এগিয়ে চলুন ধীর পদক্ষেপে

মারিয়া বোর্হেস ছবি : অনলাইন
মারিয়া বোর্হেস
প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ | ১৬:৩২ | আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ | ২২:৩২
মারিয়া বোর্হেস। প্রতিশ্রুতিশীল কৃষ্ণাঙ্গ মডেল। যুদ্ধবিধ্বস্ত অ্যাঙ্গোলার রাজধানী লুয়ান্ডায় জন্ম নেওয়া ও রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের মধ্যে বেড়ে ওঠা এই মডেলের যাত্রা শুরু ২০১০ সালে। পৃথিবী দাপিয়ে বেড়ানো এই কৃষ্ণকলির বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণার কথা তুলে এনেছেনে মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ
আমার জন্ম আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ অ্যাঙ্গোলার রাজধানী লুয়ান্ডায়; ২৮ অক্টোবর ১৯৯২ সালে। দেশটির রক্ষক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের মধ্যে ভাইবোনের সঙ্গে বেড়ে ওঠা আমার। ২০১০ সালে ইন্টারন্যাশনাল মডেল ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ ‘এলিট মডেল ম্যানেজমেন্ট’ আয়োজিত বার্ষিক ফ্যাশন ইভেন্ট ‘এলিট মডেল লুক’-এর অ্যাঙ্গোলিয়ান এডিশনে অংশ নিয়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করি আমি। বড্ড মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা। সে যাক, তো এভাবেই ফ্যাশন মডেলিংয়ের রঙিন ভুবনে হাঁটতে শুরু করা। পরের বছর ‘ফোর্ড সুপারমডেল অ্যাঙ্গোলা ২০১১’-এর বিজয়ীর মুকুট ওঠে মাথায়।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দ্যুতি
২০১২ সালে বিখ্যাত মডেল এজেন্সি ‘সুপ্রিম এজেন্সি’র সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পা রাখি। অনেকে মনে করেন, এর মাধ্যমেই আমার প্রতিভার দ্যুতি ছড়াতে থাকে। আমার উচ্চতা ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি, কালো চোখ ও কালো চুলের অধিকারী আমি সবসময় নিজেকে নিয়ে গর্ব করি। ইতোমধ্যে বিশ্ববিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনারদের শোতে প্রায় নিয়মিতই অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা হলেও ক্যারিয়ারে ক্ষেত্রে আমি তাড়াহুড়ায় মোটেই বিশ্বাসী নয়। বরং ধীর পদক্ষেপে একটার পর একটা বাধা পেরিয়ে যাওয়াকেই মূল মন্ত্র মনে করি।
সময় পেলেই ছুটি জন্মশহরে
পেশার প্রয়োজনের পৃথিবীর সব নামিদামি শহরে ঘুরে বেড়াতে হলেও সময় পেলেই ছুটে যাই জন্মশহরে, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে কাটাই আবেগঘন মুহূর্ত। যদিও শুরুটা মোটেও সহজ ছিল না আমার জন্য। বাবা ধরেই নিয়েছিলেন এ পথে পাড়ি জমাতে গিয়ে মেয়েটি হয়তো অসুস্থ বিশ্বায়নের শিকার হয়ে যাবে! হয়তো পরিণত হবে মানব পাচারকারীদের টার্গেটে। কিন্তু নিজের দৃঢ়তা ও ব্যক্তিত্ব দিয়ে সেই সব প্রাথমিক বিপদসংকুল পথ বেশ ভালোভাবেই সামলে এসেছি আমি।
পথ চলাতেই আনন্দ...
ইতোমধ্যে বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন ম্যাগাজিন ‘ভোগ’-এর প্রচ্ছদে জায়গা করে নিয়েছি আমি। আমার মুখ ও অভিব্যক্তির ছবি প্রকাশ পেয়েছে সিআর ফ্যাশন বুক, দুজু্যঁ, হারপার’স বাজার, আই-ডি, ইন্টারভিউ, লাভ, ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, মেরি ক্লেয়ার, নুমেরো, ট্যাঙ্ক, দ্য ওয়ানস টু ওয়াচ, ভ্যানিটি ফেয়ার, ভোগ ইউকে ও ডব্লিউর মতো বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন ম্যাগাজিনে। বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েছি সি অ্যান্ড এ, গিভেন্সি, এইচ অ্যান্ড এম, অস্কার দে লা রেন্টা ও টমি হিলফিগারের ফ্যাশন প্রোডাক্ট কোম্পানিগুলোর। অন্যদিকে ভিক্টোরিয়া’স সিক্রেট ফ্যাশন শোর আসরে থাকে সরব ক্যাটওয়াক। আমার সাফল্যের মুকুটে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে অসংখ্য পালক। তবে বড্ড মনে পড়ে ফোর্বস আফ্রিকা ম্যাগাজিনের ২০১৩ সালের টপ মডেল তালিকায় জায়গা করে নেওয়ার কথা।
সহজ-স্বাভাবিক জীবনের স্বপ্ন
অবসরে বন্ধুদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টায় সময় কাটাতে ভালোবাসি। আর ব্যক্তিগতভাবে খুব সহজ-স্বাভাবিক জীবনের স্বপ্ন দেখি। চেষ্টা করি হাসিমুখ ধরে রাখার। যেতে চাই সেই চূড়ায় যে চূড়া কৃষ্ণাঙ্গ মডেল হিসেবে স্পর্শ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে পূর্বসূরি নাওমি ক্যাম্পবেল, বেভারলি জনসন, বেভারলি পিলে, টায়রা ব্যাঙ্কসদের। অনেকের মতে, সময়ের সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল কৃষষ্ণাঙ্গ মডেলদের অন্যতম আমি। এতেই আমার গর্ব!