- সাহস
- শূন্য থেকেই শুরু...
শূন্য থেকেই শুরু...
![ডেভিড লিঞ্চ, [২০ জানুয়ারি ১৯৪৬; যুক্তরাষ্ট্র]](https://samakal.com/uploads/2023/02/online/photos/Untitled-1-samakal-63e7becd8314b.gif)
ডেভিড লিঞ্চ, [২০ জানুয়ারি ১৯৪৬; যুক্তরাষ্ট্র]
ডেভিড লিঞ্চ। আমেরিকান মাস্টার ফিল্মমেকার। 'টুইন পিকস্', 'ইরেজারহেড' ও 'দ্য এলিফ্যান্ট ম্যান'-এর মতো মাস্টারপিস সিনেমাগুলোর নির্মাতা। ফিল্মমেকিংয়ে দীর্ঘ ক্যারিয়ার কাটানো এই কিংবদন্তির বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণামূলক কথা তুলে এনেছেন মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ
আপনি উপলব্ধিই করতে পারবেন না, কখন আপনার অবচেতন মন থেকে ভালো একটা আইডিয়া বেরিয়ে আসবে। আইডিয়া প্রতিনিয়ত ঘুরে বেড়ায়। এই ভাসমান আইডিয়াগুলো ধরতে আপনিও বেরিয়ে পড়ূন। ঘুরুন আইডিয়ার খোঁজে। একসময় খুবই গভীরে গিয়ে আপনি সেটাকে ধরতে পারবেন। তবে ভাবনাটাও হতে হবে গভীর স্তরের। এতে আপনি সুখ আর রোমাঞ্চ খুঁজে পাবেন। আইডিয়াও হয়ে যাবে তখন অনেক সহজ। এতে অনেক বেহায়াপনাও থাকতে পারে। এমন বেহায়া আইডিয়া আমিও পেয়েছি শুরুতে। তবে এ কাজে অনেক সুখ আছে। কেননা, ভাবনাটা যে একান্তই আপনার!
ভিত মজবুত হলে কাজ হবে উপভোগ্য
যে কাজই করুন না কেন, সে কাজ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকলে কাজের ভেতর ডুব মেরে সর্বোচ্চ কাজটা বের করে আনতে পারবেন না। ধারণার পাশাপাশি আত্মশক্তিতে বলিয়ান হলে আপনার কাছে এ জীবন যন্ত্রণা নয়, বরং যে কোনো মজার খেলার চাইতে উপভোগ্য হয়ে উঠবে। চারপাশের মানুষ আপনার চাপ বাড়িয়ে তুলতে চাইবে। তাদের কাঁধে হাত রেখে বলুন, 'তবে এক কাপ চা হয়ে যাক'! মনের শক্তি বাড়িয়ে তোলার মাধ্যমে, আনন্দ নিয়ে কাজ করুন; সফল আপনি হবেনই।
সৃষ্টিশীল কাজে থাকা চাই ইতিবাচক মানসিকতা
প্রতিটি গল্পের মধ্যে রয়েছে দ্বন্দ্ব, বৈপরিত্য, উত্থান, পতন, জন্ম, মৃত্যু কিংবা এর চাইতেও বেশি পরিমাণ কষ্ট। কিন্তু আমরা বলব, একজন শিল্পীর কষ্টের দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য কষ্ট দেখানোর প্রয়োজন নেই। আপনাকে মানুষের মানসিক অবস্থা এবং তার কষ্ট সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। অভিজ্ঞতা আপনার কাজের ক্ষেত্রে সাফল্য বয়ে আনবে। শিল্পী স্বয়ং যদি কষ্টের মাঝে ডুবে যান, তবে আপনার মূল গল্পটি রোমান্টিক হয়ে ওঠাটাই স্বাভাবিক।
ধারণার ধাক্কা
আপনার পরিবেশন বা উপস্থাপনার ধরনটা যদি আলাদা না হয়, আপনি এ দিয়ে যদি দর্শককে ধাক্কা না দিতে পারেন, তবে গড়ে হরিবল হয়ে যাবে আপনার কাজ। এখানে সব সময় নানা চক্রান্তের মুখোমুখি হতে হবে আপনাকে। আপনার ধারণা বা আইডিয়ার পেছনেও একটা গল্প নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু গল্পটাকে বিমূর্ত করে তুলতে পরিবশনাটাই আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া যুক্তিযুক্ত। সিনেমা তো আসলেই একধরনের বিমূর্ততাই। ফলে আপনি আপনার কাজের প্রেমে পড়ূন, নিজের প্রেমে পড়ূন। নিজের আইডিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞ হোন; তবেই কাজ আপনাকে প্রেমিকার মতো ভালো একটা ফল হাতে ধরিয়ে দিতে পারবে।
নিজেকে নয়, সময়কে ধরুন
লেখায় যেমন গল্প উঠে আসে, ঠিক তেমন করে ক্যামেরায়ও গল্প উঠে আসে। আপনার অক্ষরগুলো যেমন কথা বলে, ঠিক তেমন করে আপনার ক্যামেরার মুভিংয়েও গল্প ভেসে ওঠে। ফলে নিজের সত্যিকার কাজের প্রতিটি ধাপকে গল্পের অক্ষরের মতো মনে করুন। আপনার কাজটি অবশ্যই সৃষ্টিশীলতার শরীর বেয়ে উঠছে। তাই এ ক্ষেত্রে কেউ যেন হস্তক্ষেপ না করে- সেটি মাথায় রাখুন। তবে অগ্রজদের আগ্রহকে আপনার স্বাধীনতার হরণ বলেও মনে করার কিছু নেই।
ধারণা মিলে যেতে পারে
একই পথের অসংখ্য যাত্রীর সঙ্গে হাঁটছেন আপনি। তাই যে কোনো একজনের কাজের সঙ্গে নিজের কাজটি মিলে যেতেই পারে। আপনার মতো করে আরেকজন ফিল্মমেকারও তার সিনেমায় একটা কৌতুক উপস্থাপন করতে পারে। আপনার জোকারটার সঙ্গে তার জোকারটাও মিলে যেতে পারে। তাই বলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। তবে আপনার কাজে সংগতি থাকলে ঠিকই মেকিংয়ের মুনশিয়ানা বেরিয়ে আসবে। আপনি বরং রিহার্সাল ও নিজের অভিনেতাদের নিজস্বতা বজায় রাখতে দিন। তাদের অনুপ্রাণিত করুন। এই নিজস্বতাই আপনাকে বড় ধরনের সাহায্য করবে। আপনাকেও অনুপ্রাণিত করবে।
প্রভাব ও প্রেরণার দেয়াল
জানেন তো, প্রভাব ও অনুপ্রেরণার মধ্যে বড় ধরনের একটা পার্থক্য আছে। আপনি আপনার শহরের কিংবা আশপাশের কোনো চিত্রশিল্পীর কাজ দেখেও অনুপ্রাণিত হতে পারেন। আপনার শহরটা থেকেও উস্কানি নিয়ে প্রভাবিত হতে পারেন কোনো গল্পে। নিজ মেজাজের হাত ধরে বাতাসে ছড়িয়ে দিতে পারেন আপনার অনুভূতি, শহরের অবক্ষয়, বাতুলতা, দুর্নীতি, আতঙ্ক ইত্যাদি উপাদান। এসবের ভেতর হেঁটে, ক্যামেরার আগেই আপনি একটি সিনেমা দেখতে পারেন নিজের চোখে। পরে সেটিই তুলে আনুন ক্যামেরায়।
সুবিস্তৃত ভাষ্য
ক্যামেরায় ধরা আপনার প্রতিটি ঘটনাই কিন্তু সমাজকে বয়ে নিয়ে যায় না। এটি সমাজের কোনো সুস্থ কিংবা অসুস্থ মানুষের আচরণও হতে পারে আপনার উপাদান। তাই একটি কাজ বা একটি সিনেমা যে সমাজকে টেনে নিয়ে যাবে এবং সমাজটির প্রতিচ্ছবি হয়ে টিকে থাকবে- এ ভাবনা থেকে সিনেমা বানানোর দরকার নেই। সমাজকে সমাজের জায়গায় রেখে, আপনি নিজের সৃজনশীলতা দিয়ে সিনেমা বানিয়ে যান। একজন নারী, অবহেলিত মানুষ কিংবা সাংবাদিক চরিত্রকে আপনি যেভাবে উপস্থাপন করতে চান, ঠিক সেভাবেই উপস্থাপন করে যান সিনেমায়।
মন্তব্য করুন