- শিল্পমঞ্চ
- বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান কমেছে চট্টগ্রামে
বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান কমেছে চট্টগ্রামে

বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হলেও চট্টগ্রামে ক্রমে কমছে বিনিয়োগ। কমে যাচ্ছে কর্মসংস্থানও। এক দশক আগেও চট্টগ্রামে শুধু পোশাক খাতে শ্রমিক ছিল প্রায় ১৯ লাখ। কিন্তু এখন সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ লাখে। বন্দরকেন্দ্রিক বিদেশি বিনিয়োগে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়লেও সার্বিকভাবে এটি কমছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘিরেও কিছু বিদেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। কিন্তু সেটিও প্রত্যাশার তুলনায় কম। পরিচালন ব্যয় ক্রমে বাড়তে থাকায় বিভিন্ন কারখানা থেকে ছাঁটাই হচ্ছে শ্রমিক। এ তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হয় ডিপস অ্যাপারেল লিমিটেড ও ডিপস অ্যাপারেল লিমিটেড এক্সটেনশন নামে দুটি কারখানা।
নতুন বিনিয়োগ প্রস্তাবও আসছে না প্রত্যাশা অনুযায়ী। বরং আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরে নতুন বিনিয়োগের পরিমাণ কমেছে ৩০ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৮৭টি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ প্রস্তাব ছিল ৩ হাজার ২২৭ কোটি ২৭ লাখ টাকার। কর্মসংস্থান হয়েছিল ১২ হাজার ৮৫৮ জনের। ২০২০-২১ অর্থবছরে চট্টগ্রাম অঞ্চলে আট খাতে ১২৪টি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ প্রস্তাব ছিল ২ হাজার ৪৯৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকার। আর কর্মসংস্থান হয়েছে ৮ হাজার ৮৪১ জনের। ২০২১-২২ অর্থবছরে চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিনিয়োগ প্রস্তাব কমেছে আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০ শতাংশ। সর্বশেষ তিন অর্থবছরের এই চিত্র বলে দিচ্ছে ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ কমছে চট্টগ্রামে।
বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদেশি ও যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগের জন্য ১২টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করে। তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৭৩৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদেশি ও যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগের জন্য মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করে। তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। কমার এ চিত্র অব্যাহত ছিল সর্বশেষ অর্থবছরেও।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর ঘিরে কিছুটা বিনিয়োগ প্রস্তাব আসছে নতুন করে। কিন্তু এগুলো প্রত্যাশার তুলনায় কম। এই শিল্পনগরের আট একর জমিতে একটি কারখানা স্থাপনের জন্য ২১ দশমিক ৯৬ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখিয়েছে পিনাকল বাইসাইকেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। প্রথম বছরে এ প্রতিষ্ঠান ২ লাখ সাইকেল তৈরি করতে চায়। কারখানাটিতে প্রায় ১ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে নতুন করে। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এমনটিই জানিয়েছেন পিনাকল বাইসাইকেল ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইখতিয়ার খান প্রিন্স। এদিকে সোয়ান ইন্টারন্যাশনালও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে ১০ একর জমিতে একটি টায়ার উৎপাদন কারখানা স্থাপনের জন্য ১৩ দশমিক ১৮ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। কারখানাটি হলে প্রায় ৯ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।
চিটাগং চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত চট্টগ্রামে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্যের চেম্বার ওয়েলস ব্যবসায়ীরা। গত নভেম্বরে নগরীর আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু হলে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তাঁরা এ আগ্রহ দেখান।
এর পরে চট্টগ্রামে আসে ফ্রান্সের একটি প্রতিনিধি দল। বিনিয়োগ বাড়ানোর আগ্রহের কথা জানিয়ে তাদের সঙ্গে আসেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সে দেশের রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপয়। চট্টগ্রাম বন্দরেও টার্মিনাল অপারেট করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন বিদেশিরা। সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে যেমন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগ করতে চায়, বে-টার্মিনালে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ড। পাশাপাশি চীনের চায়না মার্চেন্টস পোর্ট হোল্ডিং, ভারতের আদানি গ্রুপ, সিঙ্গাপুরের পিএসএ, দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই এবং ডেনমার্কের এপিএমও চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে সার্বিকভাবে চট্টগ্রামে বিনিয়োগ প্রস্তাব প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম।
মন্তব্য করুন