ঢাকা শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

রমজানে সুস্থ থাকুন

রমজানে সুস্থ থাকুন

ফাইল ছবি

লিনা আকতার

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০০:১৬

রমজান মাসে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা উচিত। কারণ, এ সময় আপনার শরীর দীর্ঘসময় ধরে ক্ষুধার্ত থাকে। তাই রমজান মাসে আপনি কী খেতে পারেন আর কী খেতে পারেন না– তার দিকে নজর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
আসুন জেনে নেওয়া যাক রোজায় কীভাবে সুস্থ থাকা যায়।
প্রথমত, রমজান মাসে বাংলাদেশে প্রচলিত খাবারগুলো বেশির ভাগ তেলে ভাজা ও গুরুপাক হয়। যেমন– পিঁয়াজু, বড়া, বেগুনি, ডিমের বড়া ইত্যাদি। এ ছাড়া অনেক জায়গায় ইফতারে বিরিয়ানির মতো খাবারের প্রচলন রয়েছে। এগুলো নিয়মিত অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। ফলে শরীর ডিহাইড্রেট হওয়ার পাশাপাশি মুখ শুকিয়ে যাবে, তৃষ্ণা অনুভূতি হবে এবং মাথাব্যথার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ইফতার থেকে শুরু করে সেহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি ও পানিযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে ভুলবেন না। এছাড়া ইফতারের শুরুতে সহজ ও নরম খাবার গ্রহণ করুন। এতে সারাদিন রোজা রাখার পর পরিপাকতন্ত্রে কোনো গোলযোগ সৃষ্টি করবে না।
দ্বিতীয়ত, সারাদিন রোজা রাখার পর অনেকেই খাবার পেয়ে সব খাবার একসঙ্গে খেতে শুরু করেন, যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। খুব তাড়াতাড়ি খাবার হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ধীরে ধীরে পরিমিত পরিমাণে খাবার গ্রহণ করুন।
তৃতীয়ত, রমজানে আমরা খাবার সময় পাই দিনরাতে তিনবার। অল্প সময়ে অধিক খাবার গ্রহণ করলে, খাবার হজম করতে যেমন কষ্টকর হয়, তেমনি এটি স্বাস্থ্যের ওপর বিশাল প্রভাব পড়বে। এটি হরমোনের ভারসাম্য, ওজন বৃদ্ধি ও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
চতুর্থত, অনেকেরই বিভিন্ন রোগ থাকে। রমজানে রোজা রাখার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে রোজা রাখবেন এবং খাবার নিয়ে সচেতন থাকবেন। বিশেষ করে ডায়াবেটিক রোগী, উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা, অন্তঃসত্ত্বা নারী, আর্থ্রাইটিসজনিত সমস্যা, আইবিএস ইত্যাদি। ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবেন এবং মেডিসিন এবং ইনসুলিন ডোজ ঠিক রেখে রোজা রাখবেন। 
উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগীরা অতিরিক্ত ভাজাপোড়া, লবণাক্ত খাবার, সসজাতীয় খাবার গ্রহণ করবেন না। সুষম সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ করুন। খাবারের তালিকায় মাছ, ডাল, শাকসবজি, ফল, বাদামকে গুরুত্ব দিন। এ ছাড়া খাবারের সালাদকে গুরুত্ব দিন।
অন্তঃসত্ত্বা নারী
রমজানে অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা চিকিৎসকের পরামর্শে রোজা রাখুন।
কিডনি রোগী
কিডনিতে আক্রান্ত ব্যক্তি ডাল ও ডালের তৈরি খাবারগুলো এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে রোজায় বেসন দিয়ে বড়া, হালিম, ডালের বড়া ইত্যাদি। লবণাক্ত খাবার, শাকসবজি, ফল ও পানির ব্যাপারে সতর্ক হোন। 
বয়স্ক রোগী
পরিবারে অনেক বয়স্ক ব্যক্তি আছেন। তাদের খাদ্যতালিকায় নরম, পাতলা, সহজপাচ্য খাবার যেমন স্যুপ, হালিম, দুধ দিয়ে সুজি, সেমাই খাবার দিন। ভাজাপোড়া খাবার পরিমিত খাবেন। আইবিএস ব্যক্তিরাও এ ধরনের খাবার খেতে পারেন। দুধজাতীয় খাবারে সমস্যা হলে দুধের পরিবর্তে পানি দিয়ে সুজি, সেমাই খেতে পারেন কিংবা ল্যাকটোজমুক্ত দুধ হাতের কাছে থাকলে তা দিয়ে খেতে পারেন। প্রতিদিন একটি ডিম সেদ্ধ, কলা, পাকা পেঁপে, খেজুর দিয়ে ইফতার করবেন।
সতর্কতা 
১. কৃত্রিম শরবত এড়িয়ে চলুন। কারণ এতে কৃত্রিম স্বাদ এবং প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। এর পরিবর্তে স্কিমড মিল্ক, তুলসী বা চিয়া বীজ দিয়ে একটি পানীয় তৈরি করে খান। শরবতে বিটরুট রস দিতে পারেন গোলাপি রং ধারণ করবে। এ ছাড়া চিয়া বীজ পানি ধরে রাখে; যার ফলে হাইড্রেশন উন্নত হয়। এটি হজমে সহায়তা করবে।
২. অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার গ্রহণ করবেন না।
৩. অতিরিক্ত চা বা কফি পান করবেন না। বিশেষ করে সেহরিতে। এটি প্রস্রাবের উৎপাদন বৃদ্ধি করে; যার ফলে খনিজ পদার্থের ক্ষয় হবে। 
৪. মাসজুড়ে সুষম বৈচিত্র্যময় খাবার গ্রহণ করুন। ফলমূল, শাকসবজি গ্রহণ করুন। লাল মাংস, মাছ, মুরগি, ডাল পরিমিত গ্রহণ করুন। চর্বিহীন দুধ বা টকদই গ্রহণ করুন। জটিল কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার যেমন গোটা শস্য, বাদামি স্টার্চযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন। বাদাম, কিশমিশ, খেজুরের মতো শুকনো খাবার গ্রহণ করুন পরিমাণমতো।
৫. কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমান। তারাবির পর একটু বিশ্রাম নিন। এতে শরীরের ক্লান্তি দূর হবে। 
৬. যারা নিয়মিত নামাজ, তারাবির নামাজ আদায় করেন, তাদের ব্যায়ামের প্রয়োজন নেই।  যারা তারাবির নামাজ পড়তে পারেন না কিংবা শারীরিক সমস্যা তারা ইফতার, সেহরিতে খাবারের পর একটু হাঁটুন। v
লেখক: পুষ্টিবিদ, রাইয়ান হেলথ কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, দিনাজপুর

আরও পড়ুন

×