এরশাদের দাফন নিয়ে যা ঘটলো রংপুরে
রংপুর অফিস
ভক্তদের দাবির তোপে ভেস্তে গেল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ঢাকায় দাফনের সিদ্ধান্ত। এরশাদ-পাগল রংপুরবাসীর আবেগের কাছে টেকেনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদেরর কথা। হাজার হাজার ভক্ত পাহারা দিয়ে গোটা রংপুর নগরী প্রদক্ষিণ করে মরদেহ পৌঁছে দেয় এরশাদের পল্লীনিবাসে।
মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় পার্টিসহ স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবি সংগঠন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মঞ্চে ওঠেন রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। সেখানে তিনি মাইকে দাবি তোলেন- দলমত নির্বিশেষে এরশাদ রংপুরের কৃতি সন্তান। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে রংপুরের মাটিতেই সমাহিত করতে চাই। এরশাদের স্বপ্নের পল্লীনিবাস হবে তার শেষ ঠিকানা।
কালেক্টরেট মাঠে আগত জনতা মেয়রের কথায় সায় দিয়ে এরশাদকে রংপুরে সমাহিত করার জোর দাবি জানান ও বিক্ষোভ করতে থাকেন।
এরপর যোহরের নামাজ শেষে কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে জানাজার নামাজে অংশ নিতে আসেন এরশাদ ভক্তরা। জানাজায় লোকসমাগমে কানায় কানায় পূর্ণ হয় মাঠটি।
জানাজার আগে বক্তব্য দেন এরশাদের ছেলে রাহগির আল মাহি শাদ এরশাদ, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
পরে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা দলের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বক্তব্য দেয়ার জন্য জিএম কাদেরের নাম ঘোষণা করেন। জিএম কাদের এরশাদের শাসনামলসহ রাজনৈতিক জীবন ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে এরশাদ রংপুরসহ দেশবাসীর হৃদয়ের মনিকোঠায় থাকবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। এরশাদের মৃত্যুর শোককে শক্তিতে রুপান্তরিত করে আগামীতে জাতীয় পার্টিকে আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।
তবে জিএম কাদের এরশাদের সমাধি নিয়ে কোন কথা না বলায় উত্তেজিত হয়ে পড়েন ভক্তরা। তারা সবার আগে রংপুরে এরশাদের সমাধি করার ঘোষণা শুনতে চান। মহাসচিব রাঙ্গা ও মেয়র মোস্তফা মাইকে এরশাদভক্তদের শান্ত হতে বললেও তারা বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হতে থাকলে মঞ্চ থেকে নেমে পড়েন জিএম কাদের ও মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতারা। দ্রুত সারিবদ্ধভাবে জানাজায় অংশ নেয়ার ঘোষণা আসে মাইকে। এরপর ইমাম জানাজা শুরু করেন।
জানাজা শেষে মরদেহ মাঠ থেকে বের করতে চাইলে বাধা দেন এরশাদভক্তরা। তারা বিক্ষোভ করে গাড়ি আটকে রাখেন। ফেস্টুন উচিয়ে রংপুরেই এরশাদের সমাধি করার দাবি তোলেন। এ সময় বিক্ষোভের মাঝে আটকা পড়েন জিএম কাদের, মসিউর রহমান রাঙ্গা, সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। এক পর্যায়ে স্থানীয় নেতাকর্মীরা মানববেস্টনি তৈরি করে তাদের মাঠ থেকে বের করে আনেন। পরে এরশাদের মরদেহবাহী গাড়িতে উঠে পড়েন সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। এরপর গাড়িটি রংপুর সরকারি কলেজ রোড দিয়ে ক্রিকেট গার্ডেন মোড় এলাকায় এলে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ শুরু করেন নেতাকর্মীরা। পুলিশের প্রটোকলের গাড়ি ক্যান্টনমেন্টের দিকে গেলেও উত্তেজিত এরশাদভক্তদের চাপে মরদেহবাহী গাড়িটি সুরভী উদ্যান রোড দিয়ে দর্শনা পল্লীনিবাসের দিকে নিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। হাজার হাজার নেতাকর্মী গাড়িটি পাহারা দিয়ে নিয়ে যান। এ সময় এরশাদের নামে স্লোগান দিতে থাকেন ভক্তরা।