উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে রংপুরের তিন উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপচরের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, তিস্তার উজানে ভারতে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে বৃহস্পতিবার রাত থেকে নদীর পানি বাড়তে থাকে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে গঙ্গাচড়া উপজেলা সদরসহ নোহালী, আলমবিদিতর, কোলকোন্দ, লক্ষ্মীটারী, গজঘণ্টা ও মর্ণেয়া, কাউনিয়া উপজেলার পাঞ্জরভাঙ্গা এবং পীরগাছার শিবচর, হাগুড়িয়াসহ নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপচরে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পান্দিবন্দি হয়ে পড়েছে। গবাদি পশু নিয়ে নদীর বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে অনেক পরিবার। চরাঞ্চলগুলোতে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ডুবে গেছে চরাঞ্চলের আমনের ক্ষেত।

এদিকে শুক্রবার উজানের ঢল কমে যাওয়ায় ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচে চলে এসেছে। বেলা ৩টায় ওই পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে নিম্নাঞ্চলগুলোতে এর তেমন প্রভাব পড়েনি।

বিনবিনা চরের আব্দুল মান্নান জানান, হঠাৎ করে রাতে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘরবাড়ি ফেলে গবাদি পশু নিয়ে তারা নদীর বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। খোলা আকাশের নিচে থাকায় রাতে বৃষ্টিতে তার পরিবারের সদস্যরা ভিজে গেছেন। ঘরে পানি ঢুকেছে, এখন খাবার ও বিশুদ্ধ পানি না থাকায় পরিবার নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন। লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চর জয়রামওঝার কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, নদীতীরবর্তী তার আমনের ক্ষেত পুরোটাই ডুবে গেছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ধানগাছ সব নষ্ট হয়ে যাবে।

লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী জানান, উপজেলার মধ্যে তার ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টি ইউএনওকে জানানো হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য পদক্ষেপও নিয়েছে।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব জানান, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় তিস্তার উজানে সিকিম ও গ্যাংটকে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে তিস্তার পানি ফের বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। নদীতীরবর্তী উপজেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এ বার্তা দেওয়া হয়েছে। নদীভাঙন রোধেও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।