ঢাকা রবিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫

ডিজে কুল হার্ক ও হিপ হপ জন্মকথা

ডিজে কুল হার্ক ও হিপ হপ জন্মকথা

ফাইল ছবি

ফাহমিদা রিমা

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৫ | ২১:৫৩

হিপ হপ। বিশ্বব্যাপী তরুণদের কাছে জনপ্রিয়তার শীর্ষবিন্দু স্পর্শ করা একটি সাবকালচারাল মুভমেন্ট। এর প্রতিষ্ঠা ১৯৭০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির সাউথ ব্রোনক্সে। প্রতিষ্ঠাতা একদল আফ্রিকান-আমেরিকান, ক্যারিবিয়ান ও লাতিন বংশোদ্ভূত তরুণ-তরুণী। পরের দশকে এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে আফ্রিকান-আমেরিকান কমিউনিটির বাইরে। চলতি শতকের প্রথম দশকে তো বিশ্বব্যাপী এটি হয়ে ওঠে সবচেয়ে জনপ্রিয় ধারার মিউজিক।
হিপ হপ ধারাটি মূলত র‍্যাপ মিউজিক (মৌখিক), টার্নটাবলিজম বা ডিজেয়িং (শ্রুতিমূলক), বি-বয়িং (ব্যবহারিক) ও গ্রাফিতি আর্ট (দৃশ্যায়নমূলক)– এই চারটি স্বতন্ত্র উপাদানকে ধারণ করে। প্রতিটিই প্রতিনিধিত্ব করে সংস্কৃতির ভিন্ন ভিন্ন উদ্ভাসকে। অবশ্য হিপ হপ বলতে আমজনতা এক বাক্যে র‍্যাপ মিউজিকের মৌখিক চর্চাকেই চিহ্নিত করে।
পেছনে ফিরে..
হিপ হপ মিউজিকের অগ্রদূত হিসেবে অনুপ্রেরণাদায়ক ভূমিকা পালন করেন জ্যামাইকান বংশোদ্ভূত ডিজে ক্লিভ ‘কুল হার্ক’ ক্যাম্পবেল। একটি হাইরাইজ অ্যাপার্টমেন্টে কুল হার্কের রুম থেকে এর চর্চা শুরু হয়ে ছড়িয়ে পড়ে পুরো তল্লাটে। উপস্থিত বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন টোস্টিং বা ডিজেয়িং এবং মিউজিকের ওপর দাম্ভিক  কবিতা ও বয়ান আরোপের মধ্য দিয়ে হিপ হপ মিউজিক ও সংস্কৃতির ব্লু প্রিন্ট সৃষ্টি করেন এ কিংবদন্তি। ফাঙ্ক সং ভেঙে ব্রেক-বিট ডিজেয়িং-এর বিকাশও ঘটান তিনি। কাটিং অ্যান্ড স্ক্র্যাচিংসহ ব্রেক-বিট ডিজেয়িং বিকাশে আরও ভূমিকা রাখেন গ্র্যান্ড উইজার্ড থিওডর, গ্র্যান্ডমাস্টার ফ্ল্যাশ ও জ্যাজি জয়ের মতো জনপ্রিয় সব ডিজে। 
দুনিয়ার পথে পথে
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের ভাষ্যমতে, হিপ হপ হলো বর্তমানে সামাজিক ও বর্ণবাদী সীমারেখা পেরিয়ে যাওয়া ‘পৃথিবীজুড়ে মেগা মিউজিক ও ফ্যাশনের একটি কেন্দ্রবিন্দু’। অন্যদিকে ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক’ এটিকে অভিহিত করেছে ‘পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ইয়ুথ কালচার’ বা তারুণ্যের সংস্কৃতি হিসেবে, যা এ মহাবিশ্বের প্রতিটি দেশের নিজস্ব র‍্যাপ মিউজিক বিকাশে ভূমিকা রেখে চলেছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দৃশ্যতই হিপ হপকে একটি ‘বৈশ্বিক মিউজিক্যাল মহামারি’ হিসেবে ইতিবাচক অর্থেই গণ্য করা হয়। হিপ হপের সাউন্ড ও স্টাইল একেক দেশে একেক রকম হলেও এটিকে ফিউশন ধারার অংশ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। 
গড়ে ওঠে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি
আশির দশকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত হিপ হপের কোনো ইন্ডাস্ট্রি গড়ে না উঠলেও এরপর দৃশ্যপট একেবারে বদলে যায়। তরুণদের মুহূর্তেই প্রভাবিত করে বলে শুরুর দিকে রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীরা এ ধারার বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়ান। সেই বাধা ধোপে টেকেনি বেশি দিন। যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর নানা প্রান্তে হিপ হপকে ঘিরে গড়ে ওঠে শক্তিশালী মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি। 
সমাজে এর প্রভাব
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সমাজে বেশ জোরালো প্রভাব ফেলতে শুরু করে হিপ হপ। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক অরনাল্ডো পেটারসনের গবেষণা থেকে জানা যায়, যেহেতু তৃতীয় বিশ্বসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেরই সম্পদ, সরকার ও ব্যবসাক্ষেত্রে গণমানুষের প্রভাব প্রবল, আর হিপ হপ মিউজিক ও সংস্কৃতি গণমানুষের মাঝে একাত্ম হয়ে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে, তাই এ সময়ে এটিকে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। এর বড় প্রমাণ মেলে ফ্রান্সে আলজেরিয়ান ও জার্মানিতে তুর্কিসহ পৃথিবীর নানা দেশে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে হিপ হপের ভূমিকায়। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করার বিচারে উদাহরণ হিসেবে মিসরের ‘আরব বসন্তে’র কথা বলাই বাহুল্য।
বিধিনিষেধের মুখোমুখি
দ্রুত প্রভাববিস্তারী বলেই প্রতি মুহূর্তে সেন্সরশিপ বা বিধিনিষেধের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তৈরি হয়ে থাকে একেকটি হিপ হপ মিউজিকে। এ ক্ষেত্রে অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহারের অভিযোগ তো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার! অন্যদিকে রয়েছে প্রতিবাদের ভাষা। উদাহরণ হিসেবে ধরা যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের নাইন-ইলেভেনের কথা। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার আক্রান্ত হওয়ার পর অকল্যান্ডভিত্তিক হিপ হপ ব্যান্ড ‘দ্য কুপ’-এর ‘পার্টি মিউজিক’ অ্যালবামটি নিষিদ্ধ করা হয় মার্ক্সবাদ প্রীতির অভিযোগে।
নানা বাধা-বিপত্তি ও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও উদ্বেলিত করার ক্ষমতা রাখায় হিপ হপ বরাবরই রয়েছে তরুণদের আগ্রহের তালিকায় শীর্ষে। u 

আরও পড়ুন

×