নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া যোগ্যতা পূরণ না করেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ পান আহসানুল কবির মল্লিক। তাঁর এ অনিয়ম নিয়ে ৬ মার্চ সমকালে 'তথ্য লুকিয়ে চাকরি নেন ঢাবি ভিসির সাবেক পিও' শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়।

তবে এ ঘটনার কোনো তদন্ত করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উল্টো মল্লিককে পদোন্নতি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। গত ২৭ জুলাই এক অফিস আদেশে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ জোন-১ এর সাব-জোন ১/খ-এর নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

চাকরির শুরুতেই যিনি অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁকে এ ধরনের দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সূত্রের দাবি, এই সাব-জোনের অধীনে নির্মাণাধীন ২১ তলা শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল টাওয়ার ভবনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সরবরাহে বিশাল অঙ্কের বাণিজ্যের সুযোগ রয়েছে।

জানা যায়, ২০১২ সালে প্রকাশিত এক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে চাকরি পান মল্লিক। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, প্রার্থীকে সরকার অনুমোদিত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমপক্ষে দ্বিতীয় বিভাগে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং (ইলেকট্রিক্যাল) উত্তীর্ণ হতে হবে। তবে চাকরির নিয়োগে জমা দেওয়া মল্লিকের শিক্ষা সনদের ফটোকপি বিশ্নেষণ করে দেখা গেছে, গাজীপুরে ওআইসি পরিচালিত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) টেকনিক্যাল অ্যান্ড ভোকেশনাল এডুকেশন বিভাগের (টিভিই) অধীনে এক বছর ডিপ্লোমা ইন টেকনিক্যাল এডুকেশন শেষে দুই বছর মেয়াদি বিএসসি ইন টেকনিক্যাল এডুকেশন প্রোগ্রাম করেন আহসানুল কবির মল্লিক, যা কখনও বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সমমান নয়।

এ বিষয়ে আইইউটির টিভিই বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন সমকালকে বলেন, 'কোর্সটি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং নয়। শুধু পলিটেকনিক থেকে তিন বছরের ডিপ্লোমাধারীর জন্য কোর্সটি চালু রয়েছে। আমাদের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধীনে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং (ইলেকট্রিক্যাল) প্রোগ্রাম পরিচালিত হয়।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের (ইইই) অধ্যাপক মোহাম্মদ জুনায়েবুর রশীদ এবং সহকারী অধ্যাপক মিনারুল ইসলাম কোর্স আউটলাইন ও সনদ বিশ্নেষণ করে সমকালকে বলেন, 'কোর্সটি আউটলাইন প্রচলিত বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পুরোপুরি পূরণ করে না। বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রাম চার বছর মেয়াদে পড়ানো হয়; এ কোর্স দুই বছরের। এখানে সংশ্নিষ্ট বিষয়ের গভীরতা থাকবে না। মোদ্দাকথা, এটি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং নয়।'
আহসানুল কবির মল্লিক সমকালকে জানান, বিজ্ঞপ্তি দেখে তিনি আবেদন করতেই পারেন। এতে তাঁর কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। বরং কোনো ধরনের ব্যত্যয় ঘটলে তার জন্য দায়ী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

মল্লিক উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের প্রটোকল অফিসার (পিও) ছিলেন। ব্যক্তিগত কারণে তাঁকে আবারও প্রকৌশল দপ্তরে বদলি করা হয়। পিও থাকাকালে মল্লিককে বিশেষ বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ গিয়াস উদ্দিন আবাসিক এলাকায় বাসা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

নতুন করে পুরস্কৃত করার বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, 'অনেক আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মল্লিককে নিয়োগ দিয়েছে। তাঁর জালিয়াতি একেবারে অন্য রকম কিছু হলে ভিন কথা ছিল। সিন্ডিকেট কমিটির অনুমোদন ও সিলেকশন কমিটির সুপারিশে যথাযথভাবে চাকরি পেয়েছেন তিনি। ফলে পদোন্নতি বা দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে ভিন্ন কিছু চিন্তার অবকাশ আছে বলে আমি মনে করি না।'