ফুলের রাজ্যে ফুল উৎসব

স্কুলশিক্ষিকা শাহনাজ আক্তার যশোর থেকে এসেছিলেন দেশে ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের গদখালীতে। আগেও বহুবার এসেছিলেন এ ফুলের রাজ্যে। তিনি বলেন, এবারের অনুভূতি একেবারেই অন্য রকম। এ অঞ্চল যেন নতুন রূপে সেজেছে। দেখে সত্যিই চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে।

ফুল উৎসবকে ঘিরে এ অঞ্চলের ফুলচাষিদের মধ্যে উদ্দীপনা দেখা গেছে। গদখালী-পানিসারার সব ফুলক্ষেত সাজানো হয়েছে নবরূপে। প্রতিটি ফুলশেডকে রূপান্তর করা হয়েছে একেকটি স্টলে। গদখালীর পানিসারা হাড়িয়া ফুল মোড়ের ক্ষেতগুলো দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। এখানকার রেস্টুরেন্টগুলোও ফুলক্ষেতের আদলে রূপ দেওয়া হয়েছে। ফুল উৎসবে যোগ দিতে প্রথম দিন থেকেই আসছেন দূর-দূরান্ত থেকে তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের মানুষ।

বৃহস্পতিবার গদখালীতে প্রথমবারের মতো শুরু হয় তিন দিনের এ ফুল উৎসব। বিকেলে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এ মেলার উদ্বোধন করেন যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। উৎসবে অংশ নেওয়া নারী ফুলচাষি সাজেদা বেগম বলেন, এটা ফুলচাষিদের মিলনমেলা। তাঁরা চান, প্রতিবছর যেন এ মেলার আয়োজন হয়। মেলাটি সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। ফুলচাষি ইসমাইল হোসেন জানান, ফুল উৎসবকে ঘিরে নতুন করে সেজেছে গদখালী-পানিসারা এলাকা। এ উৎসবে মেতেছে পুরো অঞ্চল।

উৎসবের উদ্বোধন শেষে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, এখানকার ফুল সুবাস ছড়ানোর পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সোপান হয়ে উঠেছে। ফুলকেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং ফুলের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণে এ উৎসব ভূমিকা রাখবে।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সময়ে ফুল উৎপাদন-সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখা ১০ ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীকে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়। এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপরিচালক হুসাইন শওকত, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক, ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুল হক, ঝিকরগাছা থানার ওসি সুমন ভক্ত, বাংলাদেশ ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম, নারী ফুলচাষি সাজেদা বেগম প্রমুখ।

ঝিকরগাছার ইউএনও মাহবুবুল হক জানান, 'নানা রঙের ফুলের মেলা, খেজুর গুড়ের যশোর জেলা'- এমন স্লোগানে যশোর জেলাকে ব্র্যান্ডিং করেছে সরকার। যশোরের ফুল এ জেলার ঐতিহ্য সুদীর্ঘকালের। এ ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে আয়োজন করা হয়েছে ফুল উৎসবের। এ উৎসব ফুলচাষি, ব্যবসায়ী ও দর্শনার্থীর মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

দেশে ফুলের বিশাল বাণিজ্য শুরু হয়েছিল জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী-পানিসারাতে। ১৯৮২ সালে স্থানীয় পানিসারা গ্রামের শের আলী সরদার রজনীগন্ধা ফুল চাষের মাধ্যমে শুরু করেন এ ফুলের বাণিজ্যিক চাষ। বর্তমানে এ অঞ্চলের প্রায় ৬ হাজার ফুলচাষি ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করছেন রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল। দেশের মোট চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগের বেশি যশোরের গদখালী থেকে সরবরাহ করা হয়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ফুল এখন যাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়াতেও।

প্রথমবারের মতো ফুল মেলা আয়োজনে দারুণ খুশি দেশে বাণিজ্যিকভাবে ফুল উৎপাদনের গোড়াপত্তনকারী হিসেবে পরিচিত শের আলী সরদারও। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, এ মেলা যেন তাঁর কাজের স্বীকৃতি। ছোট্ট পরিসরে অজানা শঙ্কা নিয়ে সাহসের সঙ্গে ফুলচাষ শুরু করেছিলেন তিনি। সেটার এত প্রসার দেখে তিনি উচ্ছ্বসিত।