প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব কিছু শখ থাকে। এই শখের কাজগুলো আমরা করি কর্মব্যস্ত জীবনের পাশাপাশি। অনেকেই শখের কাজকে আবার পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। বর্তমানে আমাদের তৈরি রান্না করা খাবারের দৌড় কিচেন থেকে ডাইনিং টেবিল কিংবা আমাদের ক্ষুধা নিবারণেই সীমাবদ্ধ নেই। আবার নিত্যনতুন খাবার তৈরি করে এর ছবি শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করাই শেষ কথা নয়, বরং রান্নার গুণে অনেক গৃহিণীই হয়েছেন নারী উদ্যোক্তা। নিজেরা খাবার তৈরি করে ছবি তুলে ব্যবসায়িক পেজ খুলছেন, ভিডিও করছেন। অনেকেই নিয়মিত খাবারের ছবি ও রেসিপি দিচ্ছেন বিভিন্ন পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে একটি খাবারকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে হয় এবং কী করে ছবির মাধ্যমে খাবারকে আকর্ষণীয় করে গ্রাহক বা দর্শকদের মুগ্ধ করতে হয়।
খাবারের স্বাদ যতই ভালো হোক, পরিবেশন সুন্দর এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকলে সে খাবার গ্রহণের ইচ্ছাটা তেমন প্রবল হবে না। খাবারের গুণগত মান, রং, রূপ, স্বাদ, পরিবেশন– সব দিকই সমান গুরুত্বপূর্ণ। ছবি তোলার সময়টা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ছবিই আপনার খাবারকে তুলে ধরবে। খাবার তৈরির সময় এ জন্য খেয়াল রাখতে হবে, শাকসবজি যেন অতিরিক্ত সেদ্ধ হয়ে এর রং নষ্ট না হয়ে যায়। প্রয়োজনে একটু আগেই নামিয়ে ছবি তুলুন। অতিরিক্ত তেল-মসলা ব্যবহার করবেন না।
ছবির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে, খাবার পরিবেশন। কোন খাবার কী ধরনের পাত্রে সার্ভ করতে হবে, কোন খাবারকে কী দিয়ে গার্নিশ করতে হবে, কোন খাবারে কোন সাইড ডিশ বা কোন সালাদ পাশে রাখা যেতে পারে, সে সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। ছবির গল্পের প্রয়োজনে আমরা সুন্দর সুন্দর সার্ভিং ডিশ, প্রপস ব্যবহার করতে পারি। তবে খেয়াল রাখতে হবে, প্রধান খাবারকে হিরো হিসেবে হাইলাইট করতে হবে। ছবিতে খাবারের রূপে প্রথমেই নজর কাড়তে হবে। প্রপসের সৌন্দর্যের কাছে খাবারের সৌন্দর্য কোনোমতেই ম্লান হতে দেওয়া যাবে না। খাবারের রূপ এতটা সজীব ও জীবন্ত হতে হবে, দেখেই যেন ভরা পেটেও খেতে ইচ্ছা করে। তাই অতিরিক্ত বিজি শট না নেওয়াই উত্তম। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করবেন। বিশেষ করে ব্যবসায়িক খাবার, পত্রিকা ও ম্যাগাজিনের রেসিপির ছবি যাতে স্বচ্ছ হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ছবিতে যে ব্যাকড্রপ ব্যবহার করবেন তার রং হালকা নেবেন। কেননা, এতে খাবারের রংটা ভালোভাবে ফুটে উঠবে।
সবকিছু সেট করার পর ভালোভাবে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে ক্লিক নিয়ে লক্ষ্য করুন কোন অ্যাঙ্গেলে খাবারটা ফুটে উঠেছে। খুব ক্লোজ না তুলে মাঝামাঝি একটা দূরত্ব থেকে শট নেওয়ার চেষ্টা করবেন। ছবি তোলার ক্ষেত্রে আলোর নিয়ন্ত্রণ, অর্থাৎ আলোর সঠিক ব্যবহার জানতে হবে। কেননা, সুন্দর আলোর ব্যবহারই একটি ছবির রং, রূপ, টেক্সচার, ছবির চরিত্র ও গল্পকে প্রভাবিত করে। ক্যামেরায় বিভিন্ন লেন্স ব্যবহার করে আলোর সামঞ্জস্য ঠিক রেখে ছবি তোলা যায়। মোবাইল ফোনে লেন্স ব্যবহার বা ডেপথ অব ফিল্ড বা ফোকাস পরিবর্তনের সুযোগ নেই, তাই দিনের প্রাকৃতিক আলোতেই ছবি তোলা উত্তম। প্রাকৃতিক আলোর জন্য সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের কাছাকাছি সময়কে বেছে নিতে পারেন।
এ সময়গুলোতে ছবি তোলার সময় করতে না পারলে আপনি আর্টিফিশিয়াল আলোতে তুলতে পারেন, তাহলে সরাসরি রুম লাইটে ছবি না তুলে ডিফিউশন প্যানেল (এলইডি লাইট) ব্যবহার করুন সফট আলোর জন্য এবং উজ্বল আলোর জন্য স্পট লাইট ব্যবহার করতে পারেন।
ছবি তোলার পর এডিটের বিষয় রয়েছে। এডিটের মাধ্যমে আপনি আপনার ছবি অপ্রাসঙ্গিক এরিয়া ক্রপ করে নিতে পারেন। ব্রাইটনেস, কালার, শার্পনেস, হোয়াইট ব্যালান্স– এগুলো প্রয়োজন বুঝে বাড়িয়ে বা কমিয়ে নিতে পারেন। এডিটের জন্য আপনি চাইলে স্ন্যাপসিড, লাইটরুম অ্যাপের সাহায্য নিতে পারেন।
একটি ভালো ছবির ভালো কম্পোজিশন অত্যন্ত জরুরি। সবচেয়ে সহজে এর ধারণা পেতে ভালো ফটোগ্রাফারদের তোলা ছবি দেখুন, তাহলে ধারণা পাবেন। যখন আপনি ছবির অ্যাঙ্গেল, ফোকাস, সেটিং, ফ্রেমিং, লাইটিং কম্পোজিশন এসব বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা রপ্ত করে নিতে পারবেন, তখনই ডিএসএলআর ক্যামেরা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। মূল কথা, ছবিই যেন কথা বলে– আপনার খাবারের এমন ছবি তুলুন। v
মন্তব্য করুন