দক্ষিণ চীন সাগরে আধিপত্য বিস্তার, তাইওয়ানসহ নানা ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই ভালো যাচ্ছে না। এ প্রেক্ষাপটে বেইজিংয়ে গোপন সফর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর পরিচালক উইলিয়াম বার্নস। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে গত মাসে তিনি এ সফর করেন। নানা কারণে সিআইএপ্রধানের এক সফরকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
এক মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে শুক্রবার বলেন, গত মাসে সিআইএ পরিচালক বার্নস বেইজিং সফর করেছেন। সফরকালে তিনি চীনের গোয়েন্দাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনায় বার্নস গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সফরের সঙ্গে যুক্ত আরেক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, সফরকালে চীনের কোনো রাজনৈতিক নেতা বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো নীতিনির্ধারকের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেননি। এ ধরনের সফর নিয়ে সিআইএ সচরাচর কোনো তথ্য দিতে চায় না। তারা এ নিয়ে কোনো মন্তব্যও করেনি।
কয়েক বছর ধরে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। সেই সঙ্গে তাইওয়ান ইস্যু নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে। চীনের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সব সময় সমালোচনায় মুখর যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক কর্মকাণ্ড বাড়ানোর জেরেও বেইজিংয়ের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে ওয়াশিংটনের। তবে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হওয়ার অন্যতম কারণ রাশিয়ার সঙ্গে চীনের বন্ধুত্ব। ইউক্রেন আগ্রাসনের পর মস্কোকে অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে চীন বিবেচনা করছে বলে অভিযোগ করছে ওয়াশিংটন। অবশ্য চীন বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের চীন সফর করার কথা ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে ‘চীনের গোয়েন্দা বেলুন’ শনাক্তের প্রেক্ষাপটে সফরটি স্থগিত করা হয়। পেন্টাগন সূত্রের বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানায়, সিঙ্গাপুরে নিরাপত্তাবিষয়ক সম্মেলন সাংরি-লা ডায়ালগের সাইড লাইনে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শাংফুর সঙ্গে হাত মেলান। তবে তাঁদের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি।
এশিয়ার শীর্ষ নিরাপত্তা বৈঠকে শনিবার মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন সংকট সমাধানে চীনের অনাগ্রহ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা সংকট সমাধানের উপায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অস্টিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের প্রতিরক্ষা ও সামরিকপ্রধানদের উচিত সংঘাত এড়াতে এগিয়ে আসা এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বাড়ানো। তিনি বলেন, ‘সংলাপ কোনো পুরস্কার নয়, এটা প্রয়োজনীয়তা।’
লয়েড অস্টিনের মন্তব্যের কঠোর প্রতিক্রিয়া এসেছে চীনের পক্ষ থেকে। নিরাপত্তা বৈঠকে চীনের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকা দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জ্যেষ্ঠ কর্নেল তান হেফাই বলেন, পেন্টাগনপ্রধান তাঁর বক্তব্যে বেশ কিছু মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন। চীনের প্রতিনিধি দলের আরেক সদস্য জ্যেষ্ঠ কর্নেল ঝাও জিয়াংঝু বলেন, চীন কী করবে, সেটা ওয়াশিংটনের নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত নয়। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, চীনের নিরাপত্তার নিশ্চিত করা সামরিক বাহিনীর মূল উদ্দেশ্য। এটাই সবার আগে।
অস্টিনের মন্তব্যের সমালোচনা করে চীনের লে. জেনারেল জিং জিয়ানফেং বলেন, তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মন্তব্যে সত্যকে উপেক্ষা করা হয়েছে; মূল বিষয়কে ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। এটা ছিল পুরোপুরি ভুল। তিনি বলেন, বিশ্বে চীন একটিই; তাইওয়ান তার অঞ্চলের অবিচ্ছেদ্য অংশ।