‘মুহিব তো রাতের ভোটে এমপি হইছে। কেউ তারে ভোট দিয়া এমপি বানায় নাই। শেখ হাসিনা তাকে মনোনয়নও দেননি। মুহিবের বাবা রাজাকার এবং পিস কমিটির লোক ছিলেন। কলাপাড়ায় আওয়ামী লীগ বলতে আমি এবং আমার বাবা। আমরা বাপ-ছেলে ৭০ বছর এই দলের সভাপতি ও সেক্রেটারি আছি। এখানে আওয়ামী লীগ করতে হলে আমার কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিতে হবে।’

পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের সংসদ সদস্য মহিব্বুর রহমান মুহিব সম্পর্কে এ কথাগুলো বলেছেন কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক এমপি ও সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার। তাঁর এ বক্তব্যের ভয়েস রেকর্ড এলাকায় ভাইরাল হয়েছে।

ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাকর্মী এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। মাহবুবকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে আওয়ামী লীগ এবং এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন।

জানা গেছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমানকে ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন কলাপাড়া উপজেলার ডাবলুগঞ্জ ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রুমান হাসানাত। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বৃহস্পতিবার মোবাইল ফোনে তাঁকে শাসান মাহবুব। আর তখনই বর্তমান এমপি সম্পর্কে তিনি এসব কথা বলেন।

রুমান বলেন, “আমি আওয়ামী লীগ করি এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। দলকে ভালোবাসি, নেত্রীকে ভালোবাসি। তাই দলের যখন যে এমপি হয়, তখন তাঁকে নিয়েই আমরা গর্ব করি এবং তাঁর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিই। কয়দিন আগে বর্তমান এমপি মুহিব সাহেবকে নিয়ে ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ উল্লেখ করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিই। এতে মাহবুবুর রহমান তালুকদার সাহেব ক্ষুব্ধ হয়ে বৃহস্পতিবার ইফতারের আগে আমাকে ফোন দেন। মুহিব সাহেবকে মানবতার ফেরিওয়ালা বলে কেন পোস্ট দিয়েছি সে জন্য আমায় শাসান।’ রুমান জানান, এ সময় মাহবুব এসব কথা বলেন।

তিনি তাঁর কথা শুনে অবাক হয়ে যান। দলের উপজেলা সভাপতি হয়ে এবং দলের সাবেক এমপি-মন্ত্রী হয়ে কীভাবে তিনি বললেন, ‘এমপি মুহিব রাতের ভোটে এমপি হয়েছেন, তাঁরে কেউ ভোট দেয় নাই’।

তাহের মৃধা নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমার মাথায় আসে না, একজন সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী কীভাবে এ ধরনের কথাবার্তা বলে? ... আবার আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সে (মাহবুব) নাকি দলের মনোনয়নও চায় !’

কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব তালুকদার বলেন, ‘মাহবুবুর রহমান তালুকদারের এ ধরনের বক্তব্য দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। তাঁকে দলে রাখলে আগামীতে নির্বাচনে বিপর্যয় ঘটবে। তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হোক।’

এ ব্যাপারে মাহবুবের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

এমপি মুহিব বলেন, ‘গণতান্ত্রিভাবে নির্বাচনে জনগণের ভোটে আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। (মাহবুব) আওয়ামী লীগের আদর্শে বিশ্বাসী হলে এ ধরনের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিতে পারেন না। তাঁর আর বিএনপির বক্তব্য এক এবং অভিন্ন। আর এতেই প্রমাণিত হয়, কারা রাজাকার পরিবারের সন্তান এবং কারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের।

এদিকে মাহবুবের বক্তব্যের প্রতিবাদে এবং তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবিতে উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ ও কৃষক লীগ শুক্রবার কলাপাড়া প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে।