ঢাকা সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

শীতের নিমন্ত্রণে...

শীতের নিমন্ত্রণে...

ফাইল ছবি

রিক্তা রিচি

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৩:২০

শীতের দিনগুলোতে বিয়ে, জন্মদিন, বিয়েবার্ষিকী, পারিবারিক একাত্মতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কেননা যে কোনো গেট টুগেদার ও আয়োজন এ সময়েই বেশ জমে। আবহাওয়া ঠান্ডা থাকার কারণে ভারী পোশাক পরেও আরাম পাওয়া যায়। আবার জমকালো সাজে সেজেও মেলে স্বস্তি। লিখেছেন রিক্তা রিচি

নিমন্ত্রণের কার্ড এলেই অন্নদাশঙ্কর রায়ের নেমতন্ন ছড়ার কথা মনে পড়ে। নিমন্ত্রণ মানেই তো ভরপুর খাওয়া-দাওয়া। তা সে বিয়ে, জন্মদিন কিংবা যে কোনো ভোজনের নিমন্ত্রণই হোক না কেন। সেখানে ছানার পোলাও, সরপুরিয়ার, রাবড়ি পায়েস, ক্ষীর কদলি থাকবে কিনা– তার নিশ্চয়তা না থাকলেও এখনকার নিমন্ত্রণে কাচ্চি, বোরহানি, জর্দা, টিকিয়া, কাবাব ইত্যাদি থাকেই। ভালো বাবুর্চির রান্না হলে তো কথাই নেই। কয়েক প্লেট সাবাড় করে ফেলা যায়! নিমন্ত্রণ কি শুধু খাওয়ারই দাওয়াত? না তো। সেখানে অনেক মানুষের সঙ্গে দেখা হয়। সবাই তাঁর সেরা পোশাকটি গায়ে জড়ান। সাজেন নিজের মনের মতো। বিয়ের অনুষ্ঠান হলে তো কথাই নেই। শীতে ভারী পোশাক ও তার সঙ্গে মানানসই সাজের প্রাধান্য বেশি থাকে বৈকি।  এ কারণেই তরুণ-তরুণীরা বিয়ে কিংবা অন্য কোনো অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ পেলে চিন্তার ভাঁজ কপালে ফেলেন। কেননা সাজগোজ, পোশাক নির্বাচনে ট্রেন্ডি থাকা চাই। সাজটাও অন্যদের চেয়ে সেরা হওয়া চাই। না, কোনো লিখিত নিয়ম নেই। তবুও এটিই যেন নিয়ম হয়ে গেছে অনেকের কাছে।
ভারী কাজের পোশাক
বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবেন আর নান্দনিক পোশাক গায়ে জড়াবেন না, তা হয় না। শীতের সময়টিতে সেই পোশাকই পরুন, যে পোশাক সারা বছর পরা যায় না। শীত মানেই মনের মতো পোশাক পরার ঋতু। হালকা রঙেরই থাকতে হবে, কম কাজের পোশাক পরতে হবে নয়তো অস্বস্তি লাগবে– এমন বাঁধাধরা নিয়ম নেই। বরং এ সময়ে সিল্ক, মসলিন, জামদানি, কাতান, বেনারসি, তসর, জর্জেট, অরগাঞ্জা ইত্যাদি সব ফেব্রিকের সালোয়ার কামিজ, শাড়ি ইত্যাদি পরা যায়– এমনটাই জানান রঙ বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী সৌমিক দাস। যে কোনো উজ্জ্বল রং যেমন লাল, খয়েরি, মেরুন, জাম, কমলা, নীল, বেগুনি, নিয়ন সবুজ, সবুজ, বটল গ্রিন, কালো ইত্যাদি রঙের পোশাক বেছে নিতে পারেন।
হয়তো ভাবছেন, তাহলে সুতি পোশাক পরে কি নিমন্ত্রণে যাওয়া যাবে না? নিশ্চয় যাবে। সুতি, টাঙ্গাইল, তাঁত এসব শাড়ি সব ঋতুতেই মানানসই। পোশাকে কারচুপি, এমব্রয়ডারি, মিরর ওয়ার্ক, টার্সেল, স্টোন ও রিবন ওয়ার্ক ইত্যাদি থাকতে পারে। প্যাটার্নেও থাকতে পারে ভিন্নতা। শুধু শাড়ি, সালোয়ার কামিজ নয়; লেহেঙ্গা, গাউন, রেডি শাড়ি ইত্যাদিও পরতে পারেন যে কোনো দাওয়াতে। যে পোশাকই পরুন না কেন, আঁটসাঁট যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। নয়তো আরামের বিষয়টি নষ্ট হবে। খেতে বসে কিংবা চলাফেরার সময় বেশ অস্বস্তিতে পড়তে হবে। 
গহনা পরতে পারেন পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে কিংবা কনট্রাস্ট করে। গোল্ড প্লেটেড, দুবাই গোল্ড ফরমিং, ডায়মন্ড কাট, পার্ল- পুঁতি কিংবা যে কোনো ধাতবের গহনা বেছে নিতে পারেন।

শীতের পোশাক, শীতের অনুষঙ্গ
যে পোশাকই পরেন না কেন, বাইরের ঠান্ডা আবহাওয়া থেকে বাঁচতে গরম কাপড় জড়াতে হবে। শাড়ির সঙ্গে ভেলভেটের শাল, কাশ্মীরি শাল কিংবা কাজ করা অন্য যে কোনো শাল জড়াতে পারেন। স্টাইলিশভাবে শাল গায়ে জড়ানোরও কিছু নিয়ম রয়েছে। সেগুলো শিখে নিতে পারেন। শালের ঝামেলায় যেতে না চাইলে শাড়ির সঙ্গে ফুলহাতার ব্লাউজ পরতে পারেন। ফুলহাতার ক্রপ টপ, গেঞ্জি, টাইট টপসের সঙ্গেও শাড়ি পরলে ট্রেন্ডি লাগে। যদি গাউন, সালোয়ার কামিজ ইত্যাদির সঙ্গে শীতের পোশাক পরতে চান; তাহলে পঞ্চ, ব্লেজার, কার্ডিগান ইত্যাদি বেছে নিতে পারেন। মোটকথা পোশাকের সঙ্গে মানায়, এমন কিছুই বেছে নিন। বেশি ঠান্ডা পরলে কান-মাথা ঢাকতে পারেন কানটুপি, বাকেট কিংবা মাঙ্কি টুপিতে। চাইলে গলায় রংচঙা মাফলারও জড়াতে পারেন।
নিমন্ত্রণের সাজ
শোভন’স মেকওভারের কসমোটোলজিস্ট শোভন সাহা জানান, শীতে যেহেতু গরম পোশাক গায়ে জড়াতে হয়, এ ধরনের পোশাকের সঙ্গে গ্লসি বা ওয়েটলুক মেকআপ ভালো যায়। সে ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে পারেন। ফাউন্ডেশনের ওপরে কমপ্যাক্ট পাউডার বাদ দিতে পারেন। যেহেতু আবহাওয়া শুষ্ক, তাই মেকআপ স্টিকি হবে না। ময়েশ্চারাইজ এফেক্ট দেবে। ওপরে হাইলাইটার ব্লেন্ড করে দিতে পারেন। এতে হালকা যে স্টিকি ভাব আছে, তা দূর হয়ে যাবে। স্কিন ওয়েটলুক দেবে। এ ক্ষেত্রে ম্যাট লিপস্টিক এড়িয়ে চলতে হবে। ক্রিমি লিপস্টিক ব্যবহার করতে হবে। লিপবাম, কালার লিপবাম ব্যবহার করতে হবে। চোখের সাজও জমকালো হতে পারে। ড্রামাটিক, স্মোকি আই লুক সৃষ্টি করতে পারেন। টানা কাজল কিংবা লাইনারের সঙ্গে রুপালি-সোনালি রঙের আইশ্যাডোও কিন্তু মানাবে বেশ। 
শুধু চোখ-ঠোঁট নয়, নিজেকে পরিপাটিভাবে উপস্থাপনের জন্য হাতের নখগুলো সুন্দর রাখতে হবে। মেনিকিউর করে নখে নেইল আর্ট কিংবা নেইল পেইন্ট করতে পারেন। 
চুলের সাজ
শোভন সাহার পরামর্শ– শীতে চুল ঝুটি করে বাঁধতে পারেন। মাথার ওপরে স্কার্ফ জড়াতে পারেন। মাথায় হুডিও ব্যবহার করতে পারেন। 
এই ঋতুতে ভালো রজনীগন্ধা পাওয়া যায়। চুল খোঁপা করে রজনীগন্ধার গাজরা ব্যবহার করতে পারেন। চুলে গোলাপও ব্যবহার করতে পারেন। কেননা, এ সময় ফুলের গুণগত মান ভালো থাকে। পশ্চিমা ধাঁচের পোশাকের সঙ্গে সেভাবেই চুল বাঁধতে পারেন। চাইলে চুল ছাড়া রেখে দুই পাশের চুলে কার্লও করতে পারেন।
আগে থেকেই নিতে হবে ত্বকের যত্ন
অপরিষ্কার ত্বকে মেকআপ ভালোভাবে বসে না। তাই আগে থেকেই ত্বককে মেকআপের উপযোগী করে তুলতে হবে। অনুষ্ঠানের আগেই পার্লারে গিয়ে ফেসিয়াল করাতে পারেন। আজকাল হারবাল, গোল্ড, টমেটো ফেসিয়ালের পাশাপাশি হাইড্রা ফেসিয়াল, বায়ো হাইড্রা ফেসিয়াল বেশ চলছে। মুখে মরা চামড়া, অপরিপক্বতা, ব্ল্যাক হেডস, হোয়াইট হেডস ইত্যাদি থাকলে হাইড্রা ফেসিয়াল কিংবা বায়ো হাইড্রা ফেসিয়াল করাতে পারেন। যদি হাতে একেবারেই সময় না থাকে, তাহলে একটি ফেসিয়াল ম্যাসাজ নিতে পারেন। এতেও ত্বকের ময়লাগুলো দূর হবে। মুখে সঠিকভাবে বসানোর জন্য মেকআপ করার আগে রূপবিশেষজ্ঞরা বরফ ঘষার কথা বলে থাকেন। তবে শীতের সময়টায় মুখে বরফ না ঘষা ভালো। এতে ঠান্ডা লেগে যাওয়ার ভয় থাকে। এর চেয়ে বরং শুরুতেই ভালো মানের স্ক্রাবার বা এক্সফোলিয়েটর দিয়ে ত্বক স্ক্রাব করে নিন।  
 

আরও পড়ুন

×