- শিল্পমঞ্চ
- নির্মোহ জীবনবোধের মর্মস্পর্শী গল্প
নির্মোহ জীবনবোধের মর্মস্পর্শী গল্প

উপন্যাসটির শুরুতেই আটকে গেছি, পড়তে গিয়ে ভাষার আঞ্চলিকতা নিয়ে সমস্যা হয়। কিছুটা গভীরে ডুবে যাওয়ার পর সেই সমস্যাটি কেটে যায়। তারপর লেগে যায় ঘোর; পড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাটে না এই ঘোর। শেষের দিকে গিয়ে একটা গোলকধাঁধায় পড়ে যাই। উপন্যাসটি হৃদয়কে আলোড়িত করেছে, বেদনার দাগ স্পর্শ করেছে। মনে হয়েছে এ যেন আমার গল্প, আমাদের গল্প, এ এক বাস্তব জীবনের রূপরেখা।
যার বয়ানে উপন্যাসটি শুনি, তাঁকে আমার খুব কাছের মনে হয়েছে। কখনও মনে হয়েছে তিনি আমারই বোন, কখনও মনে হয়েছে তিনি আমার মা, কখনও আবার অন্যকিছু মনে হয়েছে। একটি রক্ষণশীল পরিবারের সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার বর্ণনা, চোখের সামনে জলছবি হয়ে ভাসছে। কখনও সাংসারিক অভাব-অনটন কামড়ে ধরা, এ যেন দেশের বাস্তবচিত্রকে চিত্রায়িত করে। লেখক এমনভাবে বইটি উপস্থাপন করেছেন, মনে হয়েছে সংসার-জ্বালা আমাকে পীড়িত করেছে। ব্যথিত হয়েছি।
কথক যখন হিন্দু-মুসলমান ভ্রাতৃঘাতী দ্বন্দ্বের কথা বয়ান দেন। যারা একসঙ্গে থাকত, পারস্পরিক সহযোগিতা করত, জীবনের প্রয়োজনে একে অপরের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের সৌহার্দ্য জীবন যাপিত করত। যারা এক সময় আনন্দ-বেদনায় পাশে থাকত। তারাই কিনা মারামারি, হানাহানি করে নুয়ে ফেলে ভ্রাতৃত্ব। এই জীবন্ত উপন্যাসে কোনো সুরসুরিমূলক ডায়ালগ নেই; এখানে পেয়েছি জীবনের বয়ান শুনতে, তখনকার চিত্রকে হৃদয়ে ধারণ করতে।
হাসান আজিজুল হক তাঁর লেখায় জীবনচেতনা আশাজাগানিয়া কিংবা আশাভঙ্গের বেদনাকে নানাভাবে সাহিত্যে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন। তিনি গদ্যকে গড়েছেন সুঠামভাবে। আবার মর্মস্পর্শী বর্ণনা ও নির্মোহ জীবনবোধে স্বমহিমায় উজ্জ্বল করে তুলেছেন। জীবনসংগ্রামে পরাস্ত অথচ জীবন আঁকড়ে বেঁচে থাকার স্বপ্নে বিভোর মানুষ তাঁর গল্প-উপন্যাসের প্রাধান্য পেয়েছে। আত্মজা ও একটি করবী গাছ, তৃষ্ণা, জীবন ঘষে আগুন, নামহীন গোত্রহীন, পাতালে হাসপাতালে ইত্যাদি তাঁর তুলনারহিত গল্প। তবে আগুনপাখি ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে লেখা অনন্য এক উপন্যাস।
সদস্য সচিব, ঢাকা কেন্দ্রীয় কমিটি
মন্তব্য করুন