- সাহিত্য ও সংস্কৃতি
- ভোরের কিরণে নব আনন্দে জাগার ডাক
ভোরের কিরণে নব আনন্দে জাগার ডাক
‘নব আনন্দে জাগো আজি রবিকিরণে
শুভ্র সুন্দর প্রীতি-উজ্জ্বল নির্মল জীবনে।
নব আনন্দে জাগো ....’
করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর রমনার বটমূলে বাংলা নতুন বছরকে বরণ অনুষ্ঠান বন্ধ ছিল। এবার তাই ছায়ানট তাদের অনুষ্ঠানে নতুন উদ্দ্যমে জাগ্রত হওয়াকে প্রাধান্য দিয়েছে। বৃহস্পতিবার ১৪২৯ বঙ্গাব্দের পয়লা বৈশাখের ভোরের আঁধার কেটে গিয়ে সূর্য উঠে এলে রমনার বটমূলে ছায়ানটের শিল্পীরা নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে তুলেন সুরের অনুরণন।
ভোরের সূর্য উঠতেই রং বেরঙয়ের পোশাক আর কাঁচা ফুলে সেজে রমনার বটমূলে হাজির হন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। তাদের পোশাকে যেমন ছিল বাঙালিয়ানার ছাপ, তেমনি চোখে মুখে ছিলো নব প্রত্যাশা আর স্বপ্ন।
দুই বছরের করোনাকালের সেই দুঃসময় পেরিয়ে নতুন বাস্তবতায় এবার ছায়ানটের গানের অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছিল। ছায়ানটের ভাষায় নব আনন্দে জাগ্রত হওয়ার এই আয়োজনের শিরোনাম ছিল, ‘নব আনন্দে জাগো’।

নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ছায়ানট সভাপতি সন্জীদা খাতুন। তবে বয়স হওয়ায় অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন না তিনি। এ ছাড়া নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে রাখেন নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী। শ্রোতাদের মধ্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদও অংশ নিয়েছিলেন।
অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে রামকেলি রাগ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। এরপর সম্মেলক কণ্ঠে গাওয়া হয় রবীন্দ্রসংগীত ‘মন, জাগো মঙ্গললোকে’। তারপর আহির ভৈরব রাগে এবাদুল হক সৈকতের সেতারবাদন, পরে বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী গাইলেন নজরুলসংগীত ‘অরুণকান্তি কে গো যোগী ভিখারি’। আর তোড়ি রাগে ছোট আলাপ শোনালেন বিটু কুমার শীল। এইভাবে চলতে থাকে ছায়ানটের এই অনুষ্ঠান।
ছায়ানটের এই গানের অনুষ্ঠান পঞ্চকবি- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুলপ্রসাদ সেন, রজনীকান্ত সেনের গানের সঙ্গে লালন সাঁই, গুরু সদয় দত্তের ব্রতচারীর গান, গিরীন চক্রবর্তীর পল্লিগীতি এবং নুরুল ইসলাম জাদিদের ভাওয়াইয়া দিয়ে সাজানো হয়েছিল। সঙ্গে বরাবরের মতো ছিল আবৃত্তি।
প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এই অনুষ্ঠানে সব মিলিয়ে পরিবেশনা ছিল প্রায় ৩৪টি। অনুষ্ঠানে একক গান গেয়েছেন শাহীদ সামাদ, খায়রুল আনাম শাকিল, লাইসা আহমদ লিসা, শারমিন সাথী ইসলাম, তানিয়া মান্নান, এ টি এম জাহাঙ্গীর, কানিজ হুসনা, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, এরফান হোসেনসহ আরও অনেকে। একক আবৃত্তিও ছিল অনুষ্ঠানে।
আর সম্মেলক পরিবেশনার মধ্যে ‘বাংলা ভূমির প্রেমে আমার’, ‘বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা’, ‘প্রভাত বীণা তব বাজে হে’ ‘নবীন আশা জাগল যে রে আজ’, ‘নাও ছাড়িয়া দে, পাল উড়াইয়া দে’সহ বেশ কয়েকটি ছিল।
শেষ পর্যায়ে ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, হৃদয়ে বাঙালি জাতিসত্তাকে ধারণ করে মানবিক সমাজ গঠনে আমাদের প্রাণিত করে বাংলা নববর্ষ। এ প্রত্যয় অর্জনে অর্ধশতাধিক বছর ধরে সুর ও বাণীর আবহে রমনার বটমূলে আয়োজিত হচ্ছে বাঙালির মিলনমেলা। অতিমারির কারণে গত দুটি বছর আর্থিক ও সামাজিক বিপর্যয় এবং স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে আমরা গৃহবন্দী ছিলাম। দুঃসময় পেরিয়ে এবার নব আনন্দে জাগ্রত হওয়ার আয়োজন।
এরপর ছায়ানটের সভাপতি, লেখক ও গবেষক সন্জীদা খাতুনের গাওয়া ‘নব আনন্দে জাগো আজি রবিকিরণে/ শুভ্র সুন্দর প্রীতি-উজ্জ্বল নির্মল জীবনে/ নব আনন্দে জাগো’ গানটি শোনানো হয়। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশনা দিয়ে শেষ হয় এই সংগীতানুষ্ঠান।
মন্তব্য করুন