ডার্ক ওয়েবে ফাঁস হচ্ছে বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ডধারীর তথ্য। সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংস্থা কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (সার্ট) বিভিন্ন ব্যাংকের প্রায় দুই হাজার কার্ডের তথ্য বিশ্নেষণ করে বিষয়টি জানিয়েছে। ফাঁস হওয়া তথ্যের মধ্যে ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ ক্লাসিক ক্যাটাগরির কার্ডধারী। গোল্ড ৩১ দশমিক ২৪ শতাংশ, প্লাটিনাম ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ ও প্রিপেইড কার্ডের ক্ষেত্রে ৫ দশমিক ৩ শতাংশের তথ্য ডার্ক ওয়েবে পাওয়া গেছে।

ডার্ক ওয়েব হলো ইন্টারনেট জগতে অবৈধ কর্মকাণ্ডের মার্কেটপ্লেস। ব্যাংকাররা জানান, অনলাইন কেনাকাটায় বিল পরিশোধের জন্য কার্ডধারীরা বিভিন্ন তথ্য দিয়ে থাকেন। এ ব্যবস্থায় অনেক সময় কার্ডের তথ্য ফাঁস হতে পারে। সাইবার অপরাধীরা এসব তথ্য নিয়ে বিভিন্ন ধরনের লেনদেন করার চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সচেতন রয়েছে। এর পরও কারও তথ্য ফাঁস হলে তাৎক্ষণিকভাবে সেই কার্ড বন্ধ করে নতুন কার্ড ইস্যু করা হয়।

সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন কাজ করা সংস্থা কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (সার্ট) বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে। তারা সাইবার ঝুঁকি বিশ্নেষণ করে সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে তথ্য জানায়। এর আগেও ব্যাংক খাতের বিভিন্ন সাইবার ঝুঁকি বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করেছে সার্ট।

সার্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইবার অপরাধীদের কাছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে ব্যাংক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তু। ডার্ক ওয়েবে দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যাংক কার্ডধারীর তথ্য ফাঁস হয়েছে। অনেক কার্ডেরই পাসওয়ার্ড দুর্বল। তারা অনেক গ্রাহকের কার্ডের নম্বর, পাসওয়ার্ড, লেনদেন, ই-মেইলসহ অনেক ধরনের তথ্য ডার্ক ওয়েবে পেয়েছেন। সার্বিক বিবেচনায় সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন সমকালকে বলেন, এখন অনলাইনে কেনাকাটার বিল পরিশোধে কার্ডের ব্যবহার বাড়ছে। অনেক সময় সেখান থেকে কার্ডের তথ্য অন্যের কাছে চলে যায়। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সতর্ক রয়েছে। কোনো গ্রাহকের কার্ডের তথ্য ফাঁসের বিষয়টি ব্যাংক জানতে পারলে তাৎক্ষণিকভাবে সেটি বন্ধ করে নতুন একটি কার্ড ইস্যু করা হয়। তিনি বলেন, ব্যাংক ব্যবসায় ঝুঁকি থাকবেই। তবে সেটা যতটা কম পর্যায়ে রাখা যায়, ব্যাংকগুলোকে সে চেষ্টা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যে ব্যাংক যত বিনিয়োগ করছে, তার ঝুঁকি তত কম। তিনি জানান, সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতার জন্য কিছু দিন আগে ঢাকায় একটি সম্মেলন করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, দেশে কার্ডভিত্তিক লেনদেন দ্রুত বাড়ছে। গত মে পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর ইস্যু করা ডেবিট, ক্রেডিট ও প্রিপেইড কার্ড রয়েছে তিন কোটি সাড়ে ৭ লাখ। সব মিলিয়ে মে মাসে এসব কার্ডে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৮ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ কোটি ৭২ লাখ রয়েছে ডেবিট কার্ড, যেগুলোতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৬ হাজার ৫১ কোটি টাকা। ক্রেডিট কার্ড রয়েছে ১৯ লাখের বেশি। এসব কার্ডে লেনদেন ছিল ২ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। আর ১৬ লাখের বেশি প্রিপেইড কার্ড রয়েছে, যেখানে লেনদেন হয় ১৭৭ কোটি টাকা।