শ্রীলঙ্কার গল শহরে জন্মগ্রহণ করা ৪৭ বছর বয়সী শেহান করুনাতিলকা জীবনের কৈশোর থেকে যুবক হয়ে ওঠার পুরো সময়কালটা এক গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছেন। এর পরেও যে সেই গৃহযুদ্ধের রেশ মিলিয়ে যায়নি, তা তাঁর উপন্যাস 'দ্য সেভেন মুনস অব মালি আলমিদা'য় উঠে এসেছে। উপন্যাসটি শ্রীলঙ্কায় ১৯৯০ সালের গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা। একদিন ঘুম থেকে উঠে এক আলোকচিত্রী ও জুয়াড়ি মালি আলমিদা দেখেন যে তিনি মৃত। তবে মৃত্যুর পরেও মালির কাজ শেষ হয়নি। তিনি তাঁর ভালোবাসার মানুষকে দেশের সংঘর্ষের নির্মম-হৃদয়বিদারক ছবি দেখাতে চান।
শেহান করুনাতিলকা 'দ্য সেভেন মুনস অব মালি আলমিদা' উপন্যাসের জন্য এ বছর সাহিত্য জগতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বুকার পুরস্কার লাভ করেন।
উপন্যাসটি সম্পর্কে শেহান করুনাতিলকা জানান, ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের অবসানের পর যখন কতজন বেসামরিক নাগরিক মারা গেল, এর পেছনে কে বা কারা দায়ী ছিল তা নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছিল, তখনই তিনি এমন একটি গল্প লেখার সিদ্ধান্ত নেন, যেখানে মৃত ব্যক্তিরা তাদের চিন্তাধারা ব্যক্ত করবে।
বুকার পুরস্কার গ্রহণ করার পর শেহান বলেন, 'শ্রীলঙ্কা বুঝতে পেরেছে যে এই দুর্নীতি, জাতি শ্রেষ্ঠত্ব এবং স্বজনপ্রীতির ধারণাগুলো কাজ করেনি এবং কখনোই কাজ করবে না।' তিনি আরও বলেন, 'আমি আশা করব এই বইয়ের মুদ্রিত সংস্করণ দশ বছর পরেও দেখতে পাব, সেভেন মুনস থাকবে শ্রীলঙ্কার বইয়ের দোকানগুলোতে 'ফ্যান্টাসি' বিভাগের বইগুলোর পাশে। সেই সঙ্গে আশা করছি, এ বইটিকে রাজনৈতিক বই ভেবে ভুল করবেন না কেউ।'
তবে শেহান করুনাতিলকা জানিয়েছেন, চলতি বছরের আগস্টে লেখক সালমান রুশদির ওপর হামলার পর তিনি নিজেই তাঁর বইয়ের কয়েকটি ছোটগল্প 'সেন্সর', অর্থাৎ কাটছাঁট করেছেন। তিনি বলেন, 'যখন সালমান রুশদির ওপর হামলা হয়, সে সময় আমার কিছু ছোটগল্প প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় ছিল। তখন আমার দুয়েকটা গল্প চোখে পড়ল, যা আমার চোখে কোনো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মতো বলে মনে হয়নি; কিন্তু আমার স্ত্রী বলল, আমাদের দুটি সন্তান আছে, তুমি দয়া করে এগুলো প্রকাশ করো না। দক্ষিণ এশিয়ার লেখকরা যখনই কিছু লিখতে যাই, আমাদের মাথার ভেতর এই চিন্তাই ঘুরতে থাকে, বিশেষ করে যখন রাজনীতি ও ধর্ম নিয়ে লিখতে যাই।'
বইটি প্রসঙ্গে বুকার পুরস্কারের জুরি বোর্ডের প্রধান বিচারক নিল ম্যাকগ্রেগর বলেন, শেহান করুনাতিলকার বইটি দক্ষতা, সাহস, স্ম্ফূর্তির এক সৃষ্টি। বইটিকে 'জীবনোত্তর আখ্যান' বলা যেতে পারে। তবে সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা সবকটি বইয়ের মূল উপজীব্য ছিল- জীবনের অর্থ অনুসন্ধান।'
'দ্য সেভেন মুনস অব মালি আলমিদা' শেহান করুনাতিলকার দ্বিতীয় উপন্যাস। ২০১০ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস 'চায়নাম্যান : দ্য লিজেন্ড অব প্রদীপ ম্যাথিউ'। ওই বইটি শুধু কমনওয়েলথ পুরস্কারই জয় করেনি, ক্রিকেটবিষয়ক উইজডেন ম্যাগাজিনের মতে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেট সম্পর্কিত বইয়ের তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে নেয়।
১৭ অক্টোবর (সোমবার) লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে শেহান করুনাতিলকার হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন ব্র্রিটেনের কুইন অব কনসোর্ট ক্যামিলা। পুরস্কার পেয়ে নিজেকে সম্মানিত ও গর্বিত মনে করছেন বলে জানান লেখক। ৫০ হাজার পাউন্ডের মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার ইংরেজিতে যুক্তরাজ্যে প্রকাশিত কোনো কথাসাহিত্যের জন্য এককভাবে দেওয়া হয়। সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা অন্য পাঁচ লেখকের প্রত্যেককে দেওয়া হবে আড়াই হাজার পাউন্ড। এবারের অনুষ্ঠানের তারকা অতিথি ছিলেন জনপ্রিয় গায়িকা ডুয়া লিপা। তিনি নিজের জীবনের অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেছেন।