- সাহিত্য ও সংস্কৃতি
- বাম রাজনীতি নিয়ে ‘বলা ও না-বলা কথা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
বাম রাজনীতি নিয়ে ‘বলা ও না-বলা কথা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খানের ‘বলা ও না-বলা কথা’ শীর্ষক আত্মজীবনী গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে। বইটিতে তাঁর রাজনৈতিক জীবন এবং দেশের ইতিহাসে কমিউনিস্ট ধারার উত্থান-পতন নানা বিষয় উঠে এসেছে।
শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেল তিনটায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনী মিলনায়তনে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। আদর্শ প্রকাশনী বইটি প্রকাশ করেছে। সভায় বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের পাশাপাশি বইমেলায় ‘আদর্শের’ স্টল বরাদ্দের বিষয়েও আলোচনা হয়।
লেখক মনজুরুল আহসান খান বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, ‘জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড নিয়ে অনেকের সঙ্গে আলোচনা হতো। প্রচলিত ধারণার বাইরে ছিল আমার আলোচনা। এ বিষয়ে আমরা আলোচনা শুনে অনেকে অবাক হতো। তারা আমাকে এই সম্পর্কে লিখতে বলেছিলেন। লেখার সময় হয়নি, লেখার অভ্যাসও তেমন নেই। ১৯৬৭ সালে আমার লেখা একটা বই প্রকাশিত হয়েছিল। তারপর করোনা মহামারির কারণে হাতে পর্যাপ্ত সময় ছিল। তখন লেখা শুরু করলাম। প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে এই লেখা চলতে থাকে। অনেক কথা লিখেছিলাম। কিন্তু প্রকাশক আর স্বজনরা রাজি না হওয়ায় সব কিছু প্রকাশ করতে পারিনি।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, কারোর চিন্তা সমাজের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, তবে ক্ষতি প্রতিহত করার উপায় কণ্ঠরোধ করা নয়। যখন ক্ষতিকর চিন্তা সমাজে প্রচারের প্রচেষ্টা হয়, তখন চিন্তাকে আরও উন্মুক্ত করাই তা আসল সমাধান। এই বই রাজনৈতিক ইতিহাস বা রাজনৈতিক ঘটনাবলী কিংবা সেনসেশনাল কিছু নয়। মনজুরুল আহসান খানের নিজস্ব ভাবনা থেকে বইটি লেখা। বইয়ে জাতীয়তাবাদ, ধর্ম, আমলাতন্ত্র, কমিউনিস্ট পার্টি সম্পর্কে লেখা হয়েছে।
বইয়ের আলোচনায় দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, লেখক মনজুরুল আহসান খানের মধ্যবিত্ত পরিবার কীভাবে মুক্তিযুদ্ধ এবং প্রগতিশীল আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিল তা এই বইয়ে তুলে ধরেছেন। দেশভাগ, দাঙ্গা, ভালো লাগা না লাগা সবকিছু মনজুরুল আহসান খান অকপটে বলেছেন। তিনি বাইরে এবং দলের ভেতরেও ছিলেন প্রতিবাদী। বঙ্গবন্ধু অথবা আওয়ামী লীগের সমালোচনা তিনি করেননি। কিন্তু ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের ফসল কীভাবে আওয়ামী লীগ আত্মীকরণ করেছে তা স্পষ্ট করেই বলেছেন। কৌশলের খেলায় বামদলগুলো কেন হেরে গেছে সেটি প্রকাশিত হয়েছে। স্বাধীনতাত্তোর স্বৈরশাসন, আমলাদের চরিত্র, পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্র চমৎকারভাবে উন্মোচন করেছেন তিনি। স্বল্প পরিসরে লেখা হলেও এটি গবেষণামূলক বই। বাম রাজনীতির সীমাবদ্ধতা, দুর্বলতা উঠে এসেছে এখানে। নতুন করে বাম রাজনীতির পুর্নগঠনের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে এ বই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আত্মজীবনীর মাধ্যমে আমরা বিমূর্তভাবে রাজনৈতিক ইতিহাস জানতে পারি। যে কোনো ঘটনার কুশীলব, কার কী ভূমিকা তা জানা যায় আত্মজীবনীমূলক বইগুলো থেকে। সে হিসেবে এই বইটির সামাজিক উপযোগিতা রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে সাধারণত কমিউনিস্টরা নেতৃত্ব না দিলেও ভিয়েতনাম এবং চীনের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে। আমাদের দেশে কেন পারল না? এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না থাকলেও কিছুটা অংশ তুলে ধরা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সমাজতন্ত্রের ধারণা, বাকশাল, জিয়াউর রহমানকে নিয়ে নানা কথা বলা হয়েছে যা দলিল হিসেবে কাজে লাগবে।
আদর্শ প্রকাশনীর প্রকাশক মাহবুবুর রহমান বলেন, লেখকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় প্রকাশকের নৈতিক সমর্থন থাকা দরকার। সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক মতাদর্শ সমাজে প্রচার হতে থাকলে ভিন্নমত সৃষ্টি হবে না।
মন্তব্য করুন