- সাহিত্য ও সংস্কৃতি
- অ্যা রেড, রেড রোজ: রাবার্ট বার্নস
অ্যা রেড, রেড রোজ: রাবার্ট বার্নস
যখন পাথর গলবে রৌদ্র তাপে তখনও আমি তোমাকেই ভালোবাসব, হে প্রিয়

মুহূর্তের ভালোবাসার অনুভূতি কীভাবে বেঁচে থাকে অন্তহীন? এটা কি শুধুই আমাদের অন্তর্গত মস্তিস্কের অগণিত নিউরনের তীর ছুঁয়ে বয়ে চলা অপিটোসিনের অবিরাম খেলা? নাকি মূর্ত শরীর ও মনের সীমানা পেরিয়ে প্রকৃতিরাজ্যের নানা বিমূর্ত চিত্রকল্পে ভালোবাসা রয়ে যায় বহমান। কিন্তু মানুষ ও প্রকৃতির সবকিছুই তো সদা পরিবর্তনশীল। জন্ম আর মৃত্যুর চক্রে আবদ্ধ। তাহলে কি ভালোবাসারও শুরুর মতো শেষ আছে? মানুষই বা কেন তার দ্বন্দ্বে ভরা এই সীমিত জীবনে ভালোবাসার মতো শুদ্ধ, অসীম অনুভূতিকে পূর্ণ করে পেতে চায়। প্রকাশের প্রচেষ্টায় উদ্গ্রীব থাকে।
জগতের নানা উপকরণকে পাশ কাটিয়ে ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে মানুষ চিরকাল কবিতার কাছে হাত পেতেছে আর কবিতা ফিরে গেছে প্রকৃতির কাছে। বঙ্গতটের বুদ্ধদেবের চিল্ক্কায় সকাল কিংবা জীবনানন্দের পাখির নীড়ের মতো চোখের বনলতা সেন থেকে আটলান্টিক পাড়ের রবার্ট বার্নসের 'লাল, লাল গোলাপ' সবখানেই কবিরা প্রকৃতির দ্বারস্থ হয়েছেন ভালোবাসার রূপকে অকৃত্রিমভাবে প্রকাশ করতে।মানুষ স্বভাবগতভাবেই তার প্রিয় যে কোনো কিছুকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর, সতেজ আর আরাধ্য কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা করে। অপরিমেয় উপমা আর রূপক দিয়ে প্রকাশ করে। যেমনটা 'লাল, লাল গোলাপ' কবিতার প্রথম স্তবকে বার্নস বসন্ত প্রহরে ফোটা প্রথম লাল গোলাপের সঙ্গে তাঁর প্রিয়তমার তুলনা করেছেন। এই তুলনা কি শুধুই ক্ষণকালের। আমাদের প্রেমানুভূতিও কি দিনশেষে গোলাপের মতো রং বদলায়? যদি সত্যিই তাই হতো তাহলে এই রূপকের কোনো মহিমা, কোনো বাড়তি আবেদনই থাকত না। ফরাসি দার্শনিক দারিদা যেমনটা বলেছেন, ভালোবাস তবে ব্যক্তিকে নয়, তার ব্যক্তিত্বকে। মানুষ চলে যায়, মানবিকতা রয়ে যায়। ঠিক তেমনি গোলাপ হয়তো শুকিয়ে যায় কিন্তু তার সে সৌন্দর্যটুকু আমাদের মনে গভীর জলছাপ রেখে যায়। ভালোবাসা যেন গোলাপের সৌন্দর্যের মতো অপরিমেয়।
মানুষ ভালোভাবেই জানে জগতের কোনো কিছুই স্থায়ী নয়। তারপরও তার প্রেমবস্তুকে সে অসীমতায় নিতে চায়, অমর রাখতে চায়। বার্নস ঠিক এই ভাবটাকে কাব্যময় করে বলেন, 'যখন সাগর শুকাবে, হে প্রিয়, /যখন পাথর গলবে রৌদ্র তাপে;/তখনও আমি তোমাকেই ভালোবাসবো, হে প্রিয়।'
মন্তব্য করুন