রাউজানে চাঞ্চল্যকর গৃহবধূ রোকসানা আকতার (২৮) হত্যার মূল হোতা তাঁর মামা শ্বশুর মো. ইউসুফ। জমি বিক্রির টাকা চাওয়ায় পরিকল্পিতভাবে রোকসানাকে হত্যা করে লাশ গুমের পর থানায় সাধারণ ডায়েরির নাটক করেন ইউসুফ। নিহতের স্বামী মো. আজম ও শাশুড়ি রিজিয়া বেগম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে এসব তথ্য দিয়েছেন। মো. ইউসুফ উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রয়াত মহসিনের ছেলে।

গত ১ ডিসেম্বর শৌচাগারের নালা থেকে গৃহবধূ রোকসানা আকতারের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আশরাফ খান মাতব্বর বাড়ির মো. আজমের স্ত্রী ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সৌদিয়া প্রজেক্ট এলাকার মো. মফিজের মেয়ে। মাহফুজ (৭), কায়েস (৫), রমজান (৮ মাস) নামে তিনটি অবুঝ সন্তান রয়েছে রোকসানার।

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, 'রোকসানার স্বামী ও শাশুড়িকে আটকের পর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যা ও লাশ গুমে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন তাঁরা। ঘটনার পর প্রধান হোতা মো. ইউছুফসহ অন্য আসামিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।'
পুলিশ জানিয়েছে, গত ২৭ নভেম্বর সকালে গৃহবধূ রোকসানা আকতারকে হত্যা করা হয়। পরদিন থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন তাঁর মামা শ্বশুর মো. ইউসুফ। লাশ উদ্ধার করা হয় ১ ডিসেম্বর রাতে। হত্যাকাণ্ডের সময় নিহতের শাশুড়ি রিজিয়া বেগম ঘরে ছিলেন না। তবে ফেরার পর তাঁর ছোট্ট নাতি তাঁকে সব জানিয়েছিল। পরে তিনি নিজের ভাইকে বাঁচাতে লাশ গুমে সহায়তা করেন। অন্যদিকে স্বামীকে বাঁচাতে ঘটনা প্রকাশ করেনি নিহতের ননদ।

জানা যায়, নিহতের স্বামী মো. আজম সহজ সরল প্রকৃতির। পরিবারের দেখাশোনা করতেন তাঁর মামা। এক বছর আগে আজমের বাবার জমি বিক্রি করে ১৭-১৮ লাখ টাকা নিজের কাছে রাখেন হত্যার মূল হোতা মো. ইউসুফ। সে টাকায় তিনি ব্যবসা করে আজমের পরিবারকে প্রতিমাসে মাত্র ৩ হাজার টাকা করে দিতেন। এর প্রতিবাদ করায় গৃহবধূ রোকসানাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন মো. ইউছুফ। পরে নিহতের ননদ ফেরদৌসের স্বামী সোহেল, সোহেলের বন্ধু জহির মিলে হত্যা করে রোকসানাকে। গলা টিপে ধরেন সোহেল, কাঠের বাটাম দিয়ে মাথায় জোরে আঘাত করেন মামা শ্বশুর ইউসুফ। পরে লাশ নালায় ফেলে দেন। ঘটনার কথা জানতেন স্বামী মো. আজম। তাঁকে ফাঁসানোর ভয় দেখিয়েছিল পরিকল্পনাকারী।

রাউজান থানার সেকেন্ড অফিসার অজয় দেব শীল বলেন, '১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন নিহতের স্বামী ও শাশুড়ি। মূলত টাকা আত্মসাতের প্রতিবাদ করায় রোকসানাকে হত্যা করা হয়।'