অদ্ভুত কতগুলো পিঁপড়ে

.
ইসমত আরা প্রিয়া
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ | ১৬:৫৪ | আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ | ২২:৫৪
আমি অনেকক্ষণ চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম। মাথার মধ্যে নানান চিন্তা। একটি চিন্তারও সঠিক সমাধান নেই। কেন জানি আজকাল আমার এভাবেই চোখ বন্ধ করে থাকতে ইচ্ছে করে। কারণ, চোখ খুললেই দেখতে পাব একটি শহর পুড়ে যাচ্ছে। সেখানে মানুষগুলো পিঁপড়ার মতো এলোপাতাড়ি ছুটছে, কেউবা মরছে।
আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি পিঁপড়াগুলো বাঁচার জন্য কী অসম্ভব আকুতি জানাচ্ছে!
আমি আবার চোখ বন্ধ করতেই অর্পা আমার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল, তুমি এখনও এখানে! সেই কখন বাজারের ব্যাগ দিয়েছি। যা হোক, যাওনি যখন ভালো হয়েছে। লিস্টে আরও দুটো জিনিস যোগ করো।
আমি বাধ্যগত স্বামীর মতো শান্ত স্বরে বললাম, কী?
–আদা আর জিরাগুঁড়ো।
আমি অর্পার কথামতো তেইশ নম্বর লিস্টের সঙ্গে আদা ও জিরার গুঁড়ো যোগ করলাম। দরজার কাছে আসতেই অর্পা চেঁচিয়ে বলল,
লিস্টে বাবুর ডায়াপারটাও এনো মনে করে। ওটা বলতে ভুলে গেছি। আর যদি পারো আসার সময় দুটো পেইন কিলার এনো।
আমার মনে হয় আমি আরও কিছুক্ষণ দাঁড়ালে অর্পার লিস্টের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। তাই দ্রুতগতিতে হাঁটতে থাকলাম। যত দ্রুত বাজারের দিকে এগোতে থাকি, ততই একটা পুড়ে যাওয়া শহরের উত্তাপ আমার পিঠে এসে লাগে। আমি আলুর দিকে তাকিয়ে বলি,
আলু কত?
–কেজি পঞ্চাশ।
বেগুন?
–এই ছোটগুলান আশি, বড়টা একশ।
ছোটটা নেব, একটু কম রাখেন।
–দুই কেজি লন, পাঁচ টাকা কম দিয়েন।
না না, এত লাগবে না।
–কতটুকু নেবেন?
আধা কেজি।
–আধা কেজি নিলে পঁয়তাল্লিশ দেওয়া লাগবে।
এরপর আমি আর কিছু বলিনি। বড় একটা ব্যাগের তলায় এক কেজি আলু নিয়ে অন্য দোকানের দিকে এগোলাম।
কাঁচামরিচ কত?
–আড়াইশ গ্রাম ষাইট টাকা।
আমি নত সুরে বললাম, আমাকে ৩০ টাকার দেন।
দোকানদার বিরক্তির সুরে বলল, হয় আধা কেজি নেন, না হয় আড়াইশ গ্রাম, এর নিচে বেচি না।
আমি বাধ্যগত ক্রেতা হয়ে যেন তাই-ই করলাম। যে সবজিতে হাত দিই তাতেই আগুন! আশির নিচে এক পেঁপে ছাড়া কোনো সবজি নেই। এই উত্তাপ আমি আর নিতে পারি না। গরুর মাংস আটশ পঞ্চাশ, মুরগি তিনশ বিশ। অথচ পুরো বাজার কী সুন্দর সাজানো! যে যার যার মতো কিনছে। এখানে কারও কোনো অভিযোগ নেই। যেন এমন দাম হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। এখানে তেলের দাম রাতারাতি একশ থেকে দুইশ হওয়াতেও কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। কিংবা আদার দাম কেজি পাঁচশ হওয়াটা খুব স্বাভাবিক।
আমি ভাবি, আর মনে মনে গুনি। তারপর আবার ভাবি, বাচ্চার ডায়াপারের কত টাকা বাঁচলে একপাতা পেইন কিলার হয়! এরপর বাজারের লিস্টের দিকে তাকাতেই আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। মনে হয় এই শহরে আগুন জ্বলছে। মানুষগুলো অদ্ভুত। পিঁপড়ার মতো। কেউ ছুটছে কেউ পুড়ছে, তবুও যেন দেখার কেউ নেই।
সুহৃদ ঢাকা