বিখ্যাত বিজনেস জার্নাল ফোর্বসের সফল উদ্যোক্তার তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের সাত তরুণ-তরুণীর পাঁচ উদ্যোগ। ২০১১ সাল থেকে প্রতিবছরই উদীয়মান তরুণ উদ্যোক্তা, সংগঠক ও উদ্ভাবকদের তালিকা প্রকাশ করে বিশ্বখ্যাত মার্কিন সাময়িকী। এবার বংলাদেশ থেকে কনজ্যুমার টেকনোলজি, গণমাধ্যম, বিপণন, বিজ্ঞাপন, সামাজিক প্রভাব– এই পাঁচ বিভাগে ফোর্বসের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন সাত তরুণ-তরুণী। গত ১৮ মে ফোর্বস থার্টি আন্ডার থার্টি এশিয়া ২০২৩ শিরোনামে এ তালিকায় জায়গা করে নেন তাঁরা।

তালিকায় আরও ২৫ তরুণ ফোর্বস ২০১১ সালে প্রথমবারের মতো ‘৩০ অনূর্ধ্ব ৩০’ তালিকা প্রকাশ করে। সাধারণত ব্যবসাক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখা ৩০ বছরের কম বয়সী ৩০ জনকে নিয়ে তালিকাটি তৈরি করা হয়। ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগের জন্য ২৫ বাংলাদেশি ফোর্বসের তালিকায় স্থান পান।

মিডিয়া, মার্কেটিং ও বিজ্ঞাপন : ফারহান ও তাসবিনের মার্কোপোলো ডটএআই মার্কোপোলো ডটএআইর প্রতিষ্ঠাতা রুবাইয়াত ফারহান ও তাসফিয়া তাসবিন। প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত সময়ের মধ্যে বিজ্ঞাপন কনটেন্ট তৈরি করা এবং বেশ কয়েকটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে নির্বিঘ্নে ক্রস পোস্ট করতে সাহায্য করে। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং পরিচালনার পাশাপাশি এর সর্বোচ্চ ও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে কনটেন্ট তৈরি এবং নির্দিষ্ট ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করার জন্য বিশাল ডাটাবেজ তৈরি করেছে মার্কোপোলো ডটএআই। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় সাত লাখ ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে। নিজেদের এমন অর্জন সম্পর্কে রুবাইয়াত ফারহান বলেন, ‘ফোর্বস ম্যাগাজিনের এ সম্মাননা আমাকে মনে করিয়ে দেয়, অন্যদের মতো গ্র্যাজুয়েশন শেষে গতানুগতিক চাকরিজীবন বেছে না নিয়ে আমার ভিন্ন কিছু করার সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল। খারাপ সময়ে আমি ভেঙে না পড়ে নিজের ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম এবং আমি কৃতজ্ঞ, যাঁরা আমাকে পুরোটা সময় সাপোর্ট করেছেন।’ সহপ্রতিষ্ঠাতা তাসফিয়া তাসবিন বলেন, ‘এই মনোনয়নে আমি সম্মানিত ও আনন্দিত। যাঁরা আমার পাশে ছিলেন ও সাহস জুগিয়েছেন, সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’

কনজ্যুমার টেকনোলজি : আজিজের যাত্রী ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে ‘যাত্রী’ প্রতিষ্ঠা করেন আজিজ আরমান। ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যের অবসান ঘটাতে ২০২২ সালে ঢাকা বাস মালিক সমিতি রাজধানীতে চলাচলকারী ৫ হাজার ৬৫০টি পাবলিক বাসের জন্য ই-টিকিটিং সিস্টেম চালু তৈরি করে। এটি করে দিয়েছে টেকনোলজি স্টার্টআপ ‘যাত্রী’। ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটি রিফ্লেক্ট ভেঞ্চারস, ব্রেন টু ফ্রি ভেঞ্চারস, এসবিকে টেক ভেঞ্চারসহ বিভিন্ন বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে প্রায় ১ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পায় যাত্রী। প্রতিষ্ঠানটি ৫ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে।

দীপ্তর এগ্রোশিফট টেকনোলজিস এগ্রোশিফট টেকনোলজিসের সহপ্রতিষ্ঠাতা দীপ্ত সাহা। কৃষিভিত্তিক সাপ্লাই চেইন প্ল্যাটফর্মটি ব্যবসায়ীদের সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য কিনে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য পেতে সহায়তা করে। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব কৃষিপণ্য ন্যায্যমূল্যে যাতে ভোক্তাদের হাতে এসে পৌঁছায়, সে জন্য অনুসরণ করা হয় মাইক্রো ফুলফিলমেন্ট পদ্ধতি। এ ছাড়া এগ্রোশিফট সরাসরি কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কাজ করে বলে গার্মেন্ট শ্রমিকদের কাছে কম দামে টাটকা শাকসবজি সরবরাহ করতে পারে। এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১৮ লাখ ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে।

সামাজিক প্রভাব: সায়েফ ও তহুরার টার্টল ভেঞ্চার স্টুডিও সারাবন তহুরা তুরিন ও আনোয়ার সায়েফ অনিকের প্রতিষ্ঠিত টার্টল ভেঞ্চার স্টুডিও তরুণ স্টার্টআপদের জন্য অর্থায়ন, পরামর্শসহ বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্ক সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে সহায়তা করে থাকে। প্রযুক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে প্রোগ্রাম পরিচালনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করতে প্ল্যাটফর্মটি ইয়াং টার্টল নামে প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে।

জাহ্নবীর রিল্যাক্সি প্রযুক্তিভিত্তিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্ল্যাটফর্ম রিল্যাক্সির সহপ্রতিষ্ঠাতা জাহ্নবী রহমান। তাঁর প্রতিষ্ঠানটি মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যে কোনো সমস্যায় ভুগছেন– এমন তরুণদের ডিজিটালি সমাধান দিয়ে থাকে। এর বাইরে তারা প্রয়োজনীয় কয়েকটি পরিষেবা বিনামূল্যে প্রদান করে থাকে। যেমন– মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা, মেডিটেশন এবং কম খরচে ভার্চুয়ালথেরাপি সেশন। বর্তমানে এ প্ল্যাটফর্মটিতে প্রায় ১৫ হাজার সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছেন। জাহ্নবী রহমান বলেন, ‘সমাজের যে কোনো কাজে ছেলেদের চেয়ে দ্বিগুণ চ্যালেঞ্জ ফেস করতে হয় নারীদের। আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম ছিল না। তা ছাড়া শুরুর দিকে তেমন কোনো সাপোর্ট ছিল না বললেই চলে আমাদের। তবু চেষ্টা ছিল মানুষকে সাহায্য করার। সেই চেষ্টা থেকেই আজ এখানে আসা। তবে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, আমি জানতামই না ফোর্বসের জন্য আমি মনোনয়ন পেয়েছি। হয়তো রিল্যাক্সির কোনো শুভাকাঙ্ক্ষী মনোনয়নের জন্য আবেদন করেন!’ তরুণদের হাত ধরে এভাবেই এগিয়ে যাবে আগামীর বাংলাদেশ– এমনটাই বিশ্বাস!