- প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
- হঠাৎ ছুটিতে হতাশ মেয়েরা
হঠাৎ ছুটিতে হতাশ মেয়েরা

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী নারী ফুটবল দল। ছবি: ফাইল
নিয়ম করে প্রতিদিন সকাল-বিকেল অনুশীলনে শুধু ঘাম ঝরিয়েই যাচ্ছেন মেয়েরা। গত সেপ্টেম্বর থেকে নারী জাতীয় ফুটবল দল কোনো ম্যাচই খেলেনি। অনুশীলনের সময় প্রায়ই কোচিং স্টাফদের কাছে মেয়েদের প্রশ্ন থাকে– ‘খেলা কবে?’ কিন্তু কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তাঁরা।
ওমেন্স সুপার লিগের দুটি জমকালো আয়োজন দেখে নারী ফুটবলাররা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু তিনবার শুরুর তারিখ ঘোষণা করেও নির্দিষ্ট সময় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ শুরু করতে পারেনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। ভেন্যু এবং চার দল চূড়ান্ত না করেই মেয়েদের এ টুর্নামেন্ট নিয়ে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ও নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণের আশ্বাস এখন আর বিশ্বাস হচ্ছে না বাংলাদেশের ফুটবলের ঝান্ডা ওড়ানো মেয়েদের।
ওমেন্স সুপার লিগ নিয়ে কিঞ্চিৎ যে আশা ছিল, তা বৃহস্পতিবার শেষ হয়ে গেছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ শুরু করতে না পারায় আপাতত বাফুফে ভবনের ক্যাম্পে থাকা নারী ফুটবলারদের ছুটি দিয়েছে ফেডারেশন। আজ থেকে চার দিনের ছুটি শুরু হবে সাবিনা খাতুন-কৃষ্ণা রানী সরকারদের। এই ছুটির অর্থই হলো, বহুল আলোচিত ওমেন্স সুপার লিগ এবার হচ্ছে না। বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে টুর্নামেন্টের স্বত্বাধিকারী কে-স্পোর্টসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহাদ করিম এবং মাহফুজা আক্তার কিরণকে ফোন দিলেও তাঁরা রিসিভ করেননি।
এদিকে জুলাইয়ে ঘরের মাঠে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের সম্ভাবনাও বাতিল হয়ে যাচ্ছে। ওই সময়ে নেপালকে আনার চেষ্টা করছে বাফুফে।
গোলাম রব্বানী ছোটন নারী ফুটবল দলের কোচ থেকে পদত্যাগ করেছেন গত মাসে। বিশ্বস্ত কয়েকটি সূত্রের মাধ্যমে জানা গেছে, তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করলেও এখনও ছোটনের আশায় আছে বাফুফে। তাঁর বিকল্প খুঁজে না পাওয়া এবং দীর্ঘদিন মেয়েদের কোচিং করানোর কারণে ছোটনের অভিমান ভাঙাতে প্রায়ই ফুটবল ফেডারেশন থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আর মেয়েরাও ফিরে আসার জন্য অনুরোধ করছেন। তাঁর চলে যাওয়ার পর মেয়েদের মনটাও ভেঙে গেছে।
তবুও নিজেদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে প্রতিনিয়ত প্র্যাকটিস করে যাচ্ছিলেন সানজিদা-মারিয়ারা। ফুটবলে আঁধার দেখে কিছুদিন আগে ক্যাম্প ছেড়ে চলে যান দুই নির্ভরযোগ্য ফুটবলার সিরাত জাহান স্বপ্না ও আঁখি খাতুন। এখন ওমেন্স সুপার লিগ না হওয়ায় এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কারণে স্বপ্না ও আঁখির পথ ধরতে পারেন অনেকে। হয়তো চার দিনের এ ছুটিতে অনেকেই পরিবারের কাছে ফুটবলের বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরবেন। বাস্তবতা বিচার করে অনেকেই তাঁদের মেয়েকে বাফুফেতে পুনরায় না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে মনে করছেন ফুটবল-সংশ্লিষ্টরা।
সিনিয়র-জুনিয়র মিলে বাফুফেতে বর্তমানে ৫০ জনের মতো নারী ফুটবলার রয়েছেন। নেপালে গত বছর সাফ জেতার পর বাফুফে যে আকাশচুম্বী স্বপ্ন দেখিয়েছিল মেয়েদের, তার ছিটেফোঁটাও নেই। টাকার অঙ্ক অল্প হলেও এখন পর্যন্ত মে মাসের বেতন পাননি ফুটবলাররা। ক্যাম্পের খাবারের মান প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে। এতকিছুর পরও মেয়েদের খেলার আকুতি কানে নিচ্ছে না বাফুফে। বিশেষ করে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ না হওয়াতেই বেশি মন খারাপ ফুটবলারদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফুটবলার গতকাল সমকালের কাছে বলেন, ‘ক্যাম্পে থেকে কী আর করব? কোনো খেলা নেই। এভাবে আর কতদিন? কেন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগটি হচ্ছে না– সেটাই মাথায় ঢুকতেছে না আমাদের। তাহলে এত আয়োজনের কী প্রয়োজন ছিল?’
আয়োজনটা যে ছিল লোক দেখানোর আর কিছু ব্যক্তির পকেট ভারী করার, তা প্রতিনিয়ত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ১০ জুন নারী লিগের শুরুর তারিখ দিলেও সেটি কয়েক দিন পিছিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেন কিরণ। মেয়েদের ছুটি দেওয়ায় এখন নারী সুপার লিগের ভবিষ্যৎ অন্ধকারেই চলে গেল। শুরুতে দুটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখালেও এখন পিছিয়ে গেছে তারা।
মন্তব্য করুন