জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩ কোটি ৬ লাখ টাকায় কেনা হয় ১৫টি লিফট। এক বছর না যেতেই অচল হয়ে পড়েছে চারটি লিফট। বাকিগুলো প্রায়ই চলন্ত অবস্থায় বিকল হয়ে পড়ে। লিফটের ভেতর আটকা পড়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এগুলো সুইজারল্যান্ড থেকে আনা ৫৫০ ব্র্যান্ডের লিফট।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবন এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবাসিক হলের ভবন নির্মাণকাজ শেষে ১৫টি লিফট লাগানো হয়। এর মধ্যে দুই হলে ৯টি এবং দুই অনুষদ ভবনে ছয়টি লিফট স্থাপন করা হয়। অনুষদ ভবনের চারটি লিফট শুরু থেকেই অধিকাংশ সময় অচল থাকে। দুটি লিফট দিয়ে ১০ তলা ভবনে ওঠানামা করেন শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ ৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। অনুষদ ভবনের বাকি দুটি লিফট প্রায়ই চলন্ত অবস্থায় বিকল হয়ে পড়ে। এতে আতঙ্কিত শিক্ষার্থীরা চিৎকার-চেচামেচি শুরু করেন। দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

গত ১২ অক্টোবর দুপুর ১টার দিকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের লিফটে আটকা পড়েন ৬ শিক্ষার্থী। তখন ভয়ে চিৎকার শুরু করেন তাঁরা। এর মধ্যে অনিক সিকদার নামের এক শিক্ষার্থী ইমার্জেন্সি অ্যালার্ম চাপতেই থাকেন, চাপতেই থাকেন। কেউ কেউ ফোনে বন্ধু বা সহপাঠীদের কাছে সহায়তা কামনা করছিলেন। বিষয়টি টের পেয়ে স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী তিথি তাঁর বিভাগের শিক্ষক ও প্রক্টরকে জানান। এর পর তাঁদের উদ্ধার করা হয়।
১৯ অক্টোবর লিফটে আটকা পড়েন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুল ইসলাম। ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি গ্রুপে তিনি লেখেন- 'ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর ভয়ংকর অভিজ্ঞতাটা হলো আজকে। লিফটে আটকে গিয়েছিলাম। লিফটে একাই ছিলাম। ওইখানে ছিলাম দীর্ঘ ২৭ মিনিট। ইমার্জেন্সি বাটনে চাপ দিয়ে কারও কোনো সাহায্য পাচ্ছিলাম না। লিফটে নেটওয়ার্ক কম থাকায় ফোনেও বুঝাতে পারছিলাম না আমি আটকে আছি। অবশেষে দরজা খুলল, দম নিতে কষ্ট হচ্ছিল।'

ভুক্তভোগী অনিক সিকদার বলেন, 'বৈদ্যুতিক কোনো সমস্যা ছাড়াই বিকট শব্দে চারতলায় এসে আটকে যায় লিফট। আমি ভয়ে ইমার্জেন্সি অ্যালার্মে ক্লিক করেই যাচ্ছিলাম। কিন্তু ২০ মিনিটের মধ্যে কোনো রেসপন্স পাচ্ছিলাম না। বিষয়টি টের পান আমার বিভাগের তিথি নামে এক শিক্ষার্থী। তিনি বিভাগের শিক্ষক ও প্রক্টর স্যারকে জানালে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়।' তাঁর বিভাগের আসিব মাহমুদ শোভন নামে এক শিক্ষার্থী জানান, তাঁরা ছয়জন আনুমানিক আধাঘণ্টা লিফটের ভেতর আটকে ছিলেন।

রাদিয়ান্ত সোহানা বলেন, 'আমিও এক দিন আটকা পড়েছিলাম। আর এভাবে প্রতিদিন কেউ না কেউ আটকা পড়ছেন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো মাথাব্যথা নেই।'

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট নুসরাত তানিয়া বলেন, এ হলের পাঁচটি লিফটই সচল। এক বছরের মধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কেবল এক সপ্তাহ বন্ধ ছিল। তবে জেনারেটরের ব্যবস্থা না থাকায় মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ চলে গেলে শিক্ষার্থীরা আটকা পড়েন। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে টেকনিশিয়ান নিযুক্ত রয়েছেন। টেকনিশিয়ানরা খুব দ্রুতই শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে সক্ষম।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদার জানান, হলের লিফটে মাঝেমধ্যে সমস্যা দেখা দেয়। তবে বেশি সমস্যা হয় ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে। বিষয়টি আসলেই বিব্রতকর।

ডিপিডি হাফিজুর রহমানের ভাষ্য, লিফটে সিকিরিউটি ডিভাইস অনেক। ব্যবহারকারীরা উল্টাপাল্টা চাপাচাপি করলে সমস্যা হতেই পারে। মাঝেমধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। বাংলাদেশের অনেক স্থানে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। এতে আতঙ্কের কিছু নেই।

তবে লিফটে আটকে শিক্ষার্থীদের আতঙ্কের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। তিনি বলেন, 'চালক ছাড়া গাড়ির যে অবস্থা, লিফটেরও একই অবস্থা। অনেকেই আগে কোনোদিন লিফট ব্যবহার করেননি। তাঁরা একই বাটনে বারবার চাপেন। উন্নতমানের হলেই কী? লিফটগুলোর যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না বলেই সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমরা লোকবল চেয়ে আবেদন করেছি।'