- সম্পর্ক
- এক গোলাপ ১৬০ টাকা!
এক গোলাপ ১৬০ টাকা!

ফাইল ছবি
প্রকৃতির সঙ্গে মিশেছিল হৃদয়ের রং, আকাশে-বাতাসে বেজেছিল মনের বীণা। তাই গতকাল সোমবার ভালোবাসার মানুষকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে একটি গোলাপ ১৬০ টাকা দিয়ে কিনতেও দ্বিধা হয়নি কারও। তাদের এই অকৃত্রিম ভালোবাসার কারণে বসন্তের শুরুতেই চাঙ্গা হয়ে ওঠে দুই বছর ধরে করোনায় ধুঁকতে থাকা ফুলের ব্যবসা। পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে গতকাল শুধু ঢাকাতেই বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার ফুল। সারাদেশে এই বিক্রির পরিমাণ হতে পারে ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকা।
গতকাল রাজধানীর শাহবাগ, শেরেবাংলা নগরসহ পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলোতে ছিল ফুলের রমরমা ব্যবসা। প্রতিটি দোকানে ছিল ফুলপ্রেমীর উপচে পড়া ভিড়। কেউ নিজের জন্য, কেউ বা স্বজনের জন্য সহাস্যে ফুল কিনেছেন। তবে তাদের বেশিরভাগই ছিলেন গোলাপ ফুলের ক্রেতা।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তন্বী কয়েকটি গোলাপ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন শাহবাগ মোড়ে। তিনি জানালেন, তিনটি চায়না গোলাপ ফুল কিনেছেন ৪৮০ টাকা দিয়ে। সে হিসাবে একটি গোলাপের দাম পড়েছে ১৬০ টাকা। তবে বিশেষ দিনে টাকার হিসাব না কষে পছন্দের মানুষকে সারপ্রাইজ দেওয়াই বড় বলে মনে করেন তিনি।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে দেখা গেছে, একেকটি গোলাপ বিক্রি হয়েছে মান ভেদে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। শাহবাগে একেকটি চায়না গোলাপ বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। তবে একেকটি দেশি গোলাপ পিস বিক্রি হতে দেখা গেছে ৮০ থেকে ১২০ টাকায়।
সারা বছর ফুল বিক্রি হলেও রোজ ডে, পহেলা ফাল্কগ্দুন, ভালোবাসা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, বৈশাখী নববর্ষ- এসব বিশেষ দিনকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে বেশি ফুল বেচাকেনা হয়। তা ছাড়া গায়েহলুদ, বিয়ে, হালখাতাসহ নানা উৎসবেও বিক্রি হয় অনেক ফুল।
এ বছরের বসন্তে ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী উভয়েই গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দামে ফুল বিক্রি করতে পেরেছেন বলে জানালেন বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইমামুল হোসেন। সমকালকে তিনি বলেন, গতবারের মতো এবারও পহেলা ফাল্কগ্দুন ও ভালোবাসা দিবস একই দিনে পড়েছে। এখনও করোনা যায়নি। তার পরও সারাদেশে ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। তবে একুশে ফেব্রুয়ারি সফলভাবে সম্পন্ন করা গেলে ফেব্রুয়ারির শেষে বিক্রির পরিমাণ ২০০ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
গত বছর পাইকারি পর্যায়ে ১০০ গোলাপ ফুল এক-দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হলেও এবার বিক্রি হয়েছে আড়াই হাজার থেকে ছয় হাজার টাকায়। চায়না গোলাপ বিক্রি হয়েছে সাত থেকে আট হাজার টাকায়। করোনায় দুই বছর লোকসান হওয়ায় চাষিরা উৎপাদন কমিয়েছেন। বৃষ্টির কারণে ফলন ব্যাহত হয়েছে। ফলে এবার ফুলের সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে দামও বেড়েছে।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সাবেক সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, অন্য বছর ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে রাজধানীতে শুধু যশোর জেলা থেকেই ১২ থেকে ১৩টি ফুলভর্তি ট্রাক যেত। কিন্তু এ বছর গেছে পাঁচ থেকে ছয়টি ট্রাক। চাহিদা থাকায় ফুলের দাম বেড়েছে।
তবে সবচেয়ে বেশি দাম ছিল চায়না গোলাপের। খুচরা পর্যায়ে এই ফুলের একেকটি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা দরে পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে বলে জানালেন ঢাকা ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি এবং বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি বাবুল প্রসাদ।
তিনি বলেন, উৎপাদন কম হওয়ায় দাম বেড়েছে। তবে করোনা শুরুর আগের ফেব্রুয়ারিতে এসব বিশেষ দিনে ঢাকায় প্রায় ৪০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হতো। এ বছর বিক্রি হতে পারে ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা। আগে দেশে ফুলের অভ্যন্তরীণ বাজার ছিল প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকার। এখন তা বেড়ে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকার মতো হয়েছে।
মন্তব্য করুন