
দেশের রপ্তানি আয়ের শীর্ষে তৈরি পোশাক খাত। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি দেশ-বিদেশে সমালোচিত হয়। কর্মীদের যথোপযুক্ত নিরাপত্তার অভাব, সুযোগ-সুবিধার অপর্যাপ্ততাসহ নানা রকম বিষয়ে প্রশ্ন ওঠে। তবে এসবের ইতিবাচক দিকও রয়েছে। এ ঘটনার পর বেশ কিছু মৌলিক পরিবর্তন এসেছে তৈরি পোশাক খাতে। এর মধ্যে অন্যতম- উৎপাদন বাড়াতে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং কর্মীবান্ধব কর্মপরিবেশ। রাষ্ট্রীয়ভাবে বিষয়টি নজর দেওয়া হয়। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে এবং ধীরে ধীরে সমাধান করা হয়। একটা সময় বেতন নিয়ে বেশ ঝামেলা হতো। এখন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কোথাও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে, আবার কোথাও ব্যাংক অ্যাকাউন্টেই জমা হচ্ছে বেতন।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ পোশাক খাতে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলার। এ জন্য বিভিন্ন ধরনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিজিএমইএর ২০টি লক্ষ্যের মধ্যে অন্যতম হলো- কার্বন নিঃসরণ ৩০ শতাংশ কমানো, টেকসই কাঁচামাল ব্যবহার ৫০ শতাংশে উন্নীত করা, শোভন কাজের পরিবেশ শতভাগ নিশ্চিত করা, পানির অপচয় ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনা, ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার শত ভাগে নামিয়ে আনা, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার ২০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া, গ্যাস-বিদ্যুতের ব্যবহার ৩০ শতাংশ হ্রাস, নারী-পুরুষের সমতা শতভাগ নিশ্চিত করা, কর্মসংস্থান ৬০ লাখে উন্নীত করা, উৎপাদনশীলতা ৬০ শতাংশে উন্নীত করা, পৃথিবীর সব দেশে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি করা ইত্যাদি।
বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বাড়ার সম্ভাবনা আঁচ করে এ খাতের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ হিসেবে টেক্সটাইল খাতেও বড় বিনিয়োগ আসছে। নতুন করে যুক্ত হতে যাচ্ছে ২০২৪ সাল নাগাদ স্থানীয় টেক্সটাইলে ২.৫ মিলিয়ন স্পিন্ডিল, যাতে নতুন বিনিয়োগ হবে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার। গ্লোবাল মার্কেটে এখন ম্যান মেইড ফাইবারের চাহিদা বাড়ছে। যেখানে ২০০ বিলিয়ন ডলারের মার্কেট আছে। পরিবেশগত কারণে টেক্সটাইল থেকে সরে আসছে চায়না। সেগুলো সংগত কারণেই আমাদের দিকে আসবে। বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ থাকলে নতুন সম্ভাবনার পথ দেখাবে বাংলাদেশ। রাস্তাঘাট, বন্দর, পরিবহন ও জ্বালানির ব্যাপারে সরকার বেশ সুদূরপ্রসারী চিন্তা নিয়েছে। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু উদ্বোধন পোশাক খাতকে বেগবান করেছে।
সামনে বঙ্গবন্ধু টানেল, দেশের মেট্রোরেল চালু হলে যানজট কমবে। পোশাকশিল্পের কাঁচামাল বা উৎপাদিত পণ্য খুব সহজেই স্থানান্তরিত হবে। সময় ও শ্রম কমবে। ইউরোপের দেশগুলো সারা বছর যে পরিমাণ টি-শার্ট বা গেঞ্জি কেনে, বাংলাদেশি কারখানা তার প্রায় ৪০ শতাংশই সরবরাহ করে। শুধু টি-শার্ট নয়, ট্রাউজার, শর্টস, প্যান্ট এবং পুরুষ বা বাচ্চাদের শার্ট রপ্তানিতে ইউরোপে সবার ওপরেই বাংলাদেশ। ইউরোপের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রেও ডেনিম রপ্তানিতে শীর্ষস্থানে রয়েছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা।
বিষয় : প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২০২২ ১৮ বছরে সমকাল
মন্তব্য করুন