তিন বছর পর গত ৬ জুলাই সারাদেশের ২ হাজার ৭১৬টি বেসরকারি নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। এ সময় এমপিও থেকে বঞ্চিত হয় সব রকম শর্ত পূরণ করা ১ হাজার ৭২৫ প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো কোনোটির আবেদনের সঙ্গে স্ক্যান করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো কাগজপত্র অস্পষ্ট ছিল। এসব প্রতিষ্ঠানকে আপিল করার সুযোগ দেওয়া হয়। গত ৪ আগস্ট আপিল শুনানি হলেও এমপিওভুক্ত হতে না পারা প্রতিষ্ঠানের এই নিষ্পত্তি ঝুলে আছে টানা প্রায় পাঁচ মাস ধরে। এরই মধ্যে গত ৮ ডিসেম্বর নতুন এমপিওভুক্ত হওয়া সব প্রতিষ্ঠানের নতুন কোড নম্বর দেওয়া হয়। তবে আপিলের ফল ঘোষণা না করায় এমপিও বঞ্চিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর লক্ষাধিক শিক্ষকের মাঝে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। ১৫ দিনের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি করার শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা দেওয়া হলেও এ বছরের মধ্যে আদৌ আপিল নিষ্পত্তি হবে কিনা তাও অনিশ্চিত।

অবশ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা সমকালকে জানিয়েছেন, আপিলের বিবেচনায় নতুন করে যেসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে, তার একটি খসড়া তালিকা প্রস্তুত করে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি অনুমোদন দিলেই তালিকা প্রকাশ করা হবে।

এবার সারাদেশ থেকে এমপিওভুক্ত না হওয়া আপিলের আবেদন করেছিল ১ হাজার ৭২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৫৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে এবং ১৭১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আপিল শুনানিতে অনুপস্থিত ছিল। গত ২ থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকায় আপিল শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে যে প্রতিষ্ঠানগুলোর যোগ্যতা সঠিক ছিল, সেগুলো এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শুনানির ১৫ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের কথা থাকলেও তখন শিক্ষামন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় সেটি সম্ভব হয়নি। এর পর পার হয়ে গেছে চার মাসেরও বেশি সময়। এরই মধ্যে গত ৮ ডিসেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে গত ৬ জুলাই এমপিওভুক্তি হওয়া ২ হাজার ৫১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিও কোড (বেতনের অর্থ ছাড়ের নম্বর) দেওয়া হয়। এমপিওর নির্বাচিত এসব স্কুল-কলেজের মধ্যে ৬৬৬টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১ হাজার ১২২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৩৬টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১০৯টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ও ১৮টি ডিগ্রি কলেজ রয়েছে। আপিল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক অধিশাখা) সোনা মনি চাকমা বলেন, 'আপিল নিষ্পত্তির বিষয়টি চূড়ান্ত করে অনুমোদনের জন্য শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের কাছে দেওয়া হয়েছে। তাঁর অনুমোদন পেলেই তালিকা প্রকাশ করা হবে।'

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ এর আলোকে সারাদেশের বিভিন্ন স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির জন্য গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এতে অনলাইনে ওই বছরের ১০ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত আবেদন নেওয়া হয়। এতে সারাদেশ থেকে মোট ৪ হাজার ৭২৯টি আবেদন জমা পড়ে। যাচাই-বাছাই শেষে এমপিও পাওয়ার যোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬৬৬টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১ হাজার ১২২টি, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৩৬টি, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ১০৯টি এবং ডিগ্রি কলেজ ১৮টিসহ সর্বমোট ২ হাজার ৫১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য আদেশ জারি করা হয়। অবশিষ্ট ২ হাজার ৬৭৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য যোগ্য বিবেচিত হয়নি। আপিল আবেদন গ্রহণের সময়সীমা নির্ধারিত ছিল গত ২১ জুলাই পর্যন্ত। আপিলকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আপিল শুনানি গত ২ থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়।

নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে যাচাই কমিটি গঠন :গত ৮ ডিসেম্বর নতুন এমপিও কোড পাওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রেকর্ডপত্র যাচাই কমিটিতে মাউশি মহাপরিচালকের প্রতিনিধি মনোনয়ন করা হয়েছে। পরে ২২ ডিসেম্বর মাউশি এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায়।