অপশক্তির বিরুদ্ধে পাকিস্তান আমলে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের সমান্তরালে বঙ্গবন্ধুর ধারাবাহিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রম জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। আজও দেশের প্রতিটি প্রান্তরে আত্মশক্তিনির্ভর সামাজিক চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করে দেশের উদাসীন হয়ে পড়া শুভশক্তিকে জাগ্রত করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে আগের মতো আমাদের অবলম্বন হতে পারে রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-লালনসহ কবি-সাহিত্যিকের অমর সৃষ্টি। তবেই নিশ্চিত হবে মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশিত ধারার বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পুনরুদ্ধার।

গতকাল শনিবার ৪১তম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানের ঘোষণাপত্রে এসব কথা বলেন জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সহসভাপতি লাইসা আহমদ লিসা। এদিন সন্ধ্যায় রাজধানীর সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে এই সমাপনী অনুষ্ঠান হয়।

অনুষ্ঠানে পরিষদের নির্বাহী সভাপতি ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে রবীন্দ্র পদক ও গুণী সম্মাননা প্রদান করা হয়।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বরেণ্য শিক্ষাবিদ অনুপম সেন গুণীজন সম্মাননা পদক তুলে দেন। পদকপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী সৈয়দ হাসান ইমাম এবং শিক্ষাবিদ সংগীতজ্ঞ অধ্যাপক আ  ব ম নুরুল আনোয়ারের পক্ষ থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেন তাঁদের পরিবারের সদস্য সঙ্গীতা ইমাম ও প্রমা আনোয়ার। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের চার সহসভাপতি– মফিদুল হক, ডা. সারওয়ার আলী, লিলি ইসলাম ও বুলবুল ইসলাম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অনুপম সেন বলেন, রবীন্দ্রনাথ বিশ্বকবি। তিনি জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পুরো সময়টা ব্রিটিশ ভারতে কাটিয়েছেন। এই যে উপমহাদেশ স্বাধীন হলো, তা দেখেননি তিনি। কিন্তু তিনি বাঙালিকে, ভারতবাসীকে, এমনকি বিশ্ববাসীকে একটা নতুন চেতনার স্তরে নিয়ে গিয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে ড. আতিউর রহমান বলেন, যদি আমরা শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চা করতে পারি, যে রকমটি স্বপ্ন রবীন্দ্রনাথ দেখতেন; আমাদের জাতির পিতাও যে চর্চা করার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন সেরকমটি যদি করতে পারি, তাহলে মানুষের মননে, মানুষের চিন্তায় সেই শুভশক্তির বিকাশ এখনও আমরা করতে পারব।

কথন পর্ব শেষ হলে প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সংগীতানুষ্ঠান, আবৃত্তি ও নৃত্যানুষ্ঠান। এ সময় সংগীত পরিবেশ করেন খন্দকার খায়রুজ্জামান কাইয়ুম, মনুসরা বেগম, রোকাইয়া হাসিনা, অসীম দত্ত, মহিউজ্জামান চৌধুরী, ঝুমা খন্দকার, সুমা রানী রায়, পার্থ প্রতিম রায়, অদিতি মহসিন, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, হেনরি তালুকদার, অনিমা রায়, রানা সিনহা, আব্দুল্লাহ আল মামুন, তাহমিদ ওয়াসিফ রিভু, নুরে আলম হীরা, আজিজুর রহমান তুহিন, সম্পা ভট্টাচার্য, বুলবুল ইসলাম, এটিএম জাহাঙ্গীর, তানিয়া মান্নান, বীথি পান্ডে, সঞ্চিতা রাখী, মহুয়া মঞ্জুরী সুনন্দা, অনিমেষ বিজন চৌধুরী, প্রত্যাশা পাল, পূরবী দে সিমন্তী এবং মৃদুল চক্রবর্তী। পরে তামান্না রহমানের নৃত্য পরিচালনায় নৃত্যম নৃত্যশীলন কেন্দ্র ‘বিদায় অভিশাপ’ কবিতার নৃত্য রূপায়ণ পরিবেশন করে। সর্বশেষে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

এর আগে সকাল ৯টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। সকাল ১০টায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে নির্বাহী সভাপতি ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সারাদেশ থেকে আসা পরিষদের বিভিন্ন শাখার প্রতিনিধিরা সংগঠনের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।