- সাহিত্য ও সংস্কৃতি
- মেয়াদ প্রায় শেষ, কাজ মাত্র ২৫ ভাগ
মেয়াদ প্রায় শেষ, কাজ মাত্র ২৫ ভাগ

‘ইটের খোয়া নয়, এ যেন চুলার মাটি। রাস্তায় ১ নম্বর ইটের খোয়া দেয় নাই। রমজানের ঈদের আগে দুই ট্রাক চুলার মাটি (খোয়া) হালাইয়া গ্যাছে, হেরপর আর ঠিকাদারের হদিস নাই, দুই মাস ধইর্যা লাপাত্তা তিনি।’
জেলার বাউফল উপজেলার বগা-কাছিপাড়া সড়কের বৌলতলী সেতু বাজার এলাকার রাস্তার নির্মাণকাজে অনিয়ম ও দীর্ঘ পাঁচ বছরেও কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন বৌলতলী গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব নূর ইসলাম সিকদার।
এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার বগা-কাছিপাড়া সড়কের বৌলতলী বাজার সেতু থেকে ৩ কিলোমিটার রাস্তা ও তিনটি কালভার্ট নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়। বরিশালের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোহিনুর অ্যান্ড রুটস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড এ কাজের ঠিকাদার হিসেবে নিযুক্ত হয়। এ কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ৩৩ লাখ ৮ হাজার ৫০০ টাকা এবং কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল। চলতি বছরের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। কিন্তু ঠিকাদারের খামখেয়ালিপনা ও স্বেচ্ছাচারিতায় দীর্ঘ পাঁচ বছরেও কাজ সম্পন্ন হয়নি এবং আগামী ৩০ জুনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা নিয়েও এলাকাবাসীর শঙ্কা রয়েছে। এ সড়কটি দিয়ে কনকদিয়া, কালিশুরী, কাছিপাড়াসহ তিন ইউনিয়নের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এ কাজের ঠিকাদার মিজানুর রহমান মিল্টন শুরু থেকেই কাজ করা নিয়ে গাফিলতি করেন এবং গত পাঁচ বছরে মাত্র ২৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেছেন। অথচ এরই মধ্যে ৯৪ লাখ টাকা অগ্রিম বিল উত্তোলন করে নিয়েছেন তিনি। নিম্নমানের ইট ও খোয়া ব্যবহারসহ কাজের মান নিয়ে রয়েছে স্থানীয়দের বিস্তর অভিযোগ। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকার পর ঈদের আগে মাত্র অর্ধ কিলোমিটার সড়কে খোয়া ফেলেন ঠিকাদার। এর পর দুই মাস ধরে লাপাত্তা ঠিকাদার মিল্টন। যাতায়াতের একমাত্র সড়কটির বেহাল দশায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসি। এ সড়কটি দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনাও ঘটেছে। এতে গুরুতর জখম হন নারী-শিশুসহ এলাকার মানুষ। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের চলাচলে ভীষণ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
পশ্চিম বীরপাশা গ্রামের মনির হোসেন হাওলাদার (৫২) বলেন, রাস্তার কাজ ফেলে রাখায় তাঁদের ভীষণ ভোগান্তি হচ্ছে। এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে তাঁর দুই ছেলের হাত ভেঙেছে। এ ছাড়া অটোবাইক দুর্ঘটনায় তাঁর চাচা ও ফুপা হাত-পা ভেঙে দীর্ঘদিন ঘরে পড়েছিলেন।
বীরপাশা গ্রামের মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, রাস্তা ও কালভার্টের যেটুকু কাজ হয়েছে, তা খুবই নিম্নমানের। ঠিকাদারকে কিছু বললে তিনি ক্ষমতার দাপট দেখান।
এ ব্যাপারে স্থানীয় কনকদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদার বলেন, ঠিকাদার মিল্টন এর আগেও দুটি প্রকল্পের কাজ নিয়ে গাফিলতি করেছেন এবং দীর্ঘদিন ফেলেও রেখেছিলেন। এর পরও তাঁকে ফের কাজ দেওয়া হলো কেন? তাঁকে কাজ দেওয়ার কারণে এ জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।
বরিশাল কোহিনুর অ্যান্ড রুটস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ঠিকাদার মিজানুর রহমান মিল্টন বলেন, করোনার মহামারি, আম্ফানসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে দেরি হয়েছে। শিগগিরই এ কাজ সম্পন্ন করবেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ লতিফ হোসেন জানান, এলাকার মানুষের সুবিধার্থে সড়কটির কাজ দ্রুত শেষ করা হবে এবং একই সঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন