- রাজশাহী
- হিরো আলমের প্রায় জিতে যাওয়ার নেপথ্যে
হিরো আলমের প্রায় জিতে যাওয়ার নেপথ্যে
ফল চ্যালেঞ্জ করে যাবেন আদালতে
হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে হারের পর যা বলছেন হিরো আলম। সরাসরি...
Posted by Samakal on Wednesday, February 1, 2023
৮৩৪! সংখ্যাটি হিরোকে পোড়াবে আমৃত্যু। জয়ের খুব কাছে গিয়েও ছিটকে যান তিনি। এর আগে ঠিকই গোটা দেশের চোখ কয়েক ঘণ্টার জন্য বগুড়ায় নিয়ে গিয়েছিলেন হিরো আলম! নগণ্য ভোটের সাদামাটা উপনির্বাচনেও উত্তেজনার পারদ চড়িয়েছেন একাই। ভোটের মঞ্চ রাঙালেও শেষ অবধি অধরাই রয়ে যায় তাঁর বিজয় মুকুট।
মাত্র চার বছর আগে সংসদের ভোটে লড়ে জামানত খুইয়ে লজ্জায় ডুবেছিলেন। তবে এবার হিরো আলমকে আসল 'হিরো' বানাতে চেয়েছিলেন বগুড়ায় তাঁর ভক্ত ও অনুসারীরা।
হিরোর শ্বাসরুদ্ধ লড়াইয়ে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছেন বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার নতুন ভোটার। হিরোর চমকে দেওয়া ফলের ব্যবচ্ছেদ করতে গিয়ে উঠে আসে এমন তথ্য।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১২ হাজার ৮১ জন। চার বছরের ব্যবধানে ভোটার বেড়ে হয় ৩ লাখ ২৮ হাজার ৪৬৯ জন। অর্থাৎ ভোট বেড়েছে ১৬ হাজার ৩৮৮টি। এই ভোটাররা সবাই তরুণ।
আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমকে যাঁরা অনুসরণ করেন, তাঁদের অধিকাংশই যুবক। তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইউটিউবে হিরোর নিয়মিত দর্শক। তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি পরখ করে মিলেছে এই তথ্য। ভোটে দাঁড়ানোর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাঁরা তাঁকে সাহস জুগিয়েছেন, নানা পরামর্শ দিয়েছেন- এঁদের বেশির ভাগই তরুণ-যুবা। সাধারণ মানুষের এই চাওয়া থেকেই বগুড়ার ভোটে হিরো খেলা দেখিয়েছেন বলে মনে করেন সবাই।
গতকালও হিরো আলমকে নিয়ে সরগরম ছিল বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। গুগলে সবচেয়ে বেশি সার্চ হয়েছে হিরো আলমের নাম। তাঁকে দেখতে সকাল থেকেই সমর্থকরা বগুড়ার বাড়িতে ভিড় জমান।
নন্দীগ্রামের বাসিন্দা আমিনুল, কলেজছাত্র সবুজ, মিনহাজসহ আরও অনেকেই বলেছেন হিরো আলমকে ভালো লাগার কথা। তাঁদের মতে, রাজনীতিবিদ ছাড়া সাধারণ একজন মানুষ সংসদে গেলে তাঁদের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করবে। এ কারণে তাঁদের মতো অনেক তরুণই ভালোবেসে হিরোকে ভোট দিয়েছেন। তাঁকে বিজয়ের বেশে দেখতে চেয়েছেন।
নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন রানাও মনে করেন, হিরো আলমের এত ভোট পাওয়ার পেছনে নতুন ভোটারদের অবদান রয়েছে। এরা সবাই স্মার্টফোন ব্যবহার করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হিরো আলমকে অনুসরণ করে। এ কারণে তারা চোখ বুজে হিরোকে ভোট দিয়েছে।
নন্দীগ্রাম এলাকাটিতে বিএনপি ও জামায়াতের তৎপরতা বেশি। তারপরও এখানে কোনো রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই হিরো আলম ভোট বেশি পেয়েছেন বলে দাবি করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলাউদ্দিন সরকার বলেন, আমরা নিজেরাও অবাক হয়েছি। যদিও এই উপনির্বাচন নিয়ে আমাদের আগ্রহ ছিল না। তবে হিরো আলমের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি।
বুধবার অনুষ্ঠিত বগুড়া-৪ আসনে একতারা প্রতীক নিয়ে হিরো আলম পান ১৯ হাজার ৫৭১ ভোট। তাঁর চেয়ে মাত্র ৮৩৪ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হন সরকার সমর্থিত ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী জাসদ নেতা রেজাউল করিম তানসেন।
হিরোর অভিযোগ খতিয়ে দেখার নির্দেশ :এদিকে ভোটে হেরে গত বুধবার রাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম যেসব অভিযোগ করেছেন, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। গতকাল ফোনে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসানকে তিনি এই নির্দেশ দেন।
নির্বাচনে হেরে গতকাল সারাদিন বাড়ি থেকে বের হননি হিরো আলম। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি ফলাফলের কপি নিতে জেলা নির্বাচন অফিসে যান। সেখানে হিরো আলমকে মিষ্টিমুখ করান জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার মাহমুদ হাসান।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান বলেন, হিরো আলম ফল নিয়ে অভিযোগ করে বুধবার রাতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সেটা দেখে সিইসি আমাকে ফলাফল পুনর্যাচাইয়ের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি ফলাফলের সব কপি ঢাকায় পাঠাতে বলেছেন।
পরে আমরা আবার ফল যাচাই করে দেখেছি, সব ঠিক আছে। হিরো আলমকে ইভিএম মেশিনের ফলাফলের কপি এবং কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসারের সই করা ফলাফলের কপি দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে হিরো আলম বলেন, বগুড়ার দুই আসনে উপনির্বাচনে আমি ভোট করেছি। বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের সব কেন্দ্রে আমি নির্বাচিত হয়েছি। ষড়যন্ত্র করে আমাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর বিরুদ্ধে আমি হাইকোর্টে রিট করব। আইনের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। এক সপ্তাহের মধ্যে আদালতে যাব। যেভাবে আমার প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছি, তেমনি আশা করছি- ভোটের ফলাফলও আমার পক্ষে যাবে। একশ্রেণির মানুষ আমাকে 'স্যার' ডাকতে চান না। তারাই ষড়যন্ত্র করে আমার ফল বদলে দিয়েছে।
হিরো আলম আরও বলেন, এই সরকারের অধীনে আর সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়। এ পরিস্থিতি থাকলে আমি আর নির্বাচন করব না।
হিরো আলম বলেন, ভোটের জন্য গণসংযোগের সময় কেউ আমাকে বিমুখ করেননি। তাঁরা আমাকে আপ্যায়ন করেছেন, খাইয়েছেন। এ থেকে আমি নিশ্চিত ছিলাম, বগুড়া-৪ আসনে আমার বিজয় হবে।
আমি নির্বাচিত হলে চোর-বাটপারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতাম, এটা তারা বুঝেই আমাকে জাতীয় সংসদে যেতে দেয়নি।
মন্তব্য করুন