প্রেরণা
ভবিষ্যতের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠুন

আর্থার সি ক্লার্ক 3 ছবি : অনলাইন
আর্থার সি ক্লার্ক
প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৪ | ০৮:৪০
একজন সায়েন্স ফিকশন লেখক হিসেবে আপনাকে অবশ্যই ভবিষ্যতের ব্যাপারে আগ্রহী হতে হবে এবং এই উপলব্ধি করতে হবে যে ভবিষ্যৎ হয়ে উঠবে বর্তমানের চেয়ে অপেক্ষাকৃত আলাদা ও আশাব্যঞ্জক। যদিও আমি জানি, অনেক সায়েন্স ফিকশনই নৈরাশ্যবাদী, যেমন– ‘১৯৮৪’-এর কথাই ধরা যাক। এর কারণ হলো, প্রশান্ত ও শান্তিময় ভবিষ্যতের চেয়ে বরং কদর্যপূর্ণ ভবিষ্যৎ ঘিরে সায়েন্স ফিকশন লেখাটা অপেক্ষাকৃত সহজ ও রোমাঞ্চকর!
ভবিষ্যতের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠার জন্য সায়েন্সের কোনো ডিগ্রি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই ঠিকই, সায়েন্সটা বোঝা দরকার; সায়েন্স এবং এর সম্ভাব্যতা ও অসম্ভাব্যতা সম্পর্কে উপলব্ধি থাকা দরকার। তা না হলে আপনার লেখাটা স্রেফ ফ্যান্টাসিই হয়ে উঠবে; সায়েন্স ফিকশন নয়। ফ্যান্টাসি খারাপ কিছু নয়, যেমন– ‘লর্ড অব দ্য রিংস’ এখনও আমার পছন্দের বই। তবে ফ্যান্টাসির সঙ্গে সায়েন্স ফিকশনের একটা স্বতন্ত্র পার্থক্য রয়েছে। যদিও সেই পার্থক্যটা যে ঠিক কোথায়, তা সুনির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারবে না!
উদারতার পরিচয়
ব্যক্তিজীবনে যেমন উদার হওয়া উচিত আমাদের, তেমনি লেখকদেরও হতে হবে উদার। যদিও এই উদারতা কিংবা লেখালেখির কোনো গোপন কৌশল রয়েছে বলে মনে হয় না আমার। বরং প্রত্যেক লেখকেরই নিজ নিজ কৌশল রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে পাঠক হিসেবে আপনাকে হতে হবে উদার। তাহলেই অগুনতি অসাধারণ তথ্যের সমাধানমূলক সমাহার হাজির হবে আপনার সামনে। আর লেখার ওজনটাকেও আপনাকে উপলব্ধি করতে হবে; তা না হলে এ খাটুনি ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। অতঃপর যদি মনে হয় আপনার লিখতে চাওয়া সায়েন্স ফিকশনটি অন্যগুলোর চেয়ে ভালো হবে, তবেই লিখুন।
নৈতিকতার জায়গা থাকা উচিত
ব্যক্তিগতভাবে নন-ফিকশনের চেয়ে ফিকশনই আমাকে বেশি টানে। এ ক্ষেত্রে আপনার পক্ষে একান্তই নিজস্ব একটি মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে ফেলা সম্ভব। তবে আমি মনে করি, প্রতিটি বইয়ের ভেতরেই নৈতিকতার জায়গা থাকা উচিত। আমি বলি, যা লিখছি সে সম্পর্কে যথেষ্ট সুনিশ্চিত না হয়ে পরিবেশ ঘোলাটে করার অধিকার কোনো লেখকের নেই।
ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও আনন্দের স্মৃতি
ইমাজিনেশন আর সায়েন্স ফিকশন নানা কাঠামোতে সুদীর্ঘকাল ধরেই জনপ্রিয় ছিল। নিঃসন্দেহে জুলস ভার্ন এ ক্ষেত্রে কিংবদন্তি। এরপর ইংল্যান্ডের এইচজি ওয়েলসসহ অনেকেই প্রচুর পরিমাণে সায়েন্স ফিকশন লিখেছেন। তবে ওয়েলসের লেখাগুলো ছাড়া ঊনবিংশ শতকের বেশির ভাগ সায়েন্স ফিকশনই কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। শুরুতে ১৯৩০ দশকের দিকে ‘ওয়ান্ডার স্টোরিজ’ ও ‘অ্যামাজিং স্টোরিজ’ এবং এরপর ‘ওয়ান্ডার স্টোরিজ’-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটরের লেখা ‘দ্য কুয়েস্ট অব সাকসেস’ পড়ে আমি প্রভাবিত হই। বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৩১ সালে; এর রচয়িতা ডেভিড লেজারের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ আমার জন্য আনন্দের স্মৃতি।
বাস্তবে রূপান্তর
সায়েন্স ফিকশন রচয়িতাদের অনেকেই দ্রষ্টা হিসেবে অভিহিত করেন। আমি বলি, হ্যাঁ, দ্রষ্টাই বটে; তবে তা দুর্ঘটনাক্রমে! কেননা, সায়েন্স ফিকশনে দেখানো ভবিষ্যদ্বাণীর খুব অল্পসংখ্যকই বাস্তবে রূপান্তর হতে দেখা গেছে। ঘটনাচক্রে আমার কিছু লেখার ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটেছে ঠিকই; তবে ভবিষ্যৎ যে আদতে কী রকম হবে, সে সম্পর্কে নিশ্চিত ভবিষ্যদ্বাণী করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়।
জীবনের আলো
সব ধরনের সম্ভাব্যতা, একই সঙ্গে সব ধরনের অসম্ভাব্যতাকে নিয়ে কাজ করেছে সায়েন্স ফিকশন। আর তা করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই সফল হয়েছি আমরা; আবার ব্যর্থতাও কম নয় আমাদের। তবে সেটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। বিষয় হলো, সায়েন্স ফিকশন অনুমানযোগ্য হয়ে না ওঠা। কী হওয়া উচিত– সেটি নয়; বরং কী হতে পারে, সেটিতে আলো ফেলাই এটির কাজ। জীবনটাও তেমনি। তাতে আলো ফেলতে হবে! n