ঢাকা শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩

সুকুমার রায়কে উৎসর্গিত ছবি নিয়ে চিত্রপ্রদর্শনী

সুকুমার রায়কে উৎসর্গিত ছবি নিয়ে চিত্রপ্রদর্শনী

হামিম কামাল

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৩ | ১৪:৩৮ | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৩ | ১৪:৩৮

১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সুকুমার রায়ের শততম মৃত্যুবার্ষকী স্মরণে তাঁর অমর চরিত্রগুলোর ছবি এঁকেছেন একজন সুকুমার-পাগল শিল্পী। সেইসঙ্গে ব্যক্ত করেছেন সুকুমার রায়ের প্রতি ভালোবাসা; খানিকটা হলেও শোধ করতে চেয়েছেন অতুল শৈশবের ঋণ, যে ঋণে সুকুমার রায়ের কাছে বাঁধা পড়ে আছে সমস্ত শিশু। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সস্টিটিউটের জয়নুল গ্যালারিতে ৯ অক্টোবর ২০২৩ শুরু হওয়া শিল্পী অনিন্দ্য কান্তি বিশ্বাসের এ প্রদর্শনী চলবে ১৩ অক্টোবর শুক্রবার পর্যন্ত। সকাল ১০টা থেকে রাত ০৮টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্যে প্রদর্শনী উন্মুক্ত থাকবে। 

ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার সুকুমার রায়-অনুরাগী প্রত্যেকে আমন্ত্রিত। একসময়ের শিশু আজকের বাবা-মায়ে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারেন তাঁদের প্রিয় সন্তানটিকে, পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন সুকুমারের রায়ের অনন্ত আনন্দের ভুবনের সঙ্গে।

প্রদর্শনী উপলক্ষে অনিন্দ্য কান্তি বিশ্বাস এসেছিলে সমকালের দপ্তরে, একটি বার্তা দিয়েছেন সকলের প্রতি। বার্তাটির চুম্বক অংশ সমকালের পাঠকের জন্যে তুলে দেওয়া হলো।

“মাননীয় মহাশয় মহাশয়া,

আমি তথাকথিত ভারতীয় প্রবাসী বাঙালি শ্রী অনিন্দ্য বিশ্বাস। দীর্ঘদিন ধরে বাংলা তথা ভারতবর্ষের তথা বর্তমান বিশ্বের বহুমুখী প্রতিভাসপন্থী ব্যক্তিত্ব সুকুমার রায়কে নিয়ে তাঁর শততম মৃত্যুবার্ষিকীতে একটি চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজনে ব্রত হয়েছি। 

একবিংশ শতকে আমাদের সুকুমার রায়কে খুবই প্রয়োজন-বিশেষ করে আমাদের সুস্থ থাকবার প্রয়োজনে। ভীষণভাবে আশ্চর্যান্বিত হই যখন দেখি ক্রমশ আমরা হাসতে ভুলে যাচ্ছি- দিনের পর দিন ধরে, রসিকতা তো একপ্রকার উদার। কার্টুনের বা ব্যাঙ্গাত্মক ছবির দেখা মেলা দুষ্কর। কথা নয়। কাজকেই প্রাধান্য দিয়েছি চিরকাল এবং ভবিষ্যতেও দিতে চাই। সুকুমার ব্রায়ের আঁকা চিত্রগুলোকে একটু নোতুন আঙ্গিকে তুলে ধরার প্রয়াসী হয়েছি। দর্শক এবং শিল্প পিপাসুরা আনন্দ পেলে আমার তান সার্থক হবে।

বিশ্বদরবারে সুকুমার রায় তাঁর নিজস্বতায় পরিচিত। তাঁকে নতুন করে প্রচার একান্তই নিষ্প্রয়োজন, তবু এ প্রজনের কাছে তাঁর পরিচিতি একবারেই নেই বললেই চলে কেননা বর্তমান প্রজন্ম হাস্যরসিকতা জানে না- পরিবর্তে মুখ গুজে থাকে মুঠোফোন বা মোবাইল এ, পড়বার বা জানবার আগ্রহ একেবারেই নেই। শিশুদের বাবা মায়েরা বিশেষ করে মায়েরা মোবাইল চালিয়ে দিয়ে তাদেরকে খাবার খাওয়ায়। ফলে বাচ্চারা জানেই না কী খাচ্ছে বা কোন খাবারের কী স্বাদ? চোখ তাদের মেবাইলে আবদ্ধ, খাবারের প্রতি ভ্রুক্ষেপও তাদের নেই। এভাবে চলতেই পারে না- ফলত: প্রয়োজন সচেতনতার-বিশেষভাবে প্রয়োজন রয়েছে সুকুমার রায়কে জানবার নিতান্তপক্ষে মস্তিষ্কের বিকাশের প্রয়োজনে।

সুকুমার রায় সৃষ্ট চরিত্রগুলো— বকচ্ছপ, হাঁসজারু, হাতিমি, টিয়ামুখো গিরগিটি, কাঠ-বুড়ো, ট্যাশগরু, হুলোর গান, রামগরুড়ের ছানা, হেশোরাম হুঁশিয়ারের ডায়েরি, হ্যাংলাথেরিয়াম, ল্যাগব্যাগর্নিস, গোমরাথেরিয়াম, বেচারাথেরিয়াম, চিল্লানোসোরাস, ল্যাংড়াথেরিয়াম প্রমূখ আজও আমাদেরকে সমানভাবে শুধু বিচলিত করে না- পরিবর্তে বিভিন্ন আকার বা আকৃতি নিয়ে ভারতে শেখায়।

সুকুমার রায় সম্পর্কে কাতে বা লিখতে গেলে আস্ত একটা ‘রামায়ণ’ বা ‘মহাভারত’ রচনা হয়ে যাবে বৈকি। সে কারণে স্বল্পকথায় গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজোর মতই সুকুমার রায়ের প্রগতিশীল মন এবং মননের কয়েকটি আপ্তবাক্য উদ্ধৃত করেই না

শেষ করা যাক এ লেখনী-

আনন্দেতে জীব জনম লভে
আনন্দেজীবিত রয়েছে সবে
আনন্দে বিরাম পতিয়া প্রাণ
আনন্দের মাঝে করে প্রয়াণ।” 

আবার আবোল তাবোল’ ‘বইয়ের শেষ কবিতার শেষ চারটি পঙ্ক্তি

‘‘আদিমকালের চাঁদিম হিম 
তোড়ায় বাধা ঘোড়ার ডিম
ঘনিয়ে এল ঘুমের ঘোর 
গানের পালা সাঙ্গ মোর,

জ্ঞাতব্যে জানাতেই হয় এটি শুধুমাত্র আবোল তাবোল'-এরই শেষ কবিতা নয়-সুকুমার রায়ের জীবনেরও শেষ কবিতা। ১০ই সেপ্টেম্বর ১৯২৩ এ সুকুমার রায়ের মৃত্যুর ৯দিন পরে প্রকাশ পায় বাঙালির চিরকালীন প্রিয়গ্রন্থ ‘‘আবোল তাবোল’’।

অনিন্দ্য কান্তি বিশ্বাস
শিল্পী, শিল্প ঐতিহাসিক এবং শিল্প সমালোচক

উল্লেখ্য, কিংবদন্তী শিশুসাহিত্যিক সুকুমার রায়ের জন্ম ৩০ অক্টোবর ১৮৮৭, বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলায়। তাঁর ছদ্মনাম ছিল উহ্যনাম পণ্ডিত। আবোল তাবোল, পাগলা দাশু, হ য ব র ল তাঁর বিখ্যাত রচনা। শিশুদের জন্যে রসাল ছন্দে লেখা কল্পিত এক ঝাঁক চরিত্রের এমন অপরূপ উদাহরণ আর কোনো বাঙালি সাহিত্যিক এখন পর্যন্ত তৈরি করতে পারেননি বলে বিশ্বাস করা হয়। ১৯২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর, কলকাতার গড়পাড়ে সুকুমার রায় মৃত্যুবরণ করেন।

শিল্পী অনন্দ্যি কান্তি বিশ্বাস থাকেন প্রতিবেশি দেশ ভারতের রাজধানী দিল্লী শহরে। প্রদর্শনী উপলক্ষে এ মুহূর্তে ঢাকায় অবস্থান করছেন।

আরও পড়ুন