ভালোবাসা কী, কেন? কার জন্য, কাদের জন্য? কোথা থেকে আসে ভালোবাসা, কোথায় যায়? অনন্তের আবছায় বিলীন নাকি অনন্তের অতল থেকে ওঠে আসা কোনো অনুভব? অনাদির বিস্মৃতরাশির ভেতরে হৃদয়ের তানপুরাজুড়ে বেজে ওঠে যে গান সেকি ভালোবাসা? নাকি ছলছাতুরীর ছাতাতলে বিছিয়ে থাকা শুধুই কথামালায় কাচের চুড়ির ঝনঝন? শেষ নেই... শেষ নেই এমন বহু প্রশ্নের; তবু সব প্রশ্ন ভেদ করে ভালোবাসাবাসি, হাসাহাসি চিরপ্রেমের বৃত্তে কিংবা নিভৃতে খেলে যায় তার লেখা। কখনও খেলে নর-নারীর নিবিষ্ট নীড়ে, কখনও খেলে নিরাকার এক আকারের তীরে। যে ধরতে পারে সে পারে। যে পারে না, সে পারে না- অমর উক্তির কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিতে; পারে না পাড় ভেঙে অপারের সুন্দরের মুখোমুখি বসে 'ভালোবাসি, ভালোবাসি' বলতে। রবিবাবু কি পেরেছেন? কোনো ভালোবাসায় ছন্নছাড়া হয়েছেন জীবনভর? অমল প্রেমেই উদ্ভাসিত তাঁর জনমের তরী, তাঁর সেতারের তার, তাঁর নিদ্রা-আহার। যদিও খোলা চোখ বলে, নারীতে নোঙর ফেলে কবি ভেসেছেন যুগলপ্রেমের স্রোতে! তবে 'আজি সেই চির-দিবসের প্রেম অবসান লভিয়াছে/রাশি রাশি হয়ে তোমার পায়ের কাছে।/নিখিলের সুখ, নিখিলের দুখ, নিখিল প্রাণের প্রীতি।/একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে সকল প্রেমের স্মৃতি/সকল কালের সকল কবির গীতি।' এই 'একটি প্রেম' কী? মহাশূন্যের আঁধারে বসে যে ইশারা নিয়ত চিহ্নিত করে যাচ্ছেন মানব জীবনের জংশন রচনা, করে যাচ্ছেন ফুল আর ফলের উৎপাদন, প্রেম কি তবে সেই নিয়নবাতির পৃষ্ঠে মিশ্রিত নয়? নয় কি উদার আকাশের আবহমানে মিশে যাওয়া অমলিন আমলের উদাহরণ? কবি তো সেই প্রেমেরই জয়গান গেয়েছেন; ব্যক্ত করেছেন সহজ-মানুষ আর মনের-মানুষের সঙ্গে ভালোবেসে মিলিত হওয়ার অমলিন আকাঙ্ক্ষা।