
বাংলাদেশ এক দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত কাতারে পৌঁছে যাবে বাংলাদেশ। করোনা মহামারির কারণে নানা ধরনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ দেখা দেওয়ার সময় দুই বছর পিছিয়ে যায়। উন্নয়নশীল কাতারে যুক্ত হতে পারলে সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তার আগে অব্যশই অবকাঠামোগত উন্নয়ন জরুরি। বর্তমান সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে এসেছে অভূতপূর্ব উন্নতি। অবকাঠামো উন্নয়নে নেওয়া হচ্ছে মহাপরিকল্পনা। কৃষি, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, খাদ্য নিরাপত্তাসহ দেশের মানুষের একটি অংশের অর্ধাহার ও অনাহারকে বিদায় জানিয়ে এখন উন্নয়নের বাংলাদেশ। তলাবিহীন ঝুড়ির পরিবর্তে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে আধুনিক, নিরাপদ এবং পরিবেশবান্ধব পরিবহন ও যোগাযোগ অবকাঠামোর ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে নেওয়া হয়েছে মেগা প্রকল্প। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ত্বরান্বিত হবে দেশের অর্থনীতি। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বাড়বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও। সড়ক, সেতু, রেল, বিমান সবক্ষেত্রেই লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। এসব ক্ষেত্রে একের পর এক মেগা প্রকল্পগুলো বাংলাদেশের রূপ আমূল বদলে দিচ্ছে। মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজও চলছে পুরোদমে। করোনার কারণে কিছু সময় বন্ধ থাকার পর সরকারের অন্য অগ্রাধিকার পাওয়া প্রকল্পগুলোর কাজও ফের শুরু হচ্ছে।
উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অংশে মেট্রোরেল রাজধানী ঢাকার পরিবহন খাতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। আগামী অক্টোবর মাসে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে চালু হবে দেশের প্রথম টানেল। অন্য বৃহৎ প্রকল্পগুলোর কাজও পুরোদমে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট আগামী বছরের এপ্রিল নাগাদ চালু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। বর্তমানে দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৫৫ লাখ টন। অব্যাহত নীতিসহায়তা ও প্রণোদনার মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে এ বিপ্লব সাধিত হয়েছে। মাছ-মাংস, ডিম, শাকসবজি উৎপাদনেও বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে ও ইলিশ উৎপাদনকারী ১১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। অবকাঠামো থেকে কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে হলে অন্যতম একটি বিষয় হচ্ছে ব্যয় দক্ষতা। এটি আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য আরও বেশি বিবেচ্য। কেননা সীমিত সম্পদের বাস্তবতায় সম্পদের সদ্ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক প্রকল্পে অপচয় মানেই হচ্ছে অন্য প্রয়োজনীয় খাতের বঞ্চিত হওয়া। এখানে আরও একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, শুধু অবকাঠামো নির্মাণ করলেই হবে না। অবকাঠামো ব্যবহারের সঠিক সংস্কৃতিও নিশ্চিত করতে হবে। ইতোমধ্যে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে, সুতরাং আমাদের ক্যাপাসিটি রয়েছে। তবে সেই ক্যাপাসিটিতে কিছু ঘাটতিও রয়েছে। এই দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। বিশেষ করে যেসব প্রকল্পে বিদেশিদের অর্থসংশ্নিষ্টতা থাকে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছু শর্ত থাকে, সেগুলো মানা হয় না। ফলে প্রকল্প বিলম্বিত হয়। এছাড়া কোনো না কোনোভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়ে যায়। এসব সমস্যা নিরসনে সরকারের উদ্যোগ বেশি জরুরি।
বিষয় : প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২০২২ ১৮ বছরে সমকাল
মন্তব্য করুন