ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫

দ্বিতীয় বিয়ে

যেসব ভুল এড়িয়ে চলবেন

যেসব ভুল এড়িয়ে চলবেন

ফাইল ছবি

নাঈমা ইসলাম অন্তরা 

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২২:৩৪

বিয়ে জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এবং যারা দ্বিতীয় বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন, তাদের জন্য এটি আরও কিছু চ্যালেঞ্জ ও প্রত্যাশা নিয়ে আসে। দ্বিতীয় বিয়ে প্রায়ই অতীতের অভিজ্ঞতা, দায়িত্ব, মানসিক চাপসহ নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়। সে ক্ষেত্রে সাধারণ ভুলগুলো সম্পর্কে জানা এবং সেগুলো এড়িয়ে চলা সুস্থ ও সুখী সম্পর্ক গড়তে সাহায্য করতে পারে।
অতিদ্রুত বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া
দ্বিতীয় বিয়েতে সাধারণ একটি ভুল হলো বিচ্ছেদ বা জীবনসঙ্গী হারানোর পর তাড়াহুড়া করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া। আগের সম্পর্কের ভুল বা সমস্যাগুলো থেকে না বেরিয়ে নতুন সম্পর্কে জড়ালে আবারও একই সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতীতের সম্পর্কের ভুলগুলো নিয়ে চিন্তা করুন এবং নিশ্চিত করুন যে আপনি মানসিকভাবে নতুন প্রতিশ্রুতির জন্য প্রস্তুত।
যোগাযোগের অভাব উপেক্ষা করা
একটি সফল বৈবাহিক জীবনের ভিত্তি হলো কার্যকর যোগাযোগ। দ্বিতীয় বিয়েতে জড়ানো দম্পতিরা প্রায়ই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়– যেমন আর্থিক অবস্থা, সন্তান পালনের ধরন এবং প্রত্যাশা নিয়ে আলোচনা করতে ভুল করেন। এসব বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা না করলে ভুল বোঝাবুঝি ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হতে পারে। বিশ্বাস স্থাপন এবং সম্পর্ককে স্পষ্ট করতে যোগাযোগকে প্রাধান্য দিতে পারেন।
আগের বিয়ের সঙ্গে তুলনা করা
প্রথম এবং দ্বিতীয় বিয়ের মধ্যে তুলনা করা স্বাভাবিক হলেও এটি ক্ষতিকর হতে পারে। প্রত্যেক ব্যক্তি এবং সম্পর্কই আলাদা। আপনার বর্তমান সঙ্গীকে বারবার আগের সঙ্গীর সঙ্গে তুলনা করলে ক্ষোভ সৃষ্টি হতে পারে। দু’জনের মধ্যে সুন্দর বন্ধন গড়ে ওঠা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। অতীত নিয়ে না থেকে বর্তমান সঙ্গীর গুণাবলিকে গুরুত্ব দিন।
মিশ্র পরিবারের জটিলতাগুলো উপেক্ষা করা
দ্বিতীয় বিয়েতে প্রায়ই মিশ্র পরিবার জড়িয়ে থাকে, যেখানে আগের সম্পর্কের সন্তানরা একটি নতুন সমীকরণে আসে। এ জটিলতাগুলো উপেক্ষা করলে পরিবারে টানাপোড়েন দেখা দিতে পারে। এ নিয়ে দু’পক্ষ খোলামেলা কথা বলুন, সীমানা নির্ধারণ করুন এবং সম্পর্কগুলোকে স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হতে দিন। জোর করে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করবেন না। এ ব্যাপারে ধৈর্য ধরুন।
আর্থিক পরিকল্পনার অভাব
আর্থিক অসামঞ্জস্য বিয়েবিচ্ছেদের অন্যতম প্রধান কারণ এবং দ্বিতীয় বিয়েতে এটি আরও জটিল হতে পারে। যেমন– ভরণপোষণ, সন্তানের খরচ বা আর্থিক টানাপোড়েন সম্পর্ককে চাপের মুখে ফেলতে পারে। আর্থিক বিষয়গুলো খোলামেলা আলোচনা করুন এবং ব্যয়, সঞ্চয় ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নিয়ে একটি সম্মিলিত পরিকল্পনা তৈরি করুন।
অতীতের তিক্ততা বহন করা
অতীতের মীমাংসাহীন ক্ষত দ্বিতীয় বিয়েকে ব্যাহত করতে পারে। তিক্ততা, অপরাধবোধ বা পুরোনো দ্বন্দ্বগুলো আপনার বর্তমান সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে। প্রয়োজন হলে পেশাদার কাউন্সেলিংয়ের সাহায্য নিন এবং নিশ্চিত করুন যে আপনি একটি সুস্থ মানসিকতা নিয়ে নতুন সম্পর্কে প্রবেশ করছেন।
ব্যক্তিগত উন্নয়ন উপেক্ষা করা
দ্বিতীয় বিয়েতে সফলতার জন্য ব্যক্তিগত উন্নয়ন এবং আত্মজ্ঞান অপরিহার্য। নিজের আচরণ ও অতীত সমস্যার জন্য দায়বদ্ধতা স্বীকার করুন এবং নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করুন। প্রথম বিয়ের ব্যর্থতার জন্য শুধু প্রাক্তনকে দায়ী করবেন না। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমান সম্পর্ককে দৃঢ় করুন।
দাম্পত্য কাউন্সেলিং সাহায্য না নেওয়া
অনেকেই পেশাদার কারও সাহায্য নেওয়ার বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত থাকেন, মনে করেন যে নিজেরাই সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। তবে দম্পতি থেরাপি বা বিবাহপূর্ব কাউন্সেলিং নতুন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য মূল্যবান দিকনির্দেশনা দিতে পারে। পেশাদার সাহায্য যোগাযোগ দক্ষতা উন্নত করতে এবং লুকানো দ্বন্দ্বগুলো মিটিয়ে ফেলতে সহায়তা করে।
দ্বিতীয় বিয়ে নতুন সম্ভাবনা ও সুখের সুযোগ নিয়ে আসতে পারে। তবে এটি সফল করতে প্রচেষ্টা, বোঝাপড়া এবং ধৈর্য প্রয়োজন। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং সাধারণ ভুলগুলো এড়িয়ে চলার মাধ্যমে একটি দৃঢ় ও দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব। খোলামেলা আলোচনা, পারস্পরিক যোগাযোগ এবং সম্মানের ওপর ভিত্তি করে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক তৈরি করুন। v
লেখক: সাইকোলজিস্ট ও ট্রেইনার 
ছবি: আর্কাইভ
 

আরও পড়ুন

×