'বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় চলছে। ভারত কখনোই চায় না, এ সময়ে এমন কোনো বিষয় যাতে সামনে না আসে, যেটা দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে সীমান্তে যে ধরনের ঘটনা ঘটছে। তারা এ বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন এবং এ নিয়ে যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো ঝামেলা না হয়।' 

মঙ্গলবার ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে ৫০ বছরের নিবিড় বন্ধুত্বের সম্পর্কের ভিত্তিতে আগামী দিনগুলোতে সম্পর্ক আরও কীভাবে নতুন উচ্চতায় এগিয়ে নেওয়া যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। 

বৈঠক শেষে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে আগামী দিনে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি, সবুজ জ্বালানি, তথ্যপ্রযুক্তি, নিরাপত্তা এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক বৃদ্ধিতে যৌথ সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। 

নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ভারত নিরাপদ না থাকলে বাংলাদেশ যেমন নিরাপদ থাকবে না, তেমনি বাংলাদেশ নিরাপদ না থাকলে ভারতও নিরাপদ থাকবে না।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের এ সফরে মূল আলোচনা হয়েছে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের বৈঠকে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব তার সঙ্গে শুধু সৌজন্যসাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন। বিশেষ করে এ সময় দু'দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির নানা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে মৈত্রীর ৫০ বছরে সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় চলছে। দু'দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে দুই দেশই সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নিয়ে কথা হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা এ বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় এবং এ বিষয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দু'দেশের মধ্যে যৌথ প্রক্রিয়া চলছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাব্য ভারত সফরের বিষয়ে পরবর্তী সময়ে জানানো হবে।

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বহুমাত্রিক ইস্যু রয়েছে। বিশেষ করে ঝুলে থাকা ইস্যুগুলো কীভাবে দ্রুত সমাধান করা যায়, সে বিষয়ে অর্থবহ আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির বছরে গত মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফর করেছেন এবং ভারতের রাষ্ট্রপতিও চলতি ডিসেম্বর মাসেই ঢাকা সফরে আসছেন। গত সোমবার বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী দিবস যৌথভাবে পালন করা হয়েছে। শুধু ঢাকা ও দিল্লিতে নয়, বিশ্বের ১৮টি দেশে মৈত্রী দিবস পালিত হয়েছে। এটা প্রমাণ করে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে এখন স্বর্ণযুগ চলছে।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, ডিসেম্বর মাস বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের সেনা ও বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা একসঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। এ দৃষ্টান্ত বিশ্বে বিরল। তিনি বলেন, দু'দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। এবং আলোচনায় উঠে এসেছে, দু'দেশের ভেতরে কোনো বিষয়েই মতবিরোধ নেই। আগামীতে কোন কোন ক্ষেত্রে দু'দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার করা যায়, সে বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ যেসব ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অধিক কর্মসংস্থান করা যাবে এবং দুই দেশই উপকৃত হবে, সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব আরও জানান, আজ বুধবার তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এ ছাড়া সফরকালে তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।