বিজ্ঞানমেলা ও বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করে খালি হাতে ফিরেছে শিক্ষার্থীরা। দায়সারা আয়োজন ও অব্যবস্থাপনার কারণে কোনো পুরস্কার মেলেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনা ঘটেছে পূর্বধলা উপজেলায়।

জানা গেছে, ৪৪তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে পূর্বধলা উপজেলা প্রশাসন গত ৯ ও ১০ জানুয়ারি পরিষদ চত্বরে দুই দিনব্যাপী বিজ্ঞানমেলা এবং বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড আয়োজন করে। এতে অংশ নেয় উপজেলার কলেজ ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ১৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু মেলার প্রথম দিন থেকেই কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি করে ২৪ সদস্যের উপজেলা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উদযাপন কমিটি গঠনের কথা থাকলেও কমিটিতে কাদের রাখা হয়েছে, সেটি সম্পর্কে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাউকে কিছু জানানো হয়নি। মেলা উদযাপন বিষয়ে প্রস্তুতি সভাও করা হয়নি। তারপরও প্রথম দিন সকাল থেকেই উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা মেলায় আসে। কিন্তু মেলার আয়োজন ছিল একেবারেই দায়সারা। বিকেল ৪টা পর্যন্ত মেলায় অবস্থান করলেও কর্তৃপক্ষের কেউ তাদের খোঁজ নেয়নি। মেলায় বিতর্ক, বিজ্ঞানভিত্তিক উপস্থিত বক্তৃতা, সিম্পোজিয়াম আয়োজনের নির্দেশনা থাকলেও তা করা হয়নি। এ মেলায় সহযোগিতা করে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর।

শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের তৈরি প্রজেক্ট সংরক্ষণের জন্য মেলায় কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বিপাকে পড়ে তারা। বাধ্য হয়ে তৈরি প্রজেক্ট গুটিয়ে বাড়ি নিয়ে যায়। মেলার দ্বিতীয় দিন আবার প্রজেক্ট নিয়ে এসে দেখে অনেক স্টলেই প্রতিষ্ঠানের নামে টানানো ব্যানার কে বা কারা নিয়ে গেছে। তারা এ বিষয়ে কারও কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা বা সারাদিনেও কর্তৃপক্ষের কাউকে পায়নি।

কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান জানান, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উদযাপন সংক্রান্ত নিয়মাবলি অনুযায়ী মেলার দ্বিতীয় দিনে শিক্ষার্থীদের নিয়ে 'জাতীয় বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড' হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতি নিয়ে এলেও অংশ নিতে পারেনি। এই প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীরা জেলা বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়ার কথা। এই প্রতিযোগিতা বাস্তায়নের জন্য উপকমিটি গঠনের কথা থাকলেও তা কেউ জানেন না।

শিক্ষকদের অভিযোগ, মেলায় অংশগ্রহণকারীদের জানানো হয়, দ্বিতীয় দিন বেলা ২টায় ফলাফল ঘোষণা ও বিজয়ীসহ অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হবে। কিন্তু বেলা ৩টা পর্যন্ত মেলায় কর্তৃপক্ষের কাউকে না পেয়ে পুরস্কার ছাড়াই ফিরে যেতে বাধ্য হয় অংশগ্রহণকারীরা। পরে দায়সারাভাবে অনুষ্ঠান শেষ করা হয়।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি পূর্বধলা উপজেলা শাখার সভাপতি ও আগিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বদরুজ্জামান বলেন, মেলায় শিক্ষার্থীদের জন্য বাজেট থাকে। অথচ একটি চকলেট পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। মেলার আয়োজন একেবারেই দায়সারা। পুরস্কার তো দূরের কথা, শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে মেলা থেকে খালি হাতে ফিরেছে।

বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পূর্বধলা জগৎমণি সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) নূরে আলম সিদ্দিকী। তাঁর ভাষ্য, প্রথম দিনের আয়োজন ভালোই ছিল। তবে সমাপনী দিনে আয়োজকদের অনুষ্ঠানস্থলে যেতে বিলম্ব হওয়ায় অনেকেই চলে গেছে।

পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উদযাপন কমিটির সভাপতি শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স বলেন, অনুষ্ঠানে কোনো ধরনের গাফিলতি হয়নি। প্রথম দিন নেত্রকোনায় ছিলেন তিনি। সমাপনী দিনে অনেকেই অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই চলে গেছে। সরকারি প্রোগ্রাম শেষ না করে চলে যাওয়া শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল।