২১ জুন বিশ্ব ইয়োগা দিবস। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনুরোধে ২০১৪ সালে জাতিসংঘ প্রতিবছর এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক ইয়োগা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে ১৯০টি দেশের ২৬০টিরও বেশি শহরে দিবসটি পালিত হচ্ছে। ইয়োগা বা যোগ একটি শাস্ত্রীয় কৌশল। 'ইয়োগা' শব্দের আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে 'ইয়ুজ' যার অর্থ 'নিয়ন্ত্রণ করা'। এর অর্থ হলো ব্যক্তিসত্তার সঙ্গে বিশ্বসত্তার মিলন। অন্য অর্থে বলা যায় গ্রন্থিভুক্ত করা বা সমন্বয় সাধন করা। এটা নিয়ে অনেকে অনেক রকম মতামত প্রকাশ করেছেন। কেউ বলেছেন আত্মা বা মন ও শরীরকে একত্র করার কৌশলকে ইয়োগা বা যোগ বলে। আসলে যোগ বা ইয়োগাকে অনেকে যোগব্যায়াম বলেন। এই শব্দটি ভুল। ব্যায়াম ভিন্ন বিষয়। যদিও ব্যায়াম পরিশ্রম বা শরীরচর্চা দেহকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। পক্ষান্তরে যোগও একটি বিশেষ প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে শরীর ও মনের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা হয়। এই সমন্বয় সাধিত হলে শরীর ও মন সুস্থ থাকে। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। মন সদা প্রফুল্ল থাকে। বার্ধক্য সহজে কাবু করতে পারে না।

ইতিহাস বলে ইয়োগা পাঁচ হাজার বছরেরও পুরোনো। প্রাচীন ভারত উপমহাদেশের মুনি-ঋষিরা তাদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখা এবং দীর্ঘ জীবনের জন্য বিভিন্ন কলাকৌশল আবিস্কার বা আয়ত্ত করেন। প্রায় ৪০০ বছর আগে সর্বপ্রথম ঋষি পতঞ্জলি কিছু আসনের কথা বলেন এবং এগুলো মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে ধীরে ধীরে এই কলাকৌশল ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর সর্বত্র। উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর দিকে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষায় 'পতঞ্জলিআসনা' নামে গ্রন্থটি ছড়িয়ে পড়ে। পরে আরও অনেকেই ইয়োগার ওপর বেশকিছু গ্রন্থ রচনা করেন।

ভারত উপমহাদেশে এর উদ্ভাবন হলেও আজ সারাবিশ্বে ইয়োগা চর্চা বিকাশ ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বাংলাদেশেও এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে এবং চর্চা হচ্ছে। বর্তমানে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইয়োগা নিয়ে গবেষণা ও চর্চা করছে।

আমরা জানি, করোনাভাইরাস ফুসফুসে আক্রমণ করে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল, তারা আক্রান্ত হন বেশি। তাই ফুসফুসকে শক্তিশালী রাখা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো দরকার।

প্রাণায়াম ও আসনের মাধ্যমে সহজেই ফুসফুসের পেশিগুলোকে শক্তিশালী করা যায় এবং অক্সিজেন গ্রহণ করার ক্ষমতাও বাড়ানো যায়। যখন নিয়মিত ব্যায়াম করা হয়, তখন রক্তের শ্বেতকণিকার কার্যকারিতা সর্বাধিক পর্যায়ে থাকে এবং এর উৎপাদনও বাড়ে। সেক্ষেত্রে মানসিক অবস্থার উৎকর্ষ সাধনে ধ্যানের বিকল্প হয় না। যে কোনো রোগ প্রতিরোধে বিশেষ করে করোনা মহামারির সময় নিয়মিত ইয়োগা করা হতে পারে উত্তম অভ্যাস।

কভিড ছাড়াও যে কোনো সংক্রামক রোগে সঙ্গী হয়ে আসে ক্লান্তি, রোগ সেরে যাওয়ার পরও যা পিছু ছাড়ে না। শরীর ও  মনের দুর্বলতায় আক্রান্ত মানুষ সহজে ফিরতে পারে না স্বাভাবিক জীবনে, বিশেষ করে আগের স্বাভাবিক জীবনে। কভিডের ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। কারণ করোনা হলো রেসপিরেটরি ভাইরাস। সবার আগে থাবা বসায় ফুসফুসে। ফলে অক্সিজেন সরবরাহে ঘাটতি হয়ে শরীরের কোষে কোষে ছড়িয়ে পড়ে ক্লান্তি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ক্লান্তি বাড়ে। ভাইরাস যখন বেশি সংক্রমিত হয়, তখন তাকে মারার চেষ্টায় শরীরজুড়ে প্রদাহ হয়। শরীরের রোগ প্রতিরোধী কোষ সাইটোকাইন নামে রাসায়নিকের ক্ষরণ বাড়ায়, যার চাপে ভাইরাস নিঃশেষ হলেও প্রদাহের জের চলতে থাকে।

চলে শরীর ভাইরাসমুক্ত হওয়ার পরও। ঘুমের ধরন পাল্টে যায়, গ্রাস করে ক্লান্তি-অবসাদ। মনোযোগে ঘাটতি হয়।

সাধারণ ভাইরাস সংক্রমণের তুলনায় কভিডে ব্যাপারটা বেশি হয়। মৃদু ও মাঝারি উপসর্গের রোগীদের ক্ষেত্রে শরীর ভাইরাসমুক্ত হওয়ার পর ক্লান্তি কমতে শুরু করলে প্রথমে হাঁটাহাঁটি ও প্রাণায়াম দিয়ে শুরু করে শরীর কতটা নিতে পারছে তা দেখে স্ট্রেচিং, যোগ, জগিং, সাইক্লিং ও প্লাঙ্ক, সাইড প্লাঙ্ক, পুশ আপ, ব্রিজ এমনকি কিছুদিনের মধ্যে ওয়েট ট্রেনিংও শুরু করে দেওয়া যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, সবটাই যেন শারীরিক সক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে হয়, বিশেষ করে যাদের বয়স বেশি।

লেখক ও সাংবাদিক
mail2hasan@gmail.com