লালা এসেদি। মরোক্কান ফটোগ্রাফার। আরব নারীদের স্টেজড-ফটোগ্রাফের জন্য বিখ্যাত এই কিংবদন্তির বিভিন্ন সাক্ষাৎকারের অনুপ্রেরণামূলক অংশ অনুবাদ করেছেন ফাহমিদা রিমা

আমার কাজের ব্যাপ্তি আরব বিশ্ব কিংবা আরব সংস্কৃতি ছাড়িয়ে অনেক দূর বিস্তৃত। এটি সত্যিকার অর্থে পশ্চিমা শিল্পের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত; এবং তাতে আরব নারীদের যা ভূমিকা- সেটি আমাকে ঝামেলায় ফেলে বেশ! উনিশ শতকের ওরিয়েন্টালিস্ট পেইন্টারদের কাজে 'আবেদনময়তা' সম্পর্কিত এক ধরনের অলীক কল্পনার বিস্তার ছিল; আর সেটিতে ভর করে তাঁরা নিজেদের জগতের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। জগৎকে ধারণ করার উদ্দেশে তাঁরা বেছে নিয়েছিলেন আরববিশ্ব, বিশেষত উত্তর আফ্রিকাকে; অথচ সেটির অস্তিত্ব নেই তাঁদের কাজে। দুর্ভাগ্যক্রমে, এ প্রবণতা শুধু তখনকার সময়েই নয়, এখনও চর্চিত হতে দেখা যায়। পশ্চিমা শিল্পে বিরাজ করা আরব নারীদের সেই আইডিয়ার প্রতি সমুচিত জবাব হিসেবে নিজের ফটোগ্রাফিতে নারীকে এভাবে উপস্থাপন করি।

সেই দিনগুলোর প্রতি অশেষ ঋণ
নিজেকে আমি পেইন্টার ভাবি। কেননা, আমার বাবা ছিলেন পেইন্টার। ফলে ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে তাঁর স্টুডিওতে রং আর পেন্সিল নিয়ে ড্রয়িং করতে করতে বড় হয়ে উঠেছি। সেই দিনগুলোর প্রতি আমার অশেষ ঋণ। অল্প বয়সেই বুঝে গিয়েছিলাম, পেইন্টার হতে চাই। রং দিয়ে মানুষের নাম আর শহরের ছবি ফুটিয়ে তুলতে বরাবরই ভীষণ ভালো লাগত আমার। স্কুলে গিয়ে অন্যদের সেগুলো দেখাতেই তারা যখন শিউরে উঠত, তখন ভাবতাম, কাজটা ঠিকঠাকই করতে পেরেছি!

শিল্পের কাছে ধরনা দিইনি বরং শিল্পই ধরা দিয়েছে
শিল্পের কাছে কোনোদিনই ধর্না দিইনি আমি, বরং শিল্পই ধরা দিয়েছে আমার কাছে। সব সময় শিল্পী হতে চাইলেও এটিকে পেশা হিসেবে নেওয়ার কথা ভাবিনি। নিজেকে প্রকাশ করার জন্য যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু দক্ষতাই অর্জন করেছিলাম কেবল; কিন্তু আমার কাজ কখনও জনসমক্ষে দেখানো হবে- ভাবিনি এমনটা। অথচ গ্র্যাজুয়েট স্কুলের দিনগুলোতে সেটিই ঘটল। এক্সিবিশনে নিজের কাজগুলো রেখেছিলাম প্রদর্শনের জন্য; তা দেখে জনৈক সাংবাদিক নানা প্রশ্ন করতে থাকলেন। তারপর গ্যালারি কর্তৃপক্ষও আমার কাজের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠলেন।

সৃষ্টিশীলতা অর্জনের মাধ্যম
যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস ইউনিভার্সিটির স্কুল অব দ্য মিউজিয়াম অব ফাইন আর্টসে যখন মাস্টার্স ডিগ্রির পাঠ নিতে শুরু করি, সেখানে সব ক্লাসই ছিল ইলেকটিভস, তখন নিজের পেইন্টিংগুলোর ডকুমেন্টারি করার একটি টুল হিসেবে ফটোগ্রাফি শুরু করি আমি। এটি এমন এক মাধ্যম হিসেবে ধরা দেয় আমার কাছে- যার প্রেমে পড়ে যাই সহসাই। ফলে পেইন্টিং, ফটোগ্রাফি, ইনস্টলেশন কিংবা ফিল্ম- এ সবই আমার কাছে স্রেফ সৃষ্টিশীলতা অর্জনের একেকটি মাধ্যম। শুধু ওয়েস্টার্ন ওরিয়েন্টাল পেইন্টিং নয়; আরও অনেক শিল্পীর কাজই আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। তাদের কাজের ছাপ কিংবা কখনও কখনও উদ্ৃব্দতি আমি জুড়ে দিয়েছি আমার শিল্পকর্মে। এর মধ্যে সাহিত্যিকদের কাছ থেকেই প্রেরণা পেয়েছি বেশি।

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে পার্থক্য
ইসলামী সংস্কৃতির মধ্যে জেন্ডার ইস্যুর তুুলনা করে ওরিয়েন্টালিস্ট পেইন্টিংয়ের পশ্চিমা আবিস্কারধর্মী প্রথা কি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে একটা পার্থক্য জাহির করতে চায়নি? আমি সেটির মধ্যে একটি সেতু হয়ে কাজ করতে ভীষণ আগ্রহী। কেননা, আমি জানাতে চাই, ওরিয়েন্টালিস্ট পেইন্টিংগুলো স্রেফ পশ্চিমা পুরুষদের মুগ্ধতা ও অলীক কল্পনার ফল।