ঢাকা মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বিশ্বের অদ্ভুত সীমানাখ্যাত ডায়ামিড আইল্যান্ডের গল্প

বিশ্বের অদ্ভুত সীমানাখ্যাত ডায়ামিড আইল্যান্ডের গল্প

বিগ ডায়ামিড

স্লোভেনিয়া সংবাদদাতা

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২০ | ১০:৩১

এক দেশ থেকে অন্য দেশকে আলাদা করার জন্য টানা হয় সীমারেখা। সীমারেখা বলতে আমরা সাধারণত দুই দেশের সীমান্তের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত কাঁটাতারের বেড়া কিংবা সুউচ্চ দেয়ালকে বুঝি অথবা সীমান্তরক্ষীদের কড়া নিরাপত্তা। তবে বিশ্বের কিছু জায়গায় দুই দেশেকে আলাদা করার জন্য এমন কিছু সীমান্তরেখা টানা হয়েছে যা কেবলমাত্র ব্যতিক্রমী কিংবা অবিশ্বাস্য নয়, আমাদের কল্পনাকও তা রীতিমতো হার মানাতে পারে।

সাইবেরিয়া এবং আলাস্কার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত বেরিং প্রণালি ঠিক এ রকমই এক অদ্ভুত জায়গা। শুনতে অবাক লাগলেও সত্য যে বেরিং প্রণালির মধ্য দিয়ে রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য দিয়ে চির বৈরি দুই দেশ রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সীমারেখা সূচিত হয়েছে। বেরিং প্রণালির ঠিক মাঝামাঝি অবস্থানে "ডায়ামিড" নামক পাথরের তৈরি দুইটি দ্বীপ রয়েছে। এ দ্বীপের একটি রাশিয়ার মালিকানায় রয়েছে, অন্যটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন। 

দুইটি দ্বীপের মধ্যে অপেক্ষাকৃত বড় দ্বীপটি "বিগ ডায়ামিড" বা র‍্যাটমানোভ দ্বীপ নামেও পরিচিত। এ দ্বীপটি রাশিয়ার মালিকানায় রয়েছে। অন্য দিকে এ দুইটি দ্বীপের মাঝে অপেক্ষাকৃত ছোটো দ্বীপটির নাম "দি লিটল ডায়ামিড" বা ক্রুসেনস্টার্ন আইল্যান্ড। এ দ্বীপটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন।  র‍্যাটমানোভ এবং  ক্রুসেনস্টার্ন দ্বীপ দুইটির মাঝে দূরত্ব আড়াই মাইলের কাছাকছি। শীতের সময় এ বেরিং প্রণালির উপরিভাগের পুরোটাই ঘন বরফে ধেকে যায়। যে কারণে কাগজে কলমে এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে অর্থাৎ রাশিয়া থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাশিয়াতে পায়ে হেঁটেই যাতায়াত করা সম্ভব। 

তবে বিষয়টি সহজ মনে হলেও দুই দ্বীপের মাঝে যাতায়াত করা পুরোটা বেআইনি। ১৯৮৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে সম্পাদিত এক চুক্তি অনুযায়ী দুই দ্বীপের বাসিন্দারের মাঝে কোনো ধরণের ভিসা ছাড়াই যাতায়াতের সুযোগ করে দেওয়া হয়। তবে রাশিয়ার অধীনে থাকা র‍্যাটমানোভ দ্বীপের বেশিরভাগ অধিবাসীকে দেশটির সরকার রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে নিয়ে গেছে। বর্তমানে দ্বীপটি রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ কারণে চাইলেও কেউ সহজে প্রবেশ করতে পারেন না। বলা হয়ে থাকে র‍্যাটমানোভ দ্বীপটি রাশিয়ার সবচেয়ে পূর্বের প্রান্ত। 

একইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন ক্রুসেনস্টার্ন দ্বীপটি দেশটির সবচেয়ে পশ্চিমের প্রান্তগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে পরিচিত। এ দ্বীপে ছোট্ট একটি গ্রাম রয়েছে। সবমিলিয়ে এখানে শতাধিক মানুষের বসবাস। যদিও দ্বীপটিতে খুব বেশি মানুষের বসবাস নেই, তবে সেখানে বাচ্চাদের স্কুল কিংবা কেনাকাটার জন্য শপিং মল রয়েছে। দ্বীপটি থেকে মালামাল আনা-নেওয়া করা হয় হেলিকপ্টারের মাধ্যমে। আর সেটা তখনই সম্ভব হয় যখন আবহাওয়া অনুকূল অবস্থায় থাকে। 

মজার বিষয় হচ্ছে দ্বীপ দুইটির মাঝে কেবল আন্তর্জাতিক সীমানাই নয়, আন্তর্জাতিক তারিখ রেখাও টানা হয়েছে। সে কারণে দ্বীপ দুইটির মধ্যবর্তী দূরত্ব মাত্র আড়াই মাইল হলেও র‍্যাটম্যানোভ দ্বীপের সঙ্গে ক্রুসেনস্টার্ন দ্বীপের সময়ের ব্যবধান একুশ ঘণ্টার কাছকাছি। সময়ের দিক থেকে র‍্যাটম্যানোভ দ্বীপটি পার্শ্ববর্তী ক্রুসেনস্টার্ন দ্বীপের চেয়ে একুশ ঘণ্টা এগিয়ে আছে। তাই র‍্যাটম্যানোভ দ্বীপে যখন শুক্রবার রাত নয়টা, ক্রুসেনস্টার্ন দ্বীপে সময় তখন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা। এ কারণে অনেক সময় বিগ ডায়ামিড বা র‍্যাটম্যানোভ দ্বীপটিকে "টুমোরো আইল্যান্ড" এবং দি লিটল ডায়ামিড বা ক্রুসেনস্টার্ন দ্বীপকে "ইয়েস্টার ডে আইসল্যান্ড'' নামেও ডাকা হয়।  

সত্যি সামান্য আড়াই মাইলের দূরত্ব যে বিশ্ব মানচিত্রের বুকেই হোক কিংবা সময় নিরূপণের ক্ষেত্রেই হোক এতো বিশাল পার্থক্য গড়ে দেবে সেটা হয়তো বা আমাদের কল্পনায় আসেনি কখনও। 

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×