- সাহস
- সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়া তরুণ
গ্লোবাল আইটি চ্যালেঞ্জ ফর ইয়ং উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিজ ২০২২
সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়া তরুণ

বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মালয়েশিয়া, চীন, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মঙ্গোলিয়া, রিপাবলিক অব কোরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভিয়েতনামসহ মোট ১৬ দেশের প্রতিযোগী এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। বাংলাদেশ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মিজানুরসহ ১৭ জন। সবাইকে ছাড়িয়ে শেষ হাসি হেসেছেন মিজানুর।
মো. মিজানুর রহমান। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্মের এ শিক্ষার্থী বিশেষভাবে তরুণদের নিয়ে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল আইটি চ্যালেঞ্জ ফর ইয়ং উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিজ বা জিআইটিসি ২০২২-এ প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েই ই-লাইফম্যাপ বিভাগে ভিজ্যুয়াল সেক্টরে প্রথম এবং ই-টুল পাওয়ার পয়েন্ট বিভাগে তৃতীয় স্থান অর্জন করেন। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মালয়েশিয়া, চীন, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মঙ্গোলিয়া, রিপাবলিক অব কোরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভিয়েতনামসহ মোট ১৬ দেশের প্রতিযোগী এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। বাংলাদেশ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মিজানুরসহ ১৭ জন। সবাইকে ছাড়িয়ে শেষ হাসি হেসেছেন মিজানুর।
জিআইটিসি ২০২২
গ্লোবাল আইটি চ্যালেঞ্জ ফর ইয়ং উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিজ বা জিআইটিসি ২০২২-এর আয়োজক দেশ ছিল চীন। কিন্তু দেশটিতে হঠাৎ করোনা প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় স্থগিত হয়ে যায় সে আয়োজন। বিকল্প উপায় হিসেবে তখন জুম অ্যাপের শরণাপন্ন হন আয়োজকরা। সে ক্ষেত্রে এ প্রতিযোগিতায় আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় ‘গ্লোবাল টক’। এর মাধ্যমে প্রতিযোগীরা নিজ দেশে থেকেই অন্য দেশের প্রতিযোগীদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলা, আড্ডা দেওয়ার সুযোগ পান। জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় যাঁরা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হন, তাঁরাই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্লোবাল আইটি চ্যালেঞ্জ ফর ইয়ুথ উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিজে (জিআইটিসি) অংশ নিতে পারেন। মিজানুর ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আরও ১৬ জন।
প্রস্তুতি শুরুর কথা
কিন্ডারগার্টেনে পড়ার সময় ফুফাতো ভাইয়ের কম্পিউটারে গেমস খেলতেন মিজানুর। তাঁর কম্পিউটারপ্রীতির কথা পরিবারের সবার জানা। সবসময় নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করতেন। কেবল ফুফাতো ভাইয়েরই নয়, চাচার কম্পিউটারের দোকান ছিল বাজারে; কম্পিউটারের কাজ শেখানো হলেও নিয়মিত সেখানে গিয়ে বসে থাকতেন মিজান। দেখে দেখে শেখার চেষ্টা করতেন। একবার কোনো কিছু দেখলেই হুবহু মনে রাখতে পারতেন তিনি। এভাবে ব্যক্তিগত কম্পিউটার ছাড়াই কম্পিউটারের সঙ্গে সম্পর্কিত বেশিরভাগ কাজ দেখে শিখেছেন তিনি। পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠার পর মিজানুরের নিজের একটি কম্পিউটার হলো। তারপর নিজেকে নতুন দুনিয়ার বাসিন্দা মনে করে শিখতে থাকেন নানা কিছু। তবে এর মাঝে একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনার মুখোমুখি হন মিজানুর। তৃতীয় শ্রেণিতে থাকাকালীন ক্রিকেট খেলতে গিয়ে ডান চোখে একবার প্রচণ্ড আঘাত পান মিজানুর রহমান। অস্ত্রোপচারও করা হয়েছিল, কিন্তু সফল হয়নি। আজীবনের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন মিজান। তবে এ সমস্যা তাঁকে রুখতে পারেনি। নিজের স্বপ্নের পথে এগিয়ে চলেন মিজানুর।
জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা...
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্মে পড়ছেন মিজানুর। পাশাপাশি স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় ভর্তি হয়ে যান বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে। সেখানে এমপাওয়ারমেন্ট অব পারসনস উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিজ ইনকুডিং এনডিডি থ্রু আইসিটি প্রকল্পের অধীন বেসিক কম্পিউটার অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশন প্যাকেজেসে প্রশিক্ষণ নেন। এর দু-তিন মাস পর বিসিসি থেকে ন্যাশনাল আইটি চ্যালেঞ্জ ইয়ুথ উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিজ প্রতিযোগিতা বিষয়ে মিজানুরকে জানানো হয়। মিজানুর তাতে সাড়া দেন এবং প্রথম স্থান অর্জন করেন। জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় যাঁরা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হন, তাঁরাই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্লোবাল আইটি চ্যালেঞ্জ ফর ইয়ুথ উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিজে অংশ নিতে পারেন।
আগামীর স্বপ্ন
প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন মিজানুর। আর তাতেই চ্যাম্পিয়ন। এই অর্জন এবং আগামীর স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, ‘আসলে এটা অনেকটা স্বপ্নের মতো। প্রতিযোগিতা শেষে যখন পুরস্কার ঘোষণা পর্ব শুরু হয়, তখন খুব রোমাঞ্চ কাজ করছিল। একই সঙ্গে খুব টেনশনও হচ্ছিল। আর যখন আমার নাম এবং বাংলাদেশের নাম ঘোষণা করা হলো, তখন আশ্চর্য হয়ে গিয়েছি। আসলে এটি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। শিক্ষক, পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবসহ অনেকেই অভিনন্দন জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে করেছেন প্রশংসাও। সবার অনুপ্রেরণা পেয়ে আগামীতে আরও বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখছি। আসলে একসময় নিজেকে খুব দুর্বল এবং ছোট মনে হতো; এই অর্জন আমাকে সাহস জুগিয়েছে। আগামীর পথে এগিয়ে যেতে আরও সহজ হবে।’
লেখক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, সমকাল
মন্তব্য করুন