- শিল্পমঞ্চ
- পর্যটনের রাজধানীতে হোটেলবন্দি পর্যটক
পর্যটনের রাজধানীতে হোটেলবন্দি পর্যটক

কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকত পর্যটকের জন্য ছিল নিষিদ্ধ। বুধবার দুপুরে তোলা -সমকাল
বুধবার, ঘড়ির কাঁটায় দুপুর ২টা। পর্যটন শহর কক্সবাজারের তারকা হোটেল 'লং বিচ'। এই হোটেলটি থেকে কক্সবাজার শেখ কামাল স্টেডিয়ামের দূরত্ব আনুমানিক পৌনে এক কিলোমিটার। হোটেলটিতে গিয়ে দেখা গেল, মূল ফটক বন্ধ। ভেতরে কয়েকজন অতিথির কেউ লবিতে বসে আছেন, কেউবা মলিন মুখে হাঁটাচলা করছেন।
লন্ডন থেকে দেশে এসেছেন সিলেটের বাসিন্দা এমএ মান্নান। রোববার সিলেট থেকে স্ত্রীকে নিয়ে পর্যটনের রাজধানী খ্যাত কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে আসেন তিনি। উঠেছেন হোটেল লং বিচে। কিন্তু যে সমুদ্রে একান্তে সময় কাটাতে যান এই লন্ডন প্রবাসী, গত দু'দিন সেই সমুদ্রের কাছেও ঘেঁষতে পারেননি তিনি। গতকাল দুপুরে হোটেল লবিতে কথা হয় এমএ মান্নানের সঙ্গে। তিনি আলাপকালে সমকালকে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ঘিরে নিরাপত্তার কথা বলে মঙ্গলবার থেকে সমুদ্রসৈকতে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। দু'দিন ধরে একপ্রকার হোটেলবন্দি হয়ে আছি। এ সময়ে কক্সবাজারে বেড়াতে আসাটাই ভুল হয়েছে।'
শুধু মান্নানই নন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভার কারণে বিপাকে পড়েছেন কক্সবাজারে বেড়াতে আসা অসংখ্য পর্যটক। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা চলার কারণে এখন কক্সবাজারে পর্যটকের সংখ্যা কম। তবে যারা এসেছেন, তাঁদের অবর্ণনীয় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
সাধারণত কক্সবাজারের কলাতলী, সুগন্ধা, লাবনী, কবিতা চত্বর ও শাহীন চত্বর দিয়ে পর্যটকরা সমুদ্রসৈকতে ঘুরে বেড়ান। সবচেয়ে বেশি পর্যটক ভিড় করেন কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবনী পয়েন্টে। গতকাল এসব পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, সৈকত পর্যটকশূন্য। সৈকতের প্রবেশমুখগুলোতে পুলিশের পাহারা। কোনো পর্যটক সেদিকে পা বাড়ানোর চেষ্টা করলেই বাধা হয়ে দাঁড়ায় পুলিশ। জনসভায় যোগ দিতে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর ভিড়ে রাস্তায় বের হয়ে ঘুরে বেড়ানোও খুব একটা হয়নি। ফলে গত দু'দিন কক্সবাজারে অবস্থান করা পর্যটকের বেশিরভাগকেই অনেকটা হোটেলবন্দি থাকতে হয়। বিশেষ করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যারা বেড়াতে যান, তাঁরা তো তেমন একটা বের হতেই পারেননি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিনব্যাপী কর্মসূচি থাকায় কক্সবাজারে তাঁর নিরাপত্তায় বেশ কড়াকড়ি করা হয়। নিয়ন্ত্রণ করা হয় যানবাহন চলাচলও। জনসভায় লোকজনকে নিয়ে যেতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মাহসড়কে চলাচলকারী বেশিরভাগ গাড়ি ভাড়া হয়ে যাওয়ায় সংকট তৈরি হয়। এ ছাড়া যেসব বাস অবশিষ্ট ছিল, সেগুলোও রাস্তায় নামাননি পরিবহন মালিকরা। এতে মঙ্গলবার বিকেল থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজারে চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গতকাল দিনভর যেসব বাস চলাচল করেছে, সেগুলো কক্সবাজার বাসস্টেশন থেকে সদরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
কক্সবাজার সদরে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার চলাচলকারী স্টার লাইন সার্ভিসের টিকিট বিক্রয় কর্মী মো. এনাম বলেন, অনেক বাস জনসভার জন্য ভাড়া হয়ে গেছে। আবার জনসভার কারণে কড়াকড়ি থাকায় যাত্রী না পাওয়ায় নির্ধারিত শিডিউলে বাস চালানো যায়নি। সেন্টমার্টিন পরিবহন সার্ভিসের টিকিট বিক্রয় কর্মী উজ্জ্বল জানিয়েছেন, এই সার্ভিসের অন্তত ২০টি বাস কক্সবাজার থেকে ঢাকা, ফেনী ও চট্টগ্রামে চলাচল করে। কিন্তু অনেক বাস ভাড়া হয়ে যাওয়া এবং বাস চলাচলে কড়াকড়ির কারণে বুধবার এই সার্ভিসের বাস চলাচল বন্ধ ছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার ত্যাগ করার পর থেকে বাস চলাচল শুরু হয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে, বাস সংকটের কারণে অনেক পর্যটক কক্সবাজারে যেমনি যেতে পারেননি, তেমিন আবার বেড়ানো শেষে বাড়ি ফিরতেও সীমাহীন সমস্যায় পড়েন অনেকে। এতে প্রভাব পড়ে হোটেল-মোটেলে। কক্সবাজারে কয়েকটি হোটেলে খবর নিতে গিয়ে দেখা গেছে, স্বাভাবিকের চেয়েও পর্যটকের সংখ্যা খুব কম। পর্যটক না থাকলেও কক্সবাজারের প্রায় সব হোটেলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা থাকছেন। জনসভা সফল করতে জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও এখানকার সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ এলাকার বিপুল নেতাকর্মী নিয়ে মঙ্গলবার কক্সবাজার সদরে আসেন।
অ্যালবাট্রাস রিসোর্টের মালিক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম অবশ্য বলেন, আমার হোটেলে কোনো পর্যটক নেই। প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারের জন্য অনেক কিছু করেছেন। আমরা না হয়, একটু ত্যাগ স্বীকার করলাম।
সমুদ্রসৈকতে প্রবেশে বাধার বিষয়ে জানতে চাইলে ট্যুরিস্ট পুলিশের কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি। তবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার স্বার্থে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এটা একেবারেই সাময়িক।'
মন্তব্য করুন