অনেক সহজ হয়। আমি আজ শুধু মাস্টার্স বা পিএইচডির আবেদন নিয়ে লিখব।
কখন আবেদন করতে হয়:
নভেম্বর মাসে কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তির আবেদন শুরু হয়। আমাদের দেশে যেখানে এক বছর আবেদন করে পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে পরের বছর জানুয়ারিতে ক্লাস শুরু হয়, তেমনি কানাডাতে আগের বছর নভেম্বরে আবেদন করলে ক্লাস শুরু হবে পরের বছরের সেপ্টেম্বরে। আবেদন করা যায় নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগভেদে সময়সীমা দু-তিন সপ্তাহ কমবেশি হতে পারে। দ্রুত আবেদন করা ভালো। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক স্কলারশিপ বা বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
আবেদন করতে কী কী প্রয়োজন হবে :
গ্র্যাজুয়েটে (মাস্টার্স বা পিএইচডি) আবেদন করতে অনার্স বা মাস্টার্সের ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট, ইংরেজি ভাষার দক্ষতার নম্বর, শিক্ষকদের কাছ থেকে সুপারিশের চিঠি ও উচ্চশিক্ষার বিস্তারিত পরিকল্পনা। আবেদন অনলাইনে করতে হয়; তাই এসব কাগজের স্ক্যান কপি সবসময় সঙ্গে রাখতে হবে।
ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট
অনার্স বা মাস্টার্সের ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উঠিয়ে নিতে হবে। রেজাল্ট দেওয়ার যত দূত সম্ভব এগুলো সংগ্রহ করে রাখবেন।
ইংরেজি ভাষার দক্ষতা
ইংরেজি ভাষার দক্ষতার জন্য IELTS বা TOEFL-এর নম্বর লাগবে। বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে IELTS ৬ থেকে ৭-এর মধ্যে থাকতে হয়। তবে কোথাও কোথাও Medium of Instruction English এই মর্মে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট জমা দিলেও হতে পারে। অল্প কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ কিছু বিষয়ে পড়ার জন্য GRE/GMAT দরকার হতে পারে। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে চাইবেন, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া থাকবে। সেখান থেকে জেনে নিতে পারবেন তাদের রিকোয়ারমেন্টগুলো।
লেটার অব রিকমান্ডেশন
এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সুপারিশপত্র। একে letter of recommendation (LOR) বলে। সাধারণত কোনো শিক্ষার্থী আবেদন করলে, সে কেমন তা জানার জন্য একটি গোপনীয় পত্র সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আপনার নির্বাচিত দু-তিনজন শিক্ষকের কাছে চাওয়া হয়। আপনার শিক্ষক আপনাকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন, তা লিখে জানাবেন। এই কার্যক্রমে আবেদনকারী কোনোভাবেই কিছু জানবে না। তবে শিক্ষার্থীদের উচিত হবে, যে যে শিক্ষকের নাম দেবে তাঁদের সঙ্গে আগে থেকে অনুমতি নেওয়া। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকের বিশ্ববিদ্যালয় ডোমেইনের ই-মেইল ব্যবহার করা উচিত।
সাজিয়ে নিন আপনার পরিকল্পনা
একে অনেক সময় statement of purpose (SOP) বলে, যেখানে আপনি নিজে লিখবেন, কেন আপনি এই বিষয়ে পড়তে চান, নিজ দেশে কেন আপনি এই ডিগ্রি না নিয়ে বিদেশে যেতে চান, ডিগ্রি অর্জনের পর আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী ইত্যাদি। চেষ্টা করবেন মার্জিত ও যতটা পারা যায় সত্য লিখতে।
আবেদন করতে রেজাল্ট কেমন দরকার
আবেদন করতে রেজাল্ট অনেক ভালো হতে হবে– এমন নয়। রেজাল্টের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগভেদে আলাদা হয়। তবে সিজিপিএ ৩.২৫-এর বেশি থাকলে ভালো হয়। রেজাল্ট যত ভালো থাকবে, ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সম্ভাবনাও বেশি থাকবে।
আবেদন করতে কি টাকার প্রয়োজন হবে?
আবেদন করতে বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ১৫০-২৫০ ডলার লাগতে পারে। তবে নিম্ন/মধ্যম আয়ের দেশ কোটায় বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই টাকাটা মওকুফ করা আছে (যেমন আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়)।
শুধু বিজ্ঞান বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা হয়?
না। এখানে অনেক বিষয়ে পড়াশোনা করা যায়। আপনি বাংলাদেশে যেসব বিষয়ে পড়ার চিন্তাও করবেন না, এখানে তাও ফান্ডসহ পড়া যায়। আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ শতাধিক বিষয়ে মাস্টার্স করা যায়। এই রকম সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার পছন্দের বিষয়ে পড়তে পারবেন। সব থেকে মজার বিষয়, আপনি এক বিষয়ে অনার্স করে কাছাকাছি অন্য বিষয়ে মাস্টার্স করতে পারবেন। অনেক ছেলেমেয়ে আর্টস থেকে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে এখানে। সংগীত, স্পোর্টস, ন্যানোটেকনোলজি, রাজনীতি, পাবলিক হেলথ, সফটওয়্যার– এসব যে কোনো বিষয় শিক্ষার্থী বেছে নিতে পারবেন।
পড়াশোনা কি নিজের টাকায় করতে হয়?
কানাডায় গ্র্যাজুয়েট (মাস্টার্স বা পিএইচডি) সব ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৃত্তি দেওয়া হয়। আপনার পড়াশোনা, থাকা-খাওয়ার যাবতীয় খরচ বিশ্ববিদ্যালয় দেবে। কিছু কিছু মাস্টার্স প্রোগ্রাম থিসিস ছাড়া হয়, সেখানে নিজ খরচে পড়তে হয়। তবে এখানে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে বা বাইরে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। তাঁদের বেতন হয়ে থাকে ঘণ্টা হিসেবে। তবে যাঁরা থিসিস করবেন, তাঁদের যাবতীয় খরচ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা সহকারী/শিক্ষকের সহকারী হিসেবে দেওয়া হবে। পিএইচডি স্টুডেন্টদের নিশ্চিত বৃত্তি দেওয়া হবে গবেষণা সহকারী হিসেবে। পরে অন্য অনেক স্কলারশিপ দেওয়া হয়; যেগুলো ভর্তি হওয়ার পর পাওয়া যাবে। আমি আলবার্টা সরকারের একটা স্কলারশিপ পেয়েছি ভর্তি হওয়ার পর। শুধু নিজের টাকা দিয়ে বিদেশে পড়তে যাওয়া ছাড়াও বৃত্তি নিয়েও আপনি আপনার প্রত্যাশিত ডিগ্রি অর্জন করতে পারেন।
শুধু কি মেধাবীরাই বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেবে?
আমরা অনেকেই মনে করি, শুধু শিক্ষকরা অথবা মেধাবী শিক্ষার্থীরা বাইরে পড়তে যাবেন, অন্যরা নন। এখানে আসার পর আমার ধারণা বদলে গেছে। এখানে শুধু বাংলাদেশ থেকে আমরা কয়েকজন শিক্ষকই উচ্চশিক্ষা নিতে এসেছি, অন্য কোনো দেশ থেকে কোনো অধ্যাপক পড়তে আসেন না। দেখা গেছে, সব দেশ থেকে অনার্স বা মাস্টার্সের পরপরই চলে আসেন। এখানে মাস্টার্স বা পিএইচডির পর সবাই চাকরি শুরু করতে পারেন। বেতন অনেক বেশি, অন্তত শিক্ষার্থী হিসেবে যা পাওয়া যায়, চাকরি করলে ন্যূনতম বেতন তার কয়েক গুণ। আপনি আরও অনেকের চাকরির ব্যবস্থা করতে পারবেন। চাইলে পড়া শেষ করে দেশে ফিরেও সম্মানজনক চাকরির সুযোগ নিতে পারেন।
[পিএইচডি শিক্ষার্থী, আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডা]
মন্তব্য করুন