‘তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে’ বোধনসংগীতের মধ্যদিয়ে একচল্লিশতম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার। রাজধানীর সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে বিকাল ৪টায় তিন দিনব্যাপী জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ আয়োজিত এ সম্মেলনের উদ্ভোধন করবেন প্রথিতযশা চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। সম্মেলনের শেষ দিনে রবীন্দ্রপদক প্রদান করা হবে মুক্তিযোদ্ধা ও অভিনয়শিল্পী সৈয়দ হাসান ইমাম ও শিক্ষাবিদ সঙ্গীতজ্ঞ অধ্যাপক আ.ব.ম. নুরুল আনোয়ারকে। শেষ দিনের আয়োজনে প্রধান অতিথি থাকবেন শিক্ষাবিদ অনুপম সেন। এদিন সমাপনী বক্তব্য রাখবেন পরিষদের সভাপতি সন্‌জীদা খাতুন।

এ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন হয় ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে মঙ্গলবার সকালে। জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সহ সভাপতি ডা. সারওয়ার আলীর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে সমগ্র আয়োজনের বিস্তারিত লিখিত আকারে উপস্থাপন করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়। এতে আরও বক্তব্য রাখেন পরিষদের সহ-সভাপতি মফিদুল হক, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী বুলবুল ইসলাম ও লাইসা আহমদ লিসা। এসময় উপস্থিত ছিলেন সংগীত শিল্পী লিলি ইসলাম, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আবুল ফারাহ্‌ পলাশ, জহিরুল হক খান, সদস্য লোপা আহমেদ, রশীদ আল হেলাল, মামুনুর রশিদ, প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের সহ-সভাপতি মফিদুল হক বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে সংযোজিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের গান। যা আমাদের জাতীয় সংগীত। আমরা সব সময়ই চেয়েছি একটি অসাম্প্রদায়িক মানবিক মূল্যবোধের রাষ্ট্র। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে সাম্প্রদায়িক সংঘাত দানা বেঁধে উঠছে। এখানেও কিন্তু রবীন্দ্রনাথ আমাদের সহায়। তার গানের মধ্যদিয়ে আমাদের সংস্কৃতি এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই ধরনের উৎসব আমাদের সংস্কৃতি মিলনের বার্তা বয়ে আনবে।’

ডা. সারওয়ার আলী বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ আজও আমাদের সংস্কৃতিতে প্রাসঙ্গিক। সংস্কৃতি বিশবায়নের অভাবের ফলে সামাজিক অবক্ষয় হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রবীন্দ্রনাথের জীবন ও কর্ম খুবই প্রাসঙ্গিক। আমরা আশা করি রবীন্দ্রনাথের কর্মজীবন অনুসরণ করে সবার মধ্যে মনুষত্ববোধ সঞ্চারিত হউক।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তিন দিনব্যাপী এ আয়োজনে অংশ নিচ্ছে পরিষদের ৭২টি শাখার পাঁচ শতাধিক শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও সংগঠক। তিন দিনেরই সান্ধ্য-অধিবেশন সাজানো হয়েছে গুণীজনের সুবচন রবিরশ্মি, আবৃত্তি, পাঠ, নৃত্য ও গান দিয়ে। একচল্লিশতম অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন বিকেল ৫টায় আছে সেমিনার। এবারের বিষয়: ‘নদী তীরের প্রেমের গান’। প্রবন্ধ রচনা করেছেন সংগীত শিল্পী অধ্যাপক রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সভাপতি ড. আতিউর রহমান। আলোচনায় অংশ নেবেন অধ্যাপক মো. শাহ্‌ আযম শান্তনু ও আজিজুর রহমান তুহিন। বার্ষিক অধিবেশন উপলক্ষে যথারীতি প্রকাশিত হবে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির নানা দিক এবং সংস্কৃতি বিষয়ে বিশিষ্টজনের লেখা প্রবন্ধের সংকলন ‘সঙ্গীত সংস্কৃতি’। আয়োজনের প্রথম দিন বিকেল সাড়ে ৫টায় পরিবেশিত হবে গীতি আলেখ্য ‘আন অমৃতবাণী’। গ্রন্থনা মহুয়া মঞ্জরী সুনন্দা ও দীপ্র নিশান্ত। নৃত্য পরিচালনা সুদেষ্ণা স্বয়ংভা অথৈ। পরিবেশনায় জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ ঢাকা মহানগর শাখা। দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে রবিরশ্মির সুবচনে অংশ নেবেন সংস্কৃতিজন ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নুর। এদিন সাড়ে ৮টায় পরিবেশিত হবে লাইসা আহমদ লিসার সংগীত ও শর্মিলা বন্দোপাধ্যায়ের নৃত্য পরিচালনায় গীতি আলেখ্য ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’। গ্রন্থনা জয়ন্ত রায়। পরিবেশনায় ছায়ানট। আয়োজনের শেষ দিন থাকবে প্রতিনিধি সম্মেলন এবং তামান্না রহমানের পরিচালনায় নৃত্যম নৃত্যশীলনের পরিবেশনায় নৃত্য আলেখ্য ‘বিদায় অভিশাপ’।