মনে ক্ষুধা না থাকলে সাফল্য আসে না
পেপ গার্দিওলা [জন্ম: ১৮ জানুয়ারি ১৯৭১, স্পেন]
পেপ গার্দিওলা
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:২১
পেপ গার্দিওলা। সাবেক স্প্যানিশ ফুটবল কোচ। সময়ের সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ী কোচদের অন্যতম। বর্তমান ম্যানচেস্টার সিটি বস গার্দিওলার বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণার কথা তুলে এনেছেন জসিম উদ্দিন আকাশ
আসলেই আমি বড় ভাগ্যবান! কেননা, আমি দুনিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফুটবল একাডেমিগুলোর একটিতে বেড়ে উঠেছি। নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন কোন একাডেমির কথা বলছি! হ্যাঁ, আমি বার্সেলোনার কথাই বলছি। সেই একাডেমিতে অল্প বয়সী খেলোয়াড়দের ভীষণ যত্নের সঙ্গে গড়ে তোলা হয়। আমার জন্মস্থান স্পেনের কাতালোনিয়ার বার্সেলোনায়।
বার্সেলোনায় খেলোয়াড় ও কোচ
নিজ শহরের ক্লাব বার্সেলোনায় খেলোয়াড় হিসেবে ক্যারিয়ারের ইতি টানার পর কোচ হিসেবে স্বপ্নের মতো কয়েকটি মৌসুম আমি কাটিয়ে এসেছি। তারপর জার্মানির বায়ার্ন মিউনিখ হয়ে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার সিটির কোচ হিসেবে থিতু হয়েছি। জার্নিটা যত সহজে বলে ফেলেছি, দিনগুলো আসলে এতটা সহজে অতিবাহিত হয়নি। প্রতিটি দিনই ছিল পরিশ্রম আর চড়াই-উতরাই!
চ্যালেঞ্জ ও আমি
খেলোয়াড় জীবনের একেবারে শুরু থেকেই চ্যালেঞ্জ নিতে ভালো লাগে আমার। কোচ হিসেবে তো এ বিষয়টি আমার মনে এক অদ্ভুত রোমাঞ্চ তৈরি করে দেয়। তবে আমি ভালো করেই জানি, ফুটবল এমনই এক খেলা, যেখানে একা একা কিছু করা প্রায় দুঃসাধ্য ব্যাপার; বরং টিমওয়ার্ক এখানে পরিবেশন করে আসল জাদু! ফলে নিজের খেলোয়াড়, স্টাফ এমনকি সমর্থকের প্রতি সব সময়ই আস্থা রাখতে ভালোবাসি আমি। জানি, দিন শেষে আপাতদৃষ্টিতে জয়-পরাজয়কে অনেকে হিসাবে নিলেও অন্যদের প্রতি আস্থা রাখাই একজন মানুষের সত্যিকারের বিজয়ের পথ করে দেয়।
চেষ্টা করা মোটেও দোষের নয়
নিজেকে আমি বলি, হয়তো প্রতিদিনই জয় পাওয়া সম্ভব নয়। তাই বলে চেষ্টা করা মোটেও দোষের নয় নিশ্চয়। যদি কোনো পরিকল্পনা কাজে না লাগে, সেটি আঁকড়ে থাকার মানে নেই; বরং প্রয়োজনমতো নিজেকে বদলে নেওয়ার মানসিকতাও থাকা চাই।
আমার নিজের কোনো জাদু নেই
সাফল্যের পরিসংখ্যানে চোখ রেখে অনেকেই আমার কাছে জানতে চান গোপন মন্ত্রের কথা। বলি, আমার নিজের কোনো জাদু নেই! খেলোয়াড়রাই প্রকৃত জাদুকর। কোনো খেলোয়াড়ের মধ্যে যদি সহজাত প্রতিভা না থাকে, ফুটবলের প্রতি অগাধ ভালোবাসা না থাকে, তার কাছ থেকে সেরাটা নিংড়ে আনা জগতের কোনো কোচের পক্ষেই সম্ভব নয়। আমি সবসময়ই চেষ্টা করি খেলোয়াড়দের নিজস্ব মেধাকে খানিকটা উস্কে দিতে, তাদের মনে আত্মবিশ্বাসের সলতেটি আরেকটু বেশি জ্বালিয়ে দিতে। আমার চোখে একজন খেলোয়াড়ের সবচেয়ে বড় গুণ হলো, ভালো একজন টিমমেট হতে পারা। ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারের পাশাপাশি নিজ ক্লাব বা দলের কথাও যারা ভাবেন, এমন খেলোয়াড়ই আমার বেশি পছন্দের।
নিজের ভেতর সুতীব্র এক ক্ষুধা প্রতিনিয়ত অনুভব করি
অতীত সাফল্যের স্মৃতি রোমন্থন করতে খুব একটা ভালো লাগে না আমার। আমি জানি, প্রতিটি দিনই একেকটি নতুন দিন; প্রতিটি ম্যাচই একেকটি নতুন ম্যাচ। নিজের ভেতর জয়ের সুতীব্র এক ক্ষুধা আমি প্রতিনিয়ত অনুভব করি। তার চেয়েও বেশি অনুভব করি, ভালো একটা ফুটবল ম্যাচ দেখার ক্ষুধা। জানি, কিছু একটা করার ক্ষুধা মনের ভেতরে কাজ না করলে প্রকৃত সাফল্য কখনোই ধরা দেয় না। সাফল্য না এলে আপনার জীবন অন্যের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না!
- বিষয় :
- ফুটবল